ডিপিডিসির হিসাব রক্ষক জসিম শত কোটি টাকার মালিক


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ১২:৩৪ অপরাহ্ন, ২০শে আগস্ট ২০২৪


ডিপিডিসির হিসাব রক্ষক জসিম  শত কোটি টাকার মালিক
ছবি: জনবাণী

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের বনশ্রী ডিভিশনের সিনিয়র সহকারী হিসাব রক্ষক মো.জসিম উদ্দিনের (আইডি নং-২০৬১০) ঘরে আলাদিনের চেরাগ। ক্ষমতার দাপটে ডিপিডিসির শ্রমিক কর্মচারী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক দখল করেন তিনি। এর পরে তার আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। রাতা-রাতি শত কোটি টাকার মালিক এই কর্মচারী। গড়েছেন বনশ্রী বিল্ডার্স নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানিও। এই কর্মচারী তার প্রভাব খাটিয়ে গ্রাহকদের জিম্মি করে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের উচ্চচাপ, সাবস্টেশন নির্মাণের ঠিকাদারী করা, নিম্নচাপ (এলটি) বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সংযোগের ঠিকাদারী কাজ করে অবৈধভাবে বহু সম্পদের মালিক তিনি। কোন গ্রাহক তাকে বিদ্যুৎ সংযোগের ঠিকাদারী কাজ না দিলে তাকে সংযোগ দেয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয় সম্প্রতি আশরাফ আলী নামে এক ব্যাক্তি দুদকে একটি অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।  


অভিযোগে বলা হয়, জসিম উদ্দিন বিল্ডার্সের ব্যবসায় নাম লিখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিত্তের মালিক বনে গেছেন। তার বিল্ডার্সের নাম বনশ্রী বিল্ডার্স লিমিটেড, ইউনাইটেড বেনিসন (৬ষ্ঠ ও ৭ম তলায় অফিস) হাউজ নং- ০১, রোড- ১৭, ব্লক-ডি, বনানীতে তার প্রধান কার্যালয়। আর এই কোম্পানীর কর্পোরেট অফিস হলো হক টাওয়ার (১০ম তলায়), বাড়ি-৪৬/৪, ব্লক-এম, মেইন রোড, বনশ্রী, রামপুরা আমুলিয়া রোড, ঢাকা। এই বিল্ডার্স কোম্পানীর ভিজিটিং কার্ডে দেখা যায় মো. জসিম উদ্দিন শেখ ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে রয়েছে। বর্তমানে তার প্রজেক্ট চলছে সিক্স ড্রিমস, ১১/৩৪/এ, উত্তর নন্দিপাড়া, রসুলবাগ গ্রীণ সিটি, পূর্ব খিলগাঁওয়ের বহুতল ভবনের পাশের ২০ কাঠার প্লটে। সেখানে এখনও কোন সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়নি। ২০ কাঠার এই প্লটটির ঠিকানা দাগ নং- ১০২৯, আরএস দাগ নং- ১৬৬২, হাল সিটি জরিপ দাগ নং- ১৪১৩৭, মৌজা- নন্দিপাড়া, খিলগাঁও, ঢাকা। এর পাশেই আরেকটি ভবন নির্মাণ করছে এই জসিম। ইতিমধ্যে ৫ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে (কাজ চলমান রয়েছে)। প্রশ্ন হলো সরকারের আধাসায়িত্ব শাসিত একটি বিদ্যুৎ কোম্পানীতে ছোট একটা পদে চাকুরী রাতারাতি একটা লোক কিভাবে এত অর্থ বিত্তের মালিক বনে যায়। যার চাকুরী বয়সের যোগদানের সময় ২০০৮ সালে লাইনম্যান ম্যাট পদে। তার ঢাকার বাসার ঠিকানা হলো ৪৭৬/১, পূর্ব গোড়ান, খিলগাঁও থানা এলাকায় তিনি বসবাস করেন। বর্তমানে সে পদোন্নতি পেয়ে বনশ্রী ডিভিশনে সিনিয়র এ্যাসিস্টেন্ট একাউন্টেন্ট (এসএএ) কর্মরত বয়েছে। ঢাকায় আলিশান জীবন-যাপন করেন তিনি। গ্রামের বাড়িতে গড়েছেন রাজমহল। চড়েন বিলাশবহুল গাড়িতে। জসিম উদ্দিনের অর্থাভাবে এক বেলা হাঁড়ি চড়ে তো আরেক বেলা উপোস থাকতে হতো। সেই মানুষটিই হঠাৎ করে কয়েক বছরের ব্যবধানে শত কোটি টাকার মালিক। কক্সবাজারে রয়েছে হোটেলে পাঁচ শেয়ার, দামী গাড়ি-সে এক এলাহী কাণ্ড! সম্পদহীন মানুষটি কোন আলাদিনের চেরাগের সন্ধান পেয়ে এভাবে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেলেন-এমন প্রশ্ন আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে পরিচিতমণ্ডলের সর্বত্র। সরেজমিনে ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে নেপথ্য কারণটা অবশেষে জানা গেছে।  মো.জসিম উদ্দিন এই আলাদিনের চেরাগ আর কিছু না, লোড কমিয়ে এসটি সংযোগকে এলটি করেন এছাড়া তিনি গ্রাহকদের জিম্মি করে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের উচ্চচাপ (বিদ্যুতের সাবস্টেশন নির্মাণ) সাবস্টেশন নির্মাণের ঠিকাদারী করা, নিম্নচাপ (এলটি) বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সংযোগের ঠিকাদারী কাজ করে অবৈধভাবে বহু সম্পদের মালিক দেখিয়ে টাকার কুমির হয়েছেন ডিপিডিসির এই কর্মচারী।


সূত্র বলছে, ২০১৭ সালে পদোন্নতি পাওয়ার পরও টানা ১১ অক্টোবর ২০২০ সাল পর্যন্ত বাসাবোতে কর্মরত ছিলেন। অর্থাৎ বাসাবো ডিভিশনেই সে টানা ১৩ বছর কর্মরত ছিলেন। গত ১২ আক্টোবর ২০২০ সালে কাস্টমার সার্ভিস এ্যাটেডেন্ট হিসেবে মাতুয়াইল ডিভিশনে বদলি করা হয়। মাতুয়াইল ডিভিশনে কর্মরত অবস্থায় ২৬ মে ২০২২ সালে তার পদ পরিবর্তন হয়ে সিনিয়র এ্যাসিস্টেন্ট একাউন্টেন্ট (এসএএ) পদে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলো। পরবর্তীতে তাকে ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে বদলী করে সিনিয়র এ্যাসিস্টেন্ট একাউন্টেন্ট (এসএএ) পদে বনশ্রী ডিভিশনে পাঠানো হয়।



মাতুয়াইল ডিভিশনে অনিয়মের অভিযোগ:মাতুয়াইল ডিভিশনে থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে গুরুত্বর অনিয়মের অভিযোগ উঠে। অভিযোগে জানা যায়, গ্রাহকের বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণে সে ঠিকাদারী কাজ নিয়ে ডিপিডিসির ডিপোজিট (জমা দেয়া সাপেক্ষে কাজ) নিজের কাছে রেখে উন্নয়নের কাজ দেখিয়ে কাজ করে। এতে করে ডিপিডিসি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারিয়েছে। ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ অভিযোগ পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাকে প্রাইজপোস্টিং দিয়ে বনশ্রী ডিভিশনে বদলী করে।



বাসাবো ডিভিশনের অনিয়মের অভিযোগ: বাসাবো ডিভিশনে কর্মজীবন শুরু করে টানা ১৩ বছর একই জায়গায় কাজ করে। সেই সুবাদে সে বিভিন্ন বিদ্যুৎ গ্রাহকের সংযোগের কন্ট্রাক্ট নিয়ে ১৩ বছরেই সে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার মালিক বনে যায়। গ্রাহকদের উচ্চচাপ বিদ্যুতের সাবস্টেশন নির্মাণ, গ্রাহকের আঙ্গিনায় সোলার বসানোর কন্ট্রাক্ট নিয়ে সে বিপুল অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছে। বিভিন্ন ডিভিশনের প্রকৌশলীদের ম্যানেজ করে (ঘুষ দিয়ে) গ্রাহকদের উচ্চচাপ সংযোগকে পাশ কাটিয়ে নিম্নচাপ সংযোগ করে বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হয়েছে। মূলত তার উত্থান বাসাবো ডিভিশন থেকে। এজন্য আলাদিনের চেরাগ পেয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক (সিবিএ পদ পদবি ব্যবহার করে) প্রভাব খাটিয়ে এখন সে প্রথম শ্রেণীর ডেভলপার ব্যবসায় স্থান করে নিয়েছে। ইতিমধ্যে সে বেশ কয়েকটি বড় প্রজেক্ট শেষ করেছে। বর্তমানে মাদারটেক নন্দিপাড়া এলাকায় দুইটি বড় প্রজেক্ট চলমান রয়েছে। এর মাধ্যে একটি প্রজেক্ট রয়েছে ২০ কাঠার। মো. জসিম উদ্দিন (আইডি নং- ২০৬১০) বাসার ঠিকানা- ৪৭৬/১, পূর্ব গোড়ান, খিলগাঁও, ঢাকা। এই জসিমের 'গ্রীণ সোর্স সোলার কোম্পানী' নামে সোলার কোম্পানী রয়েছে।



