সংবিধান সংস্কারে এন ডিএম’র প্রস্তাবনা শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিং


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩:৩৯ পিএম, ১৬ই নভেম্বর ২০২৪


সংবিধান সংস্কারে এন ডিএম’র প্রস্তাবনা শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিং
ছবি: সংগৃহীত

সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশনের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত আমাদের দলীয় ভাবনা এবং প্রস্তাবনা জানতে চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেবার প্রেক্ষিতে আজ জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম এর নীতিনির্ধারণী পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে সংবিধান সংষ্কার সংক্রান্ত আমাদের দলীয় যেসব প্রস্তাবনা চূড়ান্ত হয়েছে তা জানাতে আয়োজিত আজকের এই মিডিয়া ব্রিফিং-এ আপনাদের স্বাগতম। 


১৯৭২ সালের সংবিধান বাংলাদেশের নির্বাচিত কোন সংসদে নয় বরং ১৯৭০ এর পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত গণপরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত সংবিধান। এখানে মুজিববাদকে কায়েম করতে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় এজেন্ডা এবং রাজনৈতিক দূরভিসন্ধির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিলো যা গত সাড়ে ১৫ বছরে শেখ হাসিনার দানবীয় ফ্যাসিষ্ট সরকার পূর্ণতা দিয়েছে। আমরা পরিবর্তিত সংবিধানে রাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয় ধারা এবং বিধিমালা সংবিধানে সংযোজিত দেখতে চাই যা মুক্তিযুদ্ধের তিনটি মূলনীতিকে ধারণ করবে, ২৪ এর গণঅভ্যুথানের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবে এবং ফ্যাসিবাদকে চিরতরে রুখে দিবে। 


আরও পড়ুন: মির্জা ফখরুলের সঙ্গে অস্ট্রিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

 

আমরা সংবিধানের আদর্শিক এবং কাঠামোগত সংষ্কার চাই তবে পরিষ্কার করে আবারও বলছি, সংবিধান সংষ্কার, পরিবর্তন এবং পরিমার্জনের একমাত্র এখতিয়ার জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদের। আওয়ামী লীগের বিনাভোটের এমপিরা নিজেদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য ইচ্ছামতো সংবিধান পরিবর্তন করেছিলো। বর্তমান অন্তর্বর্তী কালীন সরকার সংবিধান সংষ্কারে গঠিত কমিশনের প্রস্তাবনা আমাদের জন্য রেখে যাবেন এবং পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সেটা বাস্তবায়ন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। 


সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭ (ক) অনুচ্ছেদ যুক্ত করে সংবিধানের এক-তৃতীয়াংশ (৫০টির বেশি) অনুচ্ছেদকে সংশোধনের অযোগ্য ঘোষণা করা হয় যা বর্তমান সংবিধানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শাসনকে দীর্ঘায়িত করার একটি অপকৌশল। এরমাধ্যমে সরকারের জবাবদিহতা নিশ্চিত করার সুযোগকে মারাত্বকভাবে রহিত করা হয়েছে। আমরা সংবিধানের যেকোন ধারাকে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সংশোধনযোগ্য দেখতে চাই বলে আমাদের প্রস্তাবনায় উল্লেখ করেছি। আমরা বলেছি, আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে স্মরণ করিয়ে দেয়া সংবিধানে সংযোজিত “জাতির পিতার স্বীকৃতি, জাতির পিতার ছবি বা প্রতিকৃতি সংরক্ষণের বিধান” বর্তমান সংবিধান থেকে বাদ দিতে হবে। এছাড়াও প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত ব্যক্তিদের “দায়মুক্তি সংক্রান্ত বিধান”, সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ১২ (গ) অনুচ্ছেদ, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল বা সংশোধনের সুপারিশ করেছি।


আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেক রহমানের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

 

আমরা চাই সংবিধানের ৫৫ (২) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা নির্দিষ্ট করা হোক। সংবিধানের দ্বিতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত “জাতীয়তাবাদ” এর ব্যাখ্যা পরিবর্তন করে “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ” অন্তর্ভূক্ত করার সুপারিশ আমাদের রয়েছে। “বাঁধাহীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ, নিজ ধর্মের বাণী প্রচার, তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার এবং উচ্চশিক্ষার অধিকার”-কে মৌলিক মানবাধিকার হিসাবে সংবিধানে স্বীকৃতি প্রদান করার কথা আমরা বলেছি। আমরা চাই, “জাতীয় মানবাধিকার কমিশন”-কে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ঘোষণা করে এর ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়াও, জনপ্রশাসন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করছে কিনা সেটা যাচাইকরণ এবং এসংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তিকরণের উদ্দেশ্যে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাসম্পন্ন একটি স্বতন্ত্র কমিশন গঠন করতে হবে। আমরা চাই, আইনসভার কেউ উপজেলা প্রশাসনের কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে পারবেন না সংবিধানে এমন বিধান সংযোজন করতে হবে। 


আদালতের নির্দেশনা আইনসভা কতটুকু বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলবে সেটা সংবিধানে সুষ্পষ্ট হতে হবে এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্র “বিচার বিভাগ সচিবালয়” প্রতিষ্ঠার বিধান সংবিধানে সংযোজন করতে হবে। এছাড়াও, সংবিধানের ৯৫ (গ) (২) ধারা সংশোধন করে প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিদের যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিতে হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে আইনসভা ভেঙ্গে দিয়ে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন, দ্বি -কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা এবং  ইলেকটোরাল কলেজ বা নির্ধারিত নির্বাচকমন্ডলী দ্বারা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান সংবিধানে সংযোজনের সুপারিশ আমরা রেখেছি।


এমএল/