বিসিএস জয়ের গল্প শোনালেন আজাদ
মো. রুবেল হোসেন
প্রকাশ: ০৬:২৯ অপরাহ্ন, ১৭ই আগস্ট ২০২৩
আবুল কালাম আজাদ। জন্ম কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার উদয় নাতুড়িয়া গ্রামে। শৈশব বেড়ে ওঠা উদয় নাতুড়িয়া গ্রামেই। স্বপ্ন পুরণে পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে।
সম্প্রতি ৪১ তম বিসিএসে ট্যাক্স ক্যাডারে ২২ তম সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এর আগেও তিনি নন-ক্যাডারে বিভিন্ন ব্যাংকে (বাংলাদেশ ব্যাংক,সোনালী,অগ্রণী, রূপালি) ভাইবায় অংশগ্রহণ করেন। প্রথম যোগদান হিসাবে তিনি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এ কর্মরত আছেন। শত বাধা পেরিয়ে বিসিএস জয়, নতুনদের জন্য পরামর্শ ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন দৈনিক জনবাণীকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রুবেল হোসেন।
দৈনিক জনবাণী: প্রথমে আপনাকে অভিনন্দন। ৪১ তম বিসিএস ট্যাক্স ক্যাডারে প্রথম বারে আপনি সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এখন আপনার অনুভূতি কেমন?
আবুল কালাম আজাদ: আলহামদুলিল্লাহ, বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন কর্তৃক সর্বশেষ প্রকাশিত বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে কর ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। নিজেকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আবিষ্কার করতে পারা সবসময় আনন্দের। তেমনই অনুভূতি কাজ করছে। এটা আমার প্রথম বিসিএসে অংশগ্রহণ ছিল। সন্ধ্যায় যখন ফলাফল প্রকাশিত হয় সে সময় আমার বর্তমান চাকুরিতে (তিতাস গ্যাস) ট্রেনিং-এ অবস্থান শেষে সদ্য বাসায় ফিরেছি। ফলাফল শীটে নিজের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দেখতে পেয়ে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি। কয়েক মুহূর্ত ঝিম মেরে বসে থেকে এক বড় ভাইকে কল দিয়ে ফলাফল দেখতে বলি। সেদিন রাত থেকে পরদিন পুরোপুরি নির্ঘুম, যেনো সৃজনকর্তা আমাকে কি দিলেন এটা ভেবে ভেবেই।
দৈনিক জনবাণী: কেমন কেটেছে শৈশব ও কৈশোর?
আবুল কালাম আজাদ: আমার বেড়ে ওঠা কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রাম উদয় নাতুড়িয়া। সেখানেই কৃষক বাবার আর সব সন্তানের মতোই মাঠে-ময়দানে চড়ে শৈশব কেটেছে। পরিবাবে একমাত্র ছেলে হওয়ায় বাবার কাজে সাহায্য করার পাশাপাশি নিজেকে বাস্তব জীবনের মুখোমুখিও হতে হয়েছে।
দৈনিক জনবাণী: আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই?
আবুল কালাম আজাদ: প্রথমে লেখা পড়ার হাতেখড়ি মধুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এরপর প্রত্যন্ত গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মধুপুর কলেজিয়েট স্কুল থেকে ২০১৩ সালে আমার স্কুল জীবন শেষ হয়। এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করে বেরিয়ে পরি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। শুরুতে পড়াশোনায় এতোটা ভালো না হলেও পরিশ্রম দিয়ে স্কুল-কলেজ থেকেই ভালো ফলাফল করতে থাকি। পরববর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাতে ঢাবি, জবি, জাবি তিনটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুয়োগ হয়। ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগ থেকে বিএসএস,এমএসএস শেষ করি।
দৈনিক জনবাণী: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি না?
আবুল কালাম আজাদ: স্কুল জীবন থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশন করেছি। তার ধারাবাহিকতা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও অব্যাহত ছিল। ভালো ফলাফল থাকায় স্কলারশীপ পেতেও সমস্যা হয়নি। যার কারণে আমাকে কখনো বেগ পেতে হয়নি।
দৈনিক জনবাণী: জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় কাটিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই গল্প শুনতে চাই?
আবুল কালাম আজাদ: বিশ্ববিদ্যালয় থাকাকালীন জীবনের সুন্দর সময়গুলো কাটিয়েছি । একাডেমিক চাপ থাকায় পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশন বন্ধুবান্ধব সবার সাথে আড্ডা এভাবেই গিয়েছে। জীবন সম্পর্কে বাস্তব ধারণা, হঠাৎ এসে বসা ঢাকার অনেক বাস্তব অবস্থার সাথে মানিয়ে চলার সংগ্রাম ছিল এই সময়ে।
দৈনিক জনবাণী: এত চাকরি থাকতে বিসিএস দিবেন, এমন সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?
আবুল কালাম আজাদ: গন্তব্য হিসেবে বিসিএস এককভাবে চিন্তায় আসেনি। একসময় ভেবেছি একটা ব্যাংকে চাকুরি করতে পারলেই হবে। তবে কোনো পরীক্ষা দিতে থেমে যায়নি। বলতে গেলে আল্লাহ চেয়েছেন তাই পেয়ে গেছি, নিজেকে নিয়ে কখনোই ভাবিনি আমাকে এটা হতেই হবে, ক্যাডার হতে হবে।
দৈনিক জনবাণী: কখন থেকে বিসিএস প্রস্তুতি নিয়েছেন?
আবুল কালাম আজাদ: অনার্স ৪র্থ বর্ষ থেকেই অল্প অল্প শুরু করি। পরবর্তীতে অনার্স শেষ করে পুরোদমে শুরু করা। ধীরে ধীরে ব্যাংক বিসিএস সহ সব পরীক্ষা গুলোতে পাস করতে থাকি।
দৈনিক জনবাণী: প্রিলি, রিটেন ও ভাইবার জন্য নিজেকে কিভাবে সাজিয়েছিলেন?
আবুল কালাম আজাদ: শুরুতে বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে ধারণা নেয় কি ধরণের প্রশ্ন হয়ে থাকে। তার ভিত্তিতে ম্যাথ ও বিজ্ঞানে বেশি সময় বরাদ্দ রেখে বাকি গুলোতে নজর দিতে থাকি। ভাইভা প্রস্তুতিতে গ্রুপ করে নিজেদের মধ্যে অসংখ্য মক ভাইভা দিয়েছি। যা আমাকে জানাশোনার পাশাপাশি উপস্থাপনাশৈলীতে চমৎকারত্ব তৈরি করে।
দৈনিক জনবাণী: নতুনরা বিসিএস প্রিলির জন্য কীভাবে প্রস্তুতি শুরু করবে?
আবুল কালাম আজাদ: নবীনদের জন্য পরামর্শ থাকবে পড়াশোনার বিকল্প নেই। পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে কৌশলী করে গড়ে তুলতে হবে। দূর্বল জায়গা গুলো বের করে সেগুলো নিয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সর্বপরি সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাসী হতে হবে।
দৈনিক জনবাণী: ধন্যবাদ আপনাকে,আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য।
আবুল কালাম আজাদ: আপনাকেও ধন্যবাদ। ধন্যবাদ দৈনিক জনবাণীকে।
জেবি/এসবি