ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগরে ১টি সরাইলে ৫টি ও আশুগঞ্জে ৬টি অরক্ষিত বধ্যভূমি
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১:৫৩ অপরাহ্ন, ১লা এপ্রিল ২০২৩

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সর্বোত্তরে নাসিরনগর উপজেলা। কবি জয়দুল হোসেনের গণহত্যা-বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের গবেষক নাসিরনগর ১টি বধ্যভূমির তথ্য পাওয়া গেছে। নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় শ্মশানে অগণিত মানুষকে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে এখানে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের কাউকে কাউকে গণকবর দিয়েছে, আর কাউকে কাউকে হত্যা করে মেঘনা নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। এখানে নিহত প্রায় সকলেই অস্থানীয়। সরাইল উপজেলায় ৫টি বধ্যভূমি তথ্য পাওয়া গেছে।
শাহবাজপুর বধ্যভূমি, ওয়াপদা রেস্ট হাউজ এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। ১৬ জুন লে. জেনারেল নিয়াজি শাহবাজপুর ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এরপর থেকে শাহবাজপুর এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যার পরিমাণ বেড়ে যায়। শাহবাজপুর সংলগ্ন তিতাস ব্রিজের ওপর দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন সময় অগণিত মানুষকে হত্যা করা হয়।
কুচনী গ্রামের ৯জন নিরীহ নারী ও পুরুষকে পাক বাহিনী কর্তৃক একসাথে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। ৯ জনকে শহিদকে বিদ্যালয় মাঠে সমাহিত করা হয় এলাকাবাসী জানান।
কালিকচ্ছ ইউনিয়নের চাকসার ধর্মতীর্থ বধ্যভূমি, ধর্মতীর্থ ঘাটে ছিল রাজাকার বাহিনীর তল্লাশী ক্যাম্প। বিভিন্ন এলাকা থেকে ধরে আনা অসংখ্য লোককে এখানে হত্যা করে লাশ বিলের পানিতে ফেলে দেয়া হয়েছে।
কালিকচ্ছ শ্মশান বধ্যভূমি, কালিকচ্ছ শ্মশানে একটি বধ্যভূমি রয়েছে। এখানে বিভিন্ন মানুষকে রাজাকার আলশামস বাহিনীর কর্মীরা ধরে এনে পাকিস্তানি বাহিনীকে হত্যা করিয়েছে।
১৯৭১ সনের ৩১ অক্টোবর পাকবাহিনী ও তাদের সঙ্গীয় রাজাকাররা বিটঘরসহ আশপাশের মালিহাতা, বুধল, শান্তিনগর, সীতানগর ও নাইলা গ্রামে হানা দিয়ে গণহত্যা অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন ও লুটপাট করে। এখানে একসাথে ৮০ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রতিবছর ৩১ অক্টোবর বিটঘর গণহত্যা দিবস পালিত হয়ে আসছে। ২০১৯ সনে জেলা প্রশাসক কর্তৃক বিটঘরে ১৫ শতাংশ জমিতে ৮টি ফলকে ৮০ জন শহিদের নাম লিপিবদ্ধ করে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়।
আশুগঞ্জ উপজেলার ৬টি বধ্যভূমি, সোহাগপুর বধ্যভূমি, উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নে সোহাগপুর দক্ষিণ বড় কবরস্থানে শহিদ আবু তাহেরসহ ১০জনকে গণকবর দেয়া হয়।
আড়াইসিধা ইউনিয়নের ভবানীপুর গোরস্থান শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মিয়াসহ ১৭ জনকে গণকবর দেয়া হয়।
চরচারতলা সাইলো বধ্যভূমি, চরচারতলা ইউনিয়নে অবস্থিত সাইলো ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতর। এতদঞ্চলে এটিই ছিল হানাদার বাহিনীর সবচেয়ে বড় টর্চার কেন্দ্র। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মহিলা ও পুরুষদের ধরে এনে সাইলোতে আটক রেখে নির্যাতন করা হতো। হানাদার বাহিনীর ভোগের পর তাঁরা শেয়াল-কুকুরের কিংবা মেঘনা নদীতে মাছের খাবের পরিণত হয়েছে। সাইলোর পশ্চিম দিকে সীমানা প্রাচীরের পাশে শত শত লোককে হত্যা করে লাশ গণকবর কিংবা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। আশুগঞ্জ হানাদারমুক্ত হবার পর সাইলো থেকে ক্ষত-বিক্ষত অনেক মহিলাকে উদ্ধার করা হয়েছে।
আশুগঞ্জ-ভৈরব রেলব্রিজ বধ্যভূমি আশুগঞ্জ পার্শর্¦বর্তী মেঘনার ওপারে ভৈরব বাজার এলাকায়ও বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী ত্রাস আর বিভীষিকার রাজত্ব কায়েম করে রেখেছিল। ভৈরবের বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু লোককে ধরে এনে আশুগঞ্জের টর্চার সেলে আটক করে রাখা হয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন হাজার হাজার নারী পুরুষ ও শিশু। এলাকার বহু নারী হয়েছেন বিধাব। স্ত্রী, পুত্র, কন্যা হারিয়ে অনেকেই হয়েছেন নিঃস্ব। একাত্তরের ১৪ ও ১৫ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনীর সেনারা ভৈরব ও আশুগঞ্জ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় চারশত স্থানীয় ও অস্থানীয় রিপরাধ লোককে হত্যা করে মেঘনা নদীতে ফেলে দিয়েছে। ১৫ এপ্রিল ইবরাহিমপুর এলাকায় আড়াইশ লোককে হত্যা করা হয়েছে।
চরসোনারামপুর বধ্যভূমি, মেঘনার চরে বহু লোককে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখা হয়েছে ও মেঘনার তীরবর্তী বধ্যভূমি, আশুগঞ্জ সদর এলাকায় মেঘনা নদীর পূর্ব প্রান্তে বর্তমান অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ঘাটের উত্তর পাশে একটি বধ্যভূমি ছিল। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধরে এনে এখানে বহু লোককে হত্যা করা হয়েছে। আশুগঞ্জ সদর বন্দর এলাকার মেঘনা নদীর তীরবর্তী প্রায় সমগ্র এলাকাই বৃহৎ বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছিল।
আরএক্স/
বিজ্ঞাপন
পাঠকপ্রিয়
আরও পড়ুন

খাগড়াছড়িতে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করলেন জিরুনা ত্রিপুরা

ত্রিপুরা সনাতনী গীতা সংঘের উদ্যোগে গীতা ও নৈতিক শিক্ষা বেসিক প্রশিক্ষণ

প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত: জিরুনা ত্রিপুরা

খাগড়াছড়িতে তিনদিন ব্যাপী জাতীয় ফল মেলা উদ্বোধন
