ইবিতে কোটা সংস্কার বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী-মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫:৫৩ পিএম, ২রা জুলাই ২০২৪

সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে কোটা পদ্ধতি পূনর্বহাল সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে এবং সকল চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে মেধা ভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে আদালতের রায়ের প্রতি একাত্মা জানিয়ে এবং কোটা বহাল রাখার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে প্রায় শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এসময় শিক্ষার্থীদেরকে আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার, জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে, লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে, আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাইসহ নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। পরে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে ডায়না চত্বরে এসে সমবেত হয়।
এসময় মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০১৮ সালে হাইকোর্ট যে পরিপত্র প্রদান করেছিলো তা যেনো পুনর্বহাল রাখে। আমাদের দাবি সর্বজনীন। ৩০ শতাংশ কোটা যেনো বাস্তবায়ন না হয়। করলেও সেটা যেনো ১০ শতাংশের বেশী না হয়। তা নাহলে এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে আর এটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
আরও পড়ুন: জাবি শিক্ষার্থীদের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল
তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ন্যায়ের কথা বলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সাম্যের কথা বলে। একটি দেশে যখন ৩০ শতাংশ অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা হবে তখন যেসব সরকারি অফিসে তারা চাকরি করবেন সেখানে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। ৩০ শতাংশ কোটার ফলে অযোগ্য বা যোগ্যতায় পিছিয়ে পড়া মানুষ চাকরি পাবে ফলে মেধাবীরা এখানে বৈষম্যের শিকার হবে। ফলে দেশের জনগণ সরকারের প্রতি আস্থা হারাবে এবং বিশৃঙ্খলায় বিশৃঙ্খল রাষ্ট্রের জন্ম হবে।
এসময় মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবি গুলো হলো, ১. কৌটা পদ্ধতি বাতিল এবং মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে, ২. ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করতে হবে, ৩. অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কৌটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী শুধুমাত্র অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে, ৪. সরকারি এবং নিয়োগ পরীক্ষায় একাধিকবার কোটা ব্যবহার করা যাবে না, ৫. কোটাধারি শিক্ষার্থী পাওয়া না গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে, ৬. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ, মেধা ভিত্তিক ও আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থী সীমা বলেন, কোটার ব্যবহারের ফলে একটা গোষ্ঠী শিক্ষা চাকরি এবং সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। এরফলে আমরা যারা সাধারণ শিক্ষার্থী আছি তারা পিছিয়ে যাচ্ছি। এটা এক প্রকার বৈষম্য। যা আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমাদের কোটার একটি সুষ্ঠু বণ্টন থাকা উচিত। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেই দেখতে পারবেন যে একবার একটা পরিবার একটা কোটা ব্যবহার করতে পারলে পুনরায় সেই কোটা ব্যবহার করতে পারেন না। আমরা চাই আমাদের হাইকোর্ট বিষয়টি আমলে নিয়ে কোটার সংস্কার নিয়ে আসুক।
আরও পড়ুন: প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪ বছরে পদার্পণ
এছাড়াও আদালতের রায়ের প্রতি একাত্মা জানিয়ে এবং কোটা বহাল রাখার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। এদিন বেলা ১২ টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের পাদদেশে মানববন্ধনটি করেন তারা।
তাদের দাবি, বাপ দাদা দেশের জন্য প্রাণ দিয়ে গেলেন, এদিকে সমাজে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের কটু কথা শুনতে হচ্ছে, ট্রল করতেছে। এসব মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তি রুখে দিতে তারা সোচ্চার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি বেঈমানী করা অপশক্তির বিরুদ্ধে মূলত এই আন্দোলন।
এমএল/
বিজ্ঞাপন
পাঠকপ্রিয়
আরও পড়ুন

অবৈধ দখলমুক্ত জবি এলাকা: পুলিশি অভিযানে জবি ছাত্রদলের সহযোগিতা

জাকসু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলল বামপন্থি প্যানেল

৩৩ বছর পর জাকসুতে ভোটগ্রহণ, এখন অপেক্ষা ফলাফলের

জাকসু নির্বাচন বর্জন করে কেন্দ্র ত্যাগ করলেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষকেরা
