খাগড়াছড়িতে মিশ্রফল চাষে আলোর মূখ দেখেছেন জ্যোতি কিশোর বড়ুয়া


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৩৫ অপরাহ্ন, ২৬শে মে ২০২৫


খাগড়াছড়িতে মিশ্রফল চাষে আলোর মূখ দেখেছেন জ্যোতি কিশোর বড়ুয়া
মিশ্রফল চাষে আলোর মূখ দেখেছেন জ্যোতি। ছবি: প্রতিনিধি

খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার বুদং পাড়া এলাকায় মাটি ও প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসায় অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষিকে ভালোবেসে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অবসরপ্রাপ্ত সহকারী কৃষি সম্প্রাসারণ কর্মকর্তা জ্যোতি কিশোর বড়ুয়া শখের বসে অবসরে গিয়ে মেধা ও সৃজনশীলতা এবং পরিশ্রম দিয়ে নিজেকে একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।


তার মিশ্র ফল চাষে পুরো এলাকা জুড়ে  প্রশংসায়  ভাঁসছেন। তার এই শখের বাগান এখন লক্ষ্য লক্ষ্য টাকার আয়ের দারুণ উৎস। ২০১৭ সালে ২৫ কানি ১০০০ শতক জায়গার উপর মিশ্রফল বাগান গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন,পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়নের লক্ষে, তিনি শুরু করেন বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা প্রজাতির ফলজ চারা সংগ্রহ। প্রথমে ৮০০শত বিভিন্ন জাতের ফলজ চারা, লেবু ৪০০,  মাল্টা ৫০০, লটকন ৩০০, ২৫০ পেপে, চালতা ১৫০, জলপাই ১৫০,আমড়া - ২০০, আরও বিভিন্ন প্রজাতী চারা রোপনের মাধ্যমে বাগানের সূচনা হয়। পরে পর্যাক্রমে আরো ৬০০চারা রোপন করেন তিনি।


আরও পড়ুন: খাগড়াছড়ি কারাগারে বন্দী মৃত্যু ও বন্দী বম সম্প্রদায়ের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ


প্রথম প্রথম তেমন আশানরুপ ফলন হয়নি। তবে হাল ছাড়েননি জ্যোতি কুমার বড়ুয়া। দ্বিতীয়বার কঠিন পরিশ্রম ও পরিচর্যার মাধ্যমে দেখেন আলোর মুখ। গাছে ফল আসা শুরু হয়। এটি ছিল তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।


সরেজমিনে দেখা যায়, জ্যোতি কিশোর বড়ুয়া তার বাগানে যে বিশাল বৈচিত্র্য নিয়ে ফলের চাষ করছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আছে নানা জাতের আম - বারীফোর, রাঙগই, আম্রপালী,ডকমাই, বেনানা, কাটিমন, থ্রীটেস্ট, গৌরোমতি,

কিউজাই, মিয়াজাকি(সূর্যডিম), ম্যাঙ্গইষ্টিং, পালমার,রত্না, হাড়ী ভাংগা, হিম সাগর, রেডকুইন, রবি লংগান (লাল) লাল কাঁঠাল, সরুপা, পেপে, মাল্টা, লেবু,


বারোমাসী কাঠাল, রামভুটান, কুল, জামরুল, লিচু, কমলা, ভিয়েতনামি কাঁঠাল, আমলকী, কালো জাম, সফেদা, লটকন, নারিকেল, পেয়ারা, সাদা জাম,  আলু বোখরা, কলা, আমড়া,জলপাই,বড়ই লিচু,অড়বরই,সহ আরও অনেক বিদেশি ফল।কিন্তু একাগ্রতা আর শেখার আগ্রহ তাকে সফলতা এনে দিয়েছে।


এসব ফল স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, যা তাকে এক সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।


জ্যোতি কিশোর বড়ুয়া শুধু একজন সফল কৃষি উদ্যােক্তা নয়, তিনি একজন সফল  কৃষি পথনির্