চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত প্রধান উপদেষ্টার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:২৪ অপরাহ্ন, ২১শে এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (২১ এপ্রিল) ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং ইউবো–এর সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি এই অঙ্গীকার তুলে ধরেন।
গভর্নরের প্রথম বাংলাদেশ সফরকে স্বাগত জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এটা কেবল শুরু। আমরা এত কাছাকাছি, তবুও এত দূরে। আসুন, এ পরিস্থিতি বদলে ফেলি।’
আরও পড়ুন: বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি আপনি আবারও আমাদের দেখতে আসবেন— আমরা ভালো প্রতিবেশী হতে চাই, তবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, খুব ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হতে চাই।’
প্রধান উপদেষ্টা তার সাম্প্রতিক চীন সফরের কথা স্মরণ করে বলেন, এটি দুই দেশের সম্পর্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
তিনি চীনের উষ্ণ আতিথেয়তার প্রশংসা করেন এবং সম্পর্ক উন্নয়নে উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্যের জন্য প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ধন্যবাদ জানান।
গভর্নর ইউবো অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্যে আন্তরিকভাবে সাড়া দিয়ে বলেন, ‘আমার এই সফরের উদ্দেশ্য হলো আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা। ইউনান দক্ষিণ এশিয়ার জন্য চীনের উন্মুক্ত কেন্দ্র হিসেবে কাজ করতে প্রস্তুত।’
প্রধান উপদেষ্টা ও গভর্নর যুব বিনিময়, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন যৌথ উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন: ভিডিও বার্তায় বিশ্ববাসীর প্রতি যে আহ্বান জানালেন ড. ইউনূস
গভর্নর ইউবো জানান, ইউনানে একটি চীনা ব্যাংক ইতোমধ্যে অধ্যাপক ইউনূস প্রবর্তিত ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
তিনি দুই দেশের অভিন্ন সামাজিক লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘চীনে অনেকেই এই পদ্ধতির সুফল পাচ্ছেন।’
ইউবো পেশাগত প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল ও ভাষা শিক্ষা খাতে সহযোগিতা বাড়ানো এবং সামুদ্রিক খাবার, আম ও কৃষিপণ্যের মতো খাতে বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রস্তাব দেন।
মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগে জোর দিতে হবে এবং আমাদের অঞ্চলগুলোকে আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলতে হবে— বলেন ওয়াং ইউবো।
প্রধান উপদেষ্টা গভর্নরের প্রস্তাবগুলোর প্রতি সমর্থন জানান। তিনি বলেন, ‘আপনি যা বলেছেন—স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য বা প্রশিক্ষণ বিষয়ে—আমরা সবকিছুর সঙ্গে একমত। আমরা এগুলো আগের চেয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা আরও ঘনিষ্ঠ অংশীদার ও প্রকৃত বন্ধু হতে চাই।’
বৈঠকে স্বাস্থ্যসেবাকে মূল অগ্রাধিকারখাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশি রোগীদের জন্য কুনমিংয়ের চারটি হাসপাতাল নির্ধারণসহ চিকিৎসা পর্যটন সেবা চালুর ক্ষেত্রে চীন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এই সহযোগিতা আমাদের অংশীদারিত্বের একটি নতুন অধ্যায়।’
আরও পড়ুন: ঝামেলামুক্ত ঈদের জন্য কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা
উভয় পক্ষ শিক্ষাবিনিময় বাড়ানোর গুরুত্ব নিয়েও একমত হন। বর্তমানে প্রায় ৪শ’ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনা করছে এবং অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখযোগ্য হারে এই সংখ্যা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
‘আমরা আমাদের তরুণদের চীনে পড়াশোনা ও ভাষা শেখায় উৎসাহিত করব,’ তিনি জোর দিয়ে বলেন।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীতে, প্রধান উপদেষ্টা পারস্পরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং নতুন সমৃদ্ধির সুযোগ উন্মোচনে চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বাংলাদেশের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
এমএল/