চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের অশেষ ভোগান্তি
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিক আইডির ফরম পূরণ ও ডাটা এন্ট্রির জন্য নতুন করে সময় ঠিক করা হয়েছে। নতুন সময়সীমা অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষার্থীদের তথ্য পাঠাতে হবে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। তবে শুরু থেকেই চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি ফরম পূরণের প্রক্রিয়ায় নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতার নামের ভুল থাকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকার ফলে অনেক শিক্ষার্থীই ইউনিক আইডি করতে পারছেন না। এ নিয়ে শিক্ষাবোর্ডের দায়িত্বশীলদেরও পড়তে হচ্ছে নানা জটিলতায়। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর জন্য ‘ইউনিক আইডি’ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই ‘ইউনিক আইডি’তে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মৌলিক ও শিক্ষা-সংক্রান্ত সব তথ্য থাকবে। প্রোফাইলের তথ্য থেকে তৈরি করা হবে ইউনিক আইডি। এই আইডি থেকেই পরে জাতীয় পরিচয়পত্র পাবে শিক্ষার্থীরা। দেশের তিন কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীর জন্য ইউনিক আইডি (একক পরিচয়পত্র) করছে সরকার।
পাঁচ বছর বয়সী প্রাক-প্রাথমিক থেকে ১৭ বছর বয়সের দ্বাদশ শ্রেণির সব ছাত্র-ছাত্রী পাবে এই ইউনিক আইডি। এই আইডিতে ১০ বা ১৬ ডিজিটের শিক্ষার্থী শনাক্ত নম্বর থাকবে, যা পরবর্তীতে হবে ওই শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে আলাদা করে তথ্য সংগ্রহ করার প্রয়োজন হবে না। ২০২০ সালেই শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকা এবং কিছু আইনি জটিলতায় এ কার্যক্রম গতি হারায়।
এর আগে শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি প্রদান সংক্রান্ত বিষয়ে ডাটা এন্ট্রির জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হলেও কারিগরি ক্রটি ও মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন সমস্যার কারণে ডাটা এন্ট্রি কার্যক্রমে ধীরগতি তৈরি হওয়ায় বিভাগভিত্তিক ডাটা এন্ট্রির সময়সীমা নির্ধারণ করা হল নতুন করে। ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এক নির্দেশনায় বিভাগভিত্তিক এই তথ্য পাঠাতে বলেছে। নতুন সময়সীমা অনুসারে, শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে, ঢাকা বিভাগে ১ মার্চ থেকে ১৬ মার্চের মধ্যে, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগে ১৭ থেকে ৩১ মার্চের মধ্যে, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে ১ এপ্রিল থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত এবং রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের শিক্ষার্থীদের তথ্য ১৩ থেকে ২৭ এপ্রিলের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে। এক বিভাগের প্রতিষ্ঠান অন্য বিভাগের জন্য নির্ধারিত সময়ে দেওয়া যাবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে সেই নির্দেশনায়।
এদিকে চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি ফরম পূরণের প্রক্রিয়ায় নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতার নামের ভুল থাকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকার ফলে অনেক শিক্ষার্থীই ইউনিক আইডি করতে পারছেন না। এ নিয়ে শিক্ষাবোর্ডের দায়িত্বশীলদেরও নানা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) চট্টগ্রামের প্রোগ্রামার তাপস কুমার সাহা বলেন, শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি করার ক্ষেত্রে নানা জটিলতার কথা আমরাও শুনেছি। তবে এখানে আমাদের করার কিছুই নেই। কারণ এ আইডি তৈরি করছে বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)। তারা সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মাধ্যমিক স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক জানান, পিতামাতার জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকায় এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা ভুল তথ্য দিয়েই ইউনিক আইডি করে নিচ্ছে। যা পরবর্তীতে আরও বেশি ভোগান্তির কারণ হবে। আবার মা-বাবার ভুল তথ্যগুলো ঠিক করতে দৌড়ঝাপ করতে হচ্ছে নির্বাচন কার্যালয়ে ও শিক্ষাবোর্ডে।
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) চিফ পরিসংখ্যানবিদ শেখ মোহাম্মদ আলমগীর জনবাণীকে বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়েছি নিজ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করা জন্য। এজন্য ওই শিক্ষককে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি করে ফরম দেওয়া হয়েছে। উক্ত ফরম পূরণ করে অনলাইনে পোস্টিং দিবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই শিক্ষক।’
তথ্য ভুল থাকার বিষয়ে শেখ মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মা-বাবার এনআইডির নাম অনুসারেই সব তথ্য লিখতে হবে। ভুল থাকলে এনআইডি সংশোধন করতে হবে। অন্যথায় এখন ইউনিক আইডি করে ফেললেও পরবর্তীতে সব তথ্য সংশোধন করে নিতে হবে।’
এসএ/