ছেলেকে ফিরে পেতে মায়ের হাহাকার
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৮ অপরাহ্ন, ২২শে এপ্রিল ২০২৫

একজন মা প্রতিদিন ভোরে ওঠেন, তাকিয়ে থাকেন দরজার দিকে—এই বুঝি সেই চেনা কণ্ঠে ডাক পড়বে, ‘মা, ভাত দাও।’ কিন্তু সেই কণ্ঠ বহু দূরের আরেক দেশে, এক অজানা ঘেরাটোপে বন্দি। ছেলে নেই, ঘরটা যেন প্রাণহীন। ছেলের নাম আবদুল মান্নান। বয়স মাত্র ২১। এই বয়সে জীবন শুধু স্বপ্নে মোড়া থাকার কথা, কিন্তু আজ তার মা আয়েশা বেগম শুধুই কান্নায় ভিজে যান।
আরও পড়ুন: পাঁচ বছরে বিএসএফের গুলিতে নিহত ১৫১ বাংলাদেশি
গত ১৬ এপ্রিল বিকালে সিলেটের গোয়াইনঘাটের বেউরঝারী সীমান্ত দিয়ে বেড়াতে গিয়ে ভারতের বড়বিল্লাহ বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা মান্নানসহ আরও তিন যুবককে আটক করে। এরপর তাকে ভারতের মেঘালয়ের ডাউকি থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডাউকি থানা পুলিশ তার বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪ ধারায় মামলা রুজু করে তাকে জোয়াই কারাগারে পাঠিয়েছে। মামলা নম্বর: ১৪(৪)২০২৫।
আটককৃত মান্নান কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ধামতী ইউনিয়নের পদুয়া গ্রামের হাজী বাড়ির ছেলে। তার বাবা মো. মজিবুর রহমান মারা গেছেন অনেক আগে। সংসারের একমাত্র অবলম্বন ছিল এই ছেলেটিই।
বিজিবির ৫০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল তানজীম আহম্মেদ জানিয়েছেন, মান্নান সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করায় বিএসএফ তাকে আটক করেছে। এরপর অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতীয় পুলিশ তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে (২২ এপ্রিল) এ খবর শোনার পর থেকেই মান্নানের মা আয়েশা বেগমের ঘরে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা। বুকফাটা আর্তনাদে তিনি বলেন, ‘আমার মান্নান কোনো অপরাধী না। সে তো ঘুরতে গিয়েছিল। ওর কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন, আমি তাকে ছাড়া বাঁচবো না।’
দেশের সরকার এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কাছে আয়েশার একটাই অনুরোধ,‘মান্নানকে ফিরিয়ে আনুন। আমি শুধু আমার ছেলেটাকে চাই, জীবিত চাই!’
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে প্রায়ই এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, কিন্তু এই ঘটনাগুলোর মানবিক দিক যেন অনেক সময় হারিয়ে যায় কূটনৈতিক কড়াকড়িতে। মান্নানের ঘটনা যেন সেই একই গল্পের নতুন অধ্যায় না হয়—এই প্রার্থনাই আজ একজন অসহায় মায়ের।
এসডি/