খাদ্যসংকটে পাকিস্তানের ১ কোটিরও বেশি মানুষ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:২১ পিএম, ১৮ই মে ২০২৫

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাকিস্তানে ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়জুড়ে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ চরম খাদ্যসংকট বা তার চেয়েও খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি ছিলেন।
গত শুক্রবার (১৬ মে) প্রকাশিত ‘২০২৫ গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব খাদ্যসংকটে পড়া মানুষ দেশটির বালুচিস্তান, সিন্ধ ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বন্যাক্রান্ত ৬৮টি গ্রামীণ জেলার অন্তর্ভুক্ত। জরিপ করা জনসংখ্যার ২২ শতাংশ বর্তমানে এই সংকটে রয়েছে। এর মধ্যে ১৭ লাখ মানুষ জরুরি অবস্থায় রয়েছেন।
২০২৪ সালের সর্বোচ্চ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি এবং ২০২৫ সালের বর্তমান বিশ্লেষণের তুলনায় দেখা গেছে, জনসংখ্যা কাভারেজ ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। আগের ৩ কোটি ৬৭ লাখের তুলনায় এবার বিশ্লেষণে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ৫ কোটি ৮ লাখ মানুষ এবং যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত ২৫টি জেলা। এই কারণে ২০২৪ সালের পিক এবং ২০২৫ সালের পূর্বাভাস সরাসরি তুলনাযোগ্য নয়।
পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হলেও প্রতিকূল আবহাওয়া এখনও জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়েও প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ মানুষ চরম খাদ্যসংকটে ভুগেছিলেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত বালুচিস্তান ও সিন্ধের বিভিন্ন বিশ্লেষণাধীন এলাকায় চরম পুষ্টিহীনতার উচ্চ মাত্রা বিরাজ করছে। এখানে গ্লোবাল অ্যাকিউট ম্যালনিউট্রিশনের (জিএএম) হার ১০ শতাংশের উপরে ছিল, এমনকি কিছু জেলায় তা ৩০ শতাংশও ছাড়িয়ে গেছে।
পুষ্টি সেবার পরিসর বাড়াতে অর্থসংকট বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৫ সালেও জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা এবং খাদ্যসংকটের কারণে চরম অপুষ্টির ঝুঁকি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী ২১ লাখ শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগেছে। খাদ্যের গুণগত মান ও পরিমাণ ছিল অপ্রতুল, যা শীত মৌসুমে খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, জীবিকা সংকোচন ও বাজারে প্রবেশাধিকারের সীমাবদ্ধতার কারণে আরও তীব্র হয়।
বিশেষ করে সিন্ধ ও খাইবার পাখতুনখোয়ায় গর্ভবতী ও দুধদানকারী মায়েদের মধ্যে চরম অপুষ্টির হার ছিল বেশি। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনেক শিশু জন্ম নিচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন নিয়ে। একই সঙ্গে ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ ছিল উচ্চমাত্রায়, যা শীতকালে আরও বেড়ে যায়।
২০২২ সালের ভয়াবহ বর্ষাকালে ঘটে যাওয়া বন্যায় সিন্ধসহ অন্যান্য প্রদেশে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখনো পর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধা ও নিরাপদ পানির অভাব রয়েছে। খারাপ সড়ক যোগাযোগ ও জনস্বাস্থ্যসেবায় অনাগ্রহের কারণে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। পুষ্টি সহায়তা কার্যক্রমেও অর্থসংকট বড় বাধা।
সূত্র: ডন