ডিসি নিয়োগে দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে দুদকে আবেদন

দুদকের চোখ ৬৫ কর্মকর্তার দিকে


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ০২:০০ অপরাহ্ন, ৭ই অক্টোবর ২০২৪


দুদকের চোখ ৬৫ কর্মকর্তার দিকে
ছবি: জনবাণী

সম্প্রতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য ফাঁস হয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এবং বিতর্কিত দুই যুগ্ম সচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও আলী আযমের সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য সামনে এসেছে। এ অবস্থায় ডিসি নিয়োগে দুর্নীতির অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্ট ৬৫ কর্মকর্তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করেছেন এক আইনজীবী। দুদক বিষয়টি নজরে এনে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল রবিবার নাদিম মাহমুদ নামের হাইকোর্টের আইনজীবী দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর ওই আবেদন করেছেন।


জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগে দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে দুদকে আবেদন করেছেন নাদিম মাহমুদ নামে হাইকোর্টের এক আইনজীবী। নিয়োগ বাণিজ্যের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান ছাড়াও আরও দুই যুগ্ম সচিবের সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য সামনে এসেছে। আবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমি একজন বাংলাদেশের স্থায়ী ও সচেতন নাগরিক এবং বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে ঘুষের মাধ্যমে অর্থাৎ দুর্নীতির মাধ্যমে পদে নিয়োগ সমর্থন করি না বিধায় জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদে বদলি ও পদায়ন করা জন্য চেক, ক্যাশ ও ডলারে ঘুষের টাকা লেনদেন করা এবং ঘুষের টাকা বিদেশে পাচার করা ও ঘুষ লেনদেনে সহায়তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অনুসন্ধান করা একান্ত প্রয়োজন। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কেউ যাতে বিদেশে পালাতে না পারে এবং তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো টাকা উত্তোলন করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক বলে মনে করি।


নিজেকে নির্লোভ দাবি করে সিনিয়র সচিব বললেন, ‘৫ কোটি হলেই চলবে’। বিষয়টি নিশ্চিত করে নাদিম মাহমুদ বলেন, ডিসিদের নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি তথ্য ফাঁস হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দুদক থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

 আমি তাই দুদকে আবেদন করেছি। একই সঙ্গে যারা ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দের অনুরোধ করেছি। কারণ ফাঁস হওয়া তথ্যানুসারে ঘুষের টাকা ডলার ও টাকায় লেনদেন হয়েছে। পরিবারের সদস্যসহ তাদের সম্পদের হিসাব নেওয়া উচিত। এ বিষয়ে দুদক যদি পদক্ষেপ না নেয় তাহলে হাইকোর্টে রিট করতে হবে। অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে অনুসন্ধান শুরু করা এবং অভিযুক্তদের কেউ যাতে বিদেশে পালাতে না পারে সেজন্য আদালতে বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণেরও অনুরোধ করা হয়েছে আবেদনে।


প্রসঙ্গত, সম্প্রতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে ফাঁস হয়েছে এক ভয়াবহ কেলেঙ্কারির তথ্য। এ নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এবং বিতর্কিত দুই যুগ্ম সচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও আলী আযমের সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য সামনে এসেছে। সেই সিনিয়র সচিবের সঙ্গে এক যুগ্ম সচিবের হোয়াটসঅ্যাপের কথোপকথনে সম্প্রতি ডিসি নিয়োগ নিয়ে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের তথ্যও উঠে এসেছে।


গত ৩ অক্টোবর দেশের একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, হোয়াটসঅ্যাপের কথোপকথনের একপর্যায়ে নিজেকে নির্লোভ দাবি করেন সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান। টাকা-পয়সার প্রতি কোনো লোভ নেই জানিয়ে ডিসি নিয়োগে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করেন তিনি। তাদের এ সংক্রান্ত কথোপকথনের কিছু স্ক্রিনশট রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মহলেও ঘুরপাক খাচ্ছে, যা নিয়ে প্রশাসনের ভেতরে ব্যাপক তোলপাড় চলছে।


এদিকে, ডিসি নিয়োগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের বিরুদ্ধে ওঠা ঘুষের অভিযোগ তদন্তে তিন উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে দেওয়া এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।


ডিসি নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ সরকার তদন্ত করবে কি না; জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘অবশ্যই আমরা এটার তদন্ত করব, সরকার (তদন্ত) করবে। কিন্তু এখানে দুটি জিনিস মিডিয়াকে মাথায় নিতে হবে। এটাও কিন্তু আমরা তলিয়ে দেখছি যে, ক্লিপটা সোশ্যাল মিডিয়ায় বহুল প্রচারিত হয়ে গেল, সেটা কতখানি এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) প্রডিউসড। সেটা কতখানি রিয়েল, কতখানি ফেক-আমাদের মতো সাধারণ মানুষ বলতে পারে না। ইমিডিয়েটলি যে সিদ্ধান্তটা হয়েছে এটার টেকনিক্যাল ইন্টিগ্রিটিটা কী সেটা জানার জন্য কেবিনেটে (উপদেষ্টা পরিষদে) কথা হয়েছে।’


উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘সেটা ইনভেস্টিগেট করে ইমিডিয়েটলি দেখতে হবে। আমরা অবশ্যই তদন্ত করব।’


উপদেষ্টা বলেন, ‘অত্যন্ত দায়িত্বশীল জায়গায় প্রতিষ্ঠিত কর্মকর্তাদের কোনো ধরনের দায়িত্বহীনতা মেনে নেওয়া যাবে না। এটাও আমাদের অনুশাসনের অধীনে আনতে হবে।’


জেবি/এসবি