তার বিরুদ্ধে অভিযোগ: সে সরকারি চাকুরী করে বিদ্যুতের উচ্চচাপ সাবস্টেশন নির্মাণ, সোলার প্লান্ট বসানোর কাজ করে। বর্তমানে সে ডেভেলপার ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত। অর্থাৎ বিভিন্ন মালিকের প্লট নিয়ে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বিক্রির ব্যবসায় জড়িত রয়েছে। তার বিল্ডার্সের নাম হলো বনশ্রী বিল্ডার্স লিমিটেড, ঠিকানা- ইউনাইটেড বেনিসন (৬ষ্ঠ ও ৭ম তলায় অফিস) হাউজ নং-০১, রোড-১৭, ব্লক-ডি, বনানী, ঢাকা (এটা হলো তার বিল্ডার্সের প্রধান কার্যালয়ের অফিস)। আর এই কোম্পানীর কর্পোরেট অফিস হলো- হক টাওয়ার (১০ম তলায়), বাড়ি- ৪৬/৪, ব্লক-এম, মেইন রোড, বনশ্রী, রামপুরা আমুলিয়া রোড, ঢাকা। এই বিল্ডার্স কোম্পানীর ভিজিটিং কার্ডে দেখা যায় মোঃ জসিম উদ্দিন শেখ ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে রয়েছে। বর্তমানে তার প্রজেক্ট চলছে- সিক্স ড্রিমস, ১১/৩৪/এ, উত্তর নন্দিপাড়া, রসুলবাগ গ্রীণ সিটি, পূর্ব খিলগাঁওয়ের বহুতল ভবনের পাশের ২০ কাঠার প্লটে। সেখানে এখনও কোন সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়নি। ২০ কাঠার এই প্লটটির ঠিকানা হলো- দাগ নং- ১০২৯, আরএস দাগ নং- ১৬৬২, হাল সিটি জরিপ দাগ নং- ১৪১৩৭, মৌজা- নন্দিপাড়া, খিলগাঁও, ঢাকা। এর পাশেই আরেকটি ভবন নির্মাণ করছে। ইতিমধ্যে ৫ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে (কাজ চলমান রয়েছে)। ভবনের ছবিগুলো ও জসিমের ভিজিটিং কার্ড হোয়াটসঅ্যাপে দেয়া আছে।

ডিপিডিসির শ্রমিক কর্মচারী লীগ ৪৫৭৭ এর কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন পদে দায়িত্বে আছেন। বর্তমানে সে বনশ্রী ডিভিশনে হিসাব বিভাগে কর্মরত রয়েছে। জসিম উদ্দিন পহেলা জুলাই ২০০৮ সালে বাসাবো ডিভিশনে লাইনম্যান ম্যাট পদে কর্মজীবন শুরু করেন। বাসাবো ডিভিশনেই টানা ১০ বছর কাজ করার পর পরবর্তীতে ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ পদোন্নতি পেয়ে কাস্টমার সার্ভিস এ্যাটেডেন্ট হিসেবে বাসাবো ডিভিশনেই কাজ করেন।



এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মো. জসিম উদ্দিন বলেন, টাকা থাকা তো দোষের কিছু না। আমার বন্ধুরা মিলে কোম্পানি গড়েছে আমাকে রেখেছে। আমি কোনো টাকা দেয়নি। আমি বেতনে চাকরি করি। এ ছাড়া যত অভিযোগ মিথ্যা। 



এ ব্যাপারে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ নোমান বলেন, এ বিষয় আমার জানা নেই। তবে তদন্ত করে প্রমান পেলে ব্যবস্থা। 


জেবি/এসবি