Logo

বগুড়া শহরে যত্রতত্র ময়লার স্তূপে জনজীবন অতিষ্ঠ

profile picture
জেলা প্রতিনিধি
বগুড়া
৮ অক্টোবর, ২০২৫, ২৪:৩১
26Shares
বগুড়া শহরে যত্রতত্র ময়লার স্তূপে জনজীবন অতিষ্ঠ
ছবি: সংগৃহীত

অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু / চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ-উজ্জ্বল পরমায়ু কবির এই সুরে প্রকাশ পেয়েছে প্রতিটি মানুষের চিরন্তন আকুতি; দূষণমুক্ত বাতাস, নির্মল পরিবেশ ও কলুষমুক্ত পৃথিবীর প্রত্যাশা। কিন্তু বগুড়া শহরের বর্তমান চিত্র যেন তার সম্পূর্ণ বিপরীত। শহরের পাড়া-মহল্লায় যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ তৈরি হয়েছে। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এসব স্তূপ থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ফলে শহরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে।

বিজ্ঞাপন

২১টি ওয়ার্ডে বিভক্ত ৬৯ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বগুড়া পৌরসভায় এখনও নির্দিষ্ট স্থানে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন ও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ডাম্পিং) কেন্দ্র স্থাপন হয়নি। ফলে পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র জমে থাকছে আবর্জনার স্তূপ। প্রতিদিন পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বাসা-বাড়ি, হাসপাতাল ও বাজারের ময়লা ভ্যানে ভরে সড়কের পাশে ফেলে রাখছেন। বিপজ্জনক এই সনাতন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে বগুড়ার অধিকাংশ স্থানের অবস্থাই এমন বেগতিক।

দেশের অন্যতম বৃহত্তম এই পৌরসভায় প্রায় ১০ লাখ মানুষের বসতি। প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩০০ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়, কিন্তু যথাযথ নিষ্পত্তির অভাবে এর বড় অংশই পড়ে থাকে লোকালয়ের আশপাশে। সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের একাধিক ট্রান্সফার স্টেশন রয়েছে— বনানী রেশম উন্নয়ন বোর্ড, ঠনঠনিয়া, সেউজগাড়ী কৃষি অফিস, রেলস্টেশন ও ফুলবাড়ী শিল্পকলা একাডেমির সামনে। এছাড়াও ফতেহ আলী বাজারের সামনেও প্রতিদিন জমছে ময়লার স্তুপ। এর মধ্যে কিছু বর্জ্য সরাসরি শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীতে গিয়ে পড়ছে। অনেক ট্রান্সফার স্টেশনে শেড থাকলেও সেগুলো উন্মুক্ত; মোবাইল ডাস্টবিনে করে সিবিও শ্রমিকরা আবর্জনা এনে রাস্তার ধারে ফেলে রাখছেন। এরপর কাক, কুকুর ও ছিন্নমূল মানুষ সেগুলো ঘাটাঘাটি করে চারদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। পুরো এলাকায় তখন ছড়ায় দুর্গন্ধ, যা আশেপাশের বাসিন্দা ও পথচারীদের জন্য হয়ে উঠেছে ভোগান্তির কারণ। বর্তমানে বগুড়া পৌরসভায় প্রায় ১৫২টি সিবিও রয়েছে এবং ২০টি গার্বেজ ট্রাকের মাধ্যমে ময়লা অপসারণ করা হয়। এর মধ্যে তিনটি ট্রাক পৌরসভার নিজস্ব, বাকি ১৭টি ভাড়া নেওয়া।

বিজ্ঞাপন

শহরে বর্তমানে ৯টি স্থায়ী ও ৭টি অস্থায়ী ট্রান্সফার স্টেশন রয়েছে। ভাগাড় বা ডাম্পিং স্টেশন রয়েছে দুটি— একটি জয়পুর পাড়া এলাকায়, অপরটি শহরের বাইরে এরুলিয়াতে। তবে দুটি স্টেশনই এখন বন্ধ। ফলে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টন আবর্জনা অপসারণ করেও পৌরসভা বর্জ্য নিষ্কাশনে টেকসই সমাধান পাচ্ছে না। দুর্গন্ধে এসব ভাগাড়ের পাশে চলাচল করা দুঃসহ হয়ে পড়েছে।

বনানী এলাকার বাসিন্দা মিরাজুল ইসলাম বলেন, রেশম উন্নয়ন বোর্ডের ময়লার স্টেশনের সামনে দিয়ে নাক চেপে যেতেও কষ্ট হয়। দুর্গন্ধে বমি চলে আসে। এই স্থান থেকে ময়লার স্তূপ সরিয়ে নিতে বহুবার অভিযোগ জানালেও কোনো ফল হয়নি।

বিজ্ঞাপন

বগুড়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে ‘বগুড়া শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’ ও ‘মিউনিসিপ্যাল সাপোর্ট ইউনিট’ এর আওতায় আধুনিক বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে লোকবল ঘাটতি ও পর্যাপ্ত জমির অভাবে তা বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। তবুও প্রতিদিন বর্জ্য অপসারণের কাজ অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ফেলার কারণে ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও শ্বাসযন্ত্রের নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়াও বর্জ্য থেকে কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড সহ বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন হয় যা মানবদেহের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করে। এই গ্যাসগুলো শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে হাঁপানি, ক্যান্সার, চর্মরোগ, চোখ ও গলা জ্বালাপোড়াসহ নানা রোগ সৃষ্টি হয়। শিশু ও বৃদ্ধরা এসব দূষণে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

বগুড়া শহরের বর্তমান চিত্র নাগরিক জীবন ও পরিবেশের জন্য এক বড় হুমকি। যত্রতত্র ময়লার স্তূপ, অপর্যাপ্ত ডাস্টবিন ও অকার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শহরটিকে ক্রমেই দূষিত করছে। এখনই যদি টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তবে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বগুড়া শহর অচিরেই স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের নগরীতে পরিণত হবে। তাই দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

জেবি/এমএল
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD