শিক্ষাক্যাডারে ঢাকা কলেজের আরিফ ইউসুফ, শোনালেন সাফল্যের গল্প


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:০৭ অপরাহ্ন, ৮ই আগস্ট ২০২৩


শিক্ষাক্যাডারে ঢাকা কলেজের আরিফ ইউসুফ, শোনালেন সাফল্যের গল্প
আরিফ ইউসুফ

আরিফ ইউসুফ। জন্ম লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে। শৈশব বেড়ে ওঠা কালিকাপুরেই। স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার তা আর হয়ে ওঠে নি। পরবর্তীতে ভর্তি হন ঢাকা কলেজ হিসাববিজ্ঞান বিভাগে। 


সম্প্রতি ৪১ তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে ৩৩ তম হয়েছেন। এর আগেও তিনি নন-ক্যাডারে বিভিন্ন ব্যাংকে (বাংলাদেশ ব্যাংক,সোনালী,অগ্রণী, রূপালি) ভাইবায় অংশগ্রহণ, তার প্রথম যোগদান হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। বর্তমানে তিনি বিটিসিএলে কর্মরত আছেন। শত বাধা পেরিয়ে বিসিএস জয়, নতুনদের জন্য পরামর্শ ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন দৈনিক জনবাণীকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি আল জুবায়ের।


জনবাণী: প্রথমে আপনাকে অভিনন্দন। ৪১ তম বিসিএস শিক্ষাক্যাডারে আপনি ৩৩ তম হয়েছেন। এখন আপনার অনুভূতি কেমন?

আরিফ ইউসুফ: জ্বি আপনাকে ধন্যবাদ, আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভাল লাগছে, আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে, আমার

পরিবার ও আমার শ্রদ্ধেয় সকল  শিক্ষক এবং শুভাঙ্খক্ষীদের দোয়ায় আমি ৪১ তম বিসিএস পরীক্ষায় সাধারণ শিক্ষা (হিসাববিজ্ঞান) ক্যাডার সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছি,আর প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্ত হলে অবশ্যই ভাল লাগে, সব মিলিয়ে ভাল অনুভব করছি।


জনবাণী: আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই? পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি না?

আরিফ ইউসুফ: আমার স্কুল জীবন শুরু হয় কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অধ্যায়নের মাধ্যমে পরবর্তীতে আমি ২০০৫ সালে শ্যামগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ব্যবসা শিক্ষা শাখা হতে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি এবং জিপিএ ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হই, এরপর আমি ২০০৭ সালে রামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৪.৪০ পেয়ে উত্তীর্ণ হই, ২০০৭ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকায় আসি, স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হব, ভর্তি পরীক্ষায় গ ইউনিটে অপেক্ষমান তালিকায় ছিলাম কিন্তু আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাইনি। পরিবারের অমতের কারণে ঢাকার বাইরের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। অবশেষে ২০০৭-০৮ সেশনে ঢাকা কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। ঢাকা কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগ হতে বিবিএস (অনার্স) এবং এমবিএস পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী লাভ করি। তবে এই জার্নিতেও আমাকে নানা চড়াই উতরাই পেরোতে হয়েছে কারণ আর্থিক সংকটের কারণে আমাকে টিউশন করতে হয়েছিল। পরিবার পুরোপুরি সাপোর্ট দিতে পারতো না বলে টিউশন করে নিজের খরচ চালাতে হয়েছিল।


জনবাণী: জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। ঢাকা কলেজ সম্পর্কে কিছু স্মৃতি যদি বলতেন ?

আরিফ ইউসুফ: বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন শুরু হয় ঢাকা কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের নবীনবরণের মাধ্যমে চেষ্টা করেছিলাম নিয়মিত ক্লাস করার এবং আমাদের সম্মানিত শিক্ষক মন্ডলী পাঠদানে সর্বদাই আন্তরিক ছিলেন। ঢাকা কলেজের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ আমাকে সবসময় মুগ্ধ করত, বন্ধুদের সাথে ঢাকা কলেজ মাঠে এবং পুকুরপাড়ে আড্ডাবাজি, আশেপাশে বিভিন্ন জায়গা ঘোরাঘুরি এভাবে সময় কাটতো ঢাকা কলেজের লাইব্রেরীতে নিয়মিত পড়াশোনা করার চেষ্টা করতাম, সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবন ভালই কেটেছে তবে সেশন জোটের কারণে চার বছরের কোর্স ছয় বছরের শেষ করতে হয়েছিল বলে চাকুরীর বাজারে কিছুটা পিছিয়ে পড়ি।


জনবাণী: এত চাকরি থাকতে বিসিএস দিবেন, এমন সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?

আরিফ ইউসুফ: উচ্চ মাধ্যমিককে পড়াকালীন সময়ে আমাদের রামগঞ্জ সরকারি কলেজের ইংরেজি বিষয়ের লেকচারার মোঃ শাহাদাত হোসাইন স্যারকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম, তখন মনে হতো পড়াশোনা শেষে স্যারের মতো হব, কারণ স্যারের প্রশংসা শুনতাম আমাদের গ্রামের সকলের মুখে মুখে। পরবর্তীতে ঢাকা কলেজে ভর্তি হওয়ার পর ইচ্ছাটা আরো তীব্র হলো, ঢাকা কলেজের বিশেষ করে দুইজন শিক্ষক শারমিন নাহার খান স্যার এবং শংকর স্যার পাঠদানের মাঝে বিসিএস পরীক্ষা অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রেরণা দিতেন, অনার্স পরীক্ষা সম্পন্ন করার পর দেখলাম চাকরির বাজারে বিসিএস সবচেয়ে সম্মানের এবং এর সামাজিক ভ্যালু প্রমোশন ব্যবস্থা এবং চাকুরীর নিরাপত্তা সব কিছুই অন্য জব থেকে ভালো। সব মিলিয়ে বিসিএস এর প্রতি একটা ফ্যাসিনেশন কাজ করতো।


জনবাণী: কোন বর্ষ থেকে বিসিএস প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?

আরিফ ইউসুফ: প্রস্তুতি শুরু করি অনার্স পরীক্ষার শেষ হওয়ার পর, তবে আমি প্রথম বর্ষ থেকে একাডেমিক পড়ার পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষার সময় যেই সকল নোটগুলো করেছিলাম সেগুলো দিনে বা রাতে যখন অবসর সময় পেতাম একটু করে চোখ বুলাতাম কিন্তু ফাইনালি প্রিপারেশন শুরু করি অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হবার পর। আমি প্রথম বিসিএস দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম ৩৫ তম বিসিএস-এ। ৩৫ তম বিসিএস এর নতুন সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছিল। যদিও আমি প্রস্তুতির জন্য কম সময় পেয়েছিলাম তারপরও চেষ্টা করেছিলাম সিলেবাস ধরে গুছিয়ে পড়ার জন্য ফলাফলস্বরূপ ৩৫ তম বিসিএস এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম।


তবে ৪১ তম বিসিএস পরীক্ষা  আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। উল্লেখ্য যে আমি এবং আমার স্ত্রী একসাথে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতাম, আমার স্ত্রী বর্তমানে ৩৭ তম বিসিএস নন ক্যাডার থেকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে সহকারী প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছে


জনবাণী: প্রিলি, রিটেন ও ভাইবার জন্য নিজেকে কিভাবে সাজিয়েছিলেন?

আরিফ ইউসুফ: আমি যখন প্রিলিমিনারির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম তখন চেষ্টা করেছিলাম, যে কোন টপিক্স ডিটেলস আকারে পড়ার জন্য। প্রিলিমিনারিতে ডিটেলস আকারে পড়ার কারণে রিটেনের চাপ কম অনুভূত হয়েছিল। প্রিলিমিনারি কেবল একটি বাছাই পরীক্ষা, রিটেনে ভালো না করলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব হয় না। আর আমার ব্যক্তিগতভাবে ডিটেলস না জানলে পড়া মনে থাকে না। তবে যা পড়েছি চেষ্টা করেছি গুছিয়ে পড়ার। সিলেবাস ধরে প্রতিটি টপিকস ই পড়ার চেষ্টা করতাম। নিয়মিত বাংলা এবং ইংরেজি দুটি পত্রিকা রাখতাম ও পত্রিকা থেকে আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশ বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ টপিক্স গুলো নোট করতাম ফলে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের প্রস্তুতি অনেক আগেই অনেকাংশে সম্পূর্ণ হয়েছিল। আর টিউশন করানোর কারণে গণিত এবং ইংরেজিতে সাপোর্ট পেয়েছিলাম। বেসিক বইগুলোর পাশাপাশি একসেট গাইড বই রেখেছিলাম,এতে করে প্রশ্নের ধরন  ধরতে সহজ হয়েছিল। তবে প্রিলিমিনারির সময় গুছিয়ে প্রিপারেশন নেওয়ার কারণে লিখিত এবং ভাইভা পরীক্ষা আমার জন্য সহায়ক হয়েছিল।


জনবাণী: জুনিয়রদের উদ্দ্যেশে বিসিএস প্রস্তুতি সম্পর্কে যদি কিছু পরামর্শ দিতেন?

আরিফ ইউসুফ: অনুজদের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে জীবন কখনো সরল রেখায় অতিবাহিত হয় না লাইফে আল এন্ড ডাউন থাকবে, তোমাদেরকে ধৈর্য সহকারে সেই সকল আপস এন্ড ডাউন কে অতিক্রম করতে হবে, ধৈর্য প্রবল ইচ্ছা শক্তি এবং ডেডিকেশন থাকতে হবে, মনে রাখতে হবে যে সাফল্যের কোন শটকাট ওয়ে নাই, একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিদিন অল্প করে হলেও চাকরি রিলেটেড পড়াশোনা করতে হবে তবে অবশ্যই সেটা যেন একাডেমিক পড়াশোনা কে বাধাগ্রস্ত না করে করা হয়, বিসিএস এর প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে অনেকেই যেই ভুলটি করে থাকে সেটি হল তারা একমাত্র বি সি এস কে টার্গেট করেই পড়াশোনা করে অন্য কোথাও পরীক্ষা দেয় না এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, যত বেশি পরীক্ষা দিবে যত বেশি পরীক্ষার হলের টাইম ম্যানেজমেন্ট এবং মানসিক চাপ মোকাবেলা সহজ হবে সর্বোপরি ধৈর্য হারা হওয়া যাবে না, মনে রাখতে হবে ধৈর্য ও পরিশ্রম হচ্ছে সফলতার মূল। বিসিএস যেহেতু একটি লম্বা জার্নি সেহেতু শুরু থেকেই ভালো করে গুছিয়ে প্রিপারেশন নিতে হবে, কাউকে ফলো করে নয় নিজের পড়ার প্ল্যান নিজেকেই তৈরি করতে হবে, ইংরেজি গণিত এবং বিজ্ঞান এই তিনটি বিষয়ের উপর বেশি করে নজর দিতে হবে, তাই বলে বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়বলি কে অবহেলা করা যাবে না।


জনবাণী: ধন্যবাদ আপনাকে,আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য।

আরিফ ইউসুফ: আপনাকেও ধন্যবাদ।ধন্যবাদ দৈনিক জনবাণীকে।


জেবি/এসবি