Logo

স্বজনহারা পরিবারগুলোর অবসানহীন অপেক্ষা

profile picture
নিজস্ব প্রতিবেদক
১ নভেম্বর, ২০২৫, ১৪:০৭
8Shares
স্বজনহারা পরিবারগুলোর অবসানহীন অপেক্ষা
ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে এখনো তিন শতাধিক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। সরকারি পরিসংখ্যান কিংবা কোনো সংস্থার কাছেই নেই তাদের জীবিত বা মৃত অবস্থার কোনো নিশ্চিত তথ্য। ফলে দীর্ঘ প্রতীক্ষা, অজানা ভয় আর অসীম কষ্ট নিয়ে স্বজনের ফেরার আশায় আজও দিন গুনছেন শত শত পরিবার।

বিজ্ঞাপন

গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ আমলে গুমের শিকার হন মোট ৭০৫ জন। গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর কিছু মানুষ আয়নাঘর থেকে মুক্তি পেলেও, প্রায় সাড়ে ৩শ জন এখনো ফেরেননি। নিখোঁজদের অধিকাংশই ছাত্রদল, যুবদল ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মী।

১১ বছর বয়সী আরাফ হোসেন তাদেরই একজন পারভেজ হোসেনের সন্তান, যাকে ২০১৩ সালে শাহবাগ থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল। আজ আরাফ চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র, কিন্তু বাবার মুখ দেখার সুযোগ হয়নি কখনো। ছোট্ট কণ্ঠে সে বলে, আমি কখনো বাবাকে দেখিনি, শুধু ছবিতে দেখি। আমি শুধু বাবাকে ফিরে পেতে চাই।

বিজ্ঞাপন

পারভেজের স্ত্রী ফারজানা আক্তার বলেন, ৫ আগস্টের পর ভেবেছিলাম স্বামী ফিরে আসবে, কিন্তু সেই আশাও আজ ক্ষীণ হয়ে গেছে। সন্তানদের নিয়ে এখন মানবেতর জীবন কাটছে। ছেলে আরাফ জন্ম থেকেই হৃদরোগী, চিকিৎসার খরচ চালানোই কষ্টকর।

একইভাবে মিরপুরের ব্যবসায়ী কুদ্দুসুর রহমান চৌধুরী ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা তুলে নেওয়ার পর থেকে নিখোঁজ। তার পরিবার এখন নিঃস্ব। মেয়ে ফারজানা টুম্পা বলেন, কমিশন, ট্রাইব্যুনাল সব জায়গায় গিয়েছি। কিন্তু বাবার কোনো খোঁজ পাইনি।

সূত্রাপুর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি খালেদ হাসান সোহেল গুমের ১২ বছর পেরিয়েছে। একমাত্র সন্তান সাদমান শিহাব বাবার অপেক্ষায় এখনো প্রতিদিন জানালা পানে চেয়ে থাকে। সোহেলের স্ত্রী সৈয়দা শাম্মি বলেন, আমাদের মতো আরও শত শত পরিবার আজও অন্ধকারে। কেউ জানে না, তারা কোথায়।

বিজ্ঞাপন

গুমের শিকার পরিবারগুলোর অভিযোগ, সরকার গঠিত গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি এখনো কোনো নিখোঁজ ব্যক্তির নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেনি।

কমিশনের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যারা অভিযোগ দিয়েছেন, সেগুলোর তদন্ত চলছে। যারা এখনো ফিরে আসেননি, তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত ওই কমিশনে এখন পর্যন্ত প্রায় ১,৯০০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২০০ জন এখনো নিখোঁজ বলে প্রমাণ মিলেছে।

বিজ্ঞাপন

কমিশনের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গুমের ঘটনায় র‌্যাব, ডিবি, পুলিশ, সিটিটিসি, ডিজিএফআই ও এনএসআইসহ ছয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল।

ফ্যাসিস্ট আমলে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার কারণে এসব বাহিনীর ৪২ কর্মকর্তার পাসপোর্ট বাতিল এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২৫ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৫ জন বর্তমানে চাকরিতে আছেন, যারা ইতোমধ্যে আত্মসমর্পণ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

কমিশনের তথ্যমতে, গুমের শিকার অনেককে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে হস্তান্তর করা হয়েছিল। কমিশন ভারতের কাছে বাংলাদেশি বন্দিদের তালিকা চাইলেও, প্রাপ্ত তালিকা অসম্পূর্ণ। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের পুরো তথ্য ভারত দেয়নি।

এদিকে, মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই ৩৫০ নিখোঁজ মানুষের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানা না যাওয়ায় বাংলাদেশে মানবাধিকারের চরম সংকট রয়ে গেছে। নিখোঁজ পরিবারগুলোর ভাষায়, তাদের জীবন এখন “অপেক্ষা, অন্ধকার আর প্রশ্নবোধকের” আরেক নাম।

জেবি/এএস
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD