ভিকারুননিসায় আরও ৩৬ ছাত্রীর ভর্তির তথ্য ফাঁস


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২:১০ অপরাহ্ন, ২৯শে মার্চ ২০২৪


ভিকারুননিসায় আরও ৩৬ ছাত্রীর ভর্তির তথ্য ফাঁস
ফাইল ছবি

রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ সম্প্রতি অবৈধভাবে ১৬৯ জন ছাত্রীর ভর্তির ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। বিষয়টি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় এখনও পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ঝুলে আছে। ইতোমধ্যেই আবারও ফাঁস হয়েছে আরও ৩৬ জন ছাত্রীর ভর্তি সংক্রান্ত জালিয়াতির তথ্য। ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে।


ইতোমধ্যে তদন্তের মাধ্যমে ভর্তি জালিয়াতির প্রাথমিক সত্যতাও পেয়েছে কমিটি। এর প্রেক্ষিতে ভর্তি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সোমবার (২৫ মার্চ) একটি চিঠি পাঠিয়েছেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।


জানা গেছে, ছয় সদস্যের ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক হলেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায়। এই ভর্তি কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, প্রতিষ্ঠানটির ধানমন্ডি মূল দিবা শাখার প্রধান শাহ আলম, প্রভাতি শাখার প্রধান মাহমুদ আহমদ, মূল দিবা শাখার সিনিয়র শিক্ষক চাঁদ সুলতানা, বসুন্ধরা দিবা শাখার প্রধান জগদীষ চন্দ্র পাল ও আজিমপুর প্রভাতি শাখার সিনিয়র শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক আকন্দ।


আরও পড়ুন: এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নাম


জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৬ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক কেকা রায় চৌধুরী বলেন, ‘এটি নিয়ে তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষ হোক, তখন সব জানা যাবে।’


এদিকে এই ঘটনা ফাঁস হওয়ার পরই বরখাস্ত করা হয় মূল ক্যাম্পাসের বাংলা ভার্সনের দিবা শাখার প্রধান মো. শাহ আলম খানকে। ছাত্রী ভর্তিতে তাকে দায়ী করা হলে ভর্তি কমিটির অনিয়মের বিষয়টি গভর্নিং বডির সভাপতি ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিতভাবে তুলে ধরেন এই শিক্ষক।


গত ১৮ ফেব্রুয়ারির লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, মূল প্রভাতি বাংলা ভার্সনে ৯ জন, মূল দিবা বাংলা ভার্সনে ২ জন, মূল দিবা ইংরেজি ভার্সনে ৪ জন, মূল প্রভাতি ইংরেজি ভার্সনে ২ জন, বসুন্ধরা প্রভাতি শাখায় ২ জন, ধানমন্ডি দিবা শাখায় ৩ জন, বসুন্ধরা দিবা শাখায় ৩ জনসহ মোট ৩৬ জন ছাত্রীকে ভর্তি করা হয়। এসব শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে জাল সনদ ব্যবহার করা হয়। ভর্তির ফরম বাছাইয়ে নীতিমালার ৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাদের ভর্তি বাতিলযোগ্য।


আরও পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৬ দিনের ছুটি শুরু


লিখিত এই অভিযোগে অনিয়মের বিরুদ্ধে সুষ্ঠ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধও জানান শাহ আলম।


এরপরই ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় তদন্ত শুরু করে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান প্রথম শ্রেণিতে ৩৬ জন ছাত্রী ভর্তির বিষয়ে পরবর্তী চার কর্মদিবসের মধ্যে চিঠির মাধ্যমে জবাব দাখিলের নির্দেশ দেন ভর্তি কমিটির সংশ্লিষ্টদের। কোনো ধরনের জবাব পাওয়া না গেলে ‘এ বিষয়ে কোনও বক্তব্য নেই বলে’ এই মর্মে গণ্য হবে বলে জানানো হয় ওই চিঠিতে।


এর আগে একই প্রতিষ্ঠানে প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে ১৬৯ জন ছাত্রীকে অবৈধভাবে ভর্তি করানোর ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। এই ঘটনায় ভর্তি বঞ্চিত অভিভাবকদের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট দাখিল করা হয়। রিটের রায়ে ভর্তির বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন আদালত কর্তৃপক্ষ।


হাইকোর্টের রায়ের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষকে ওই ১৬৯ জন ছাত্রীর ভর্তি বাতিল করতে নির্দেশ প্রদান করে। পরে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে অভিভাবকরা আপিল করলে হাইকোর্টের রায়ের স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ।


এমএল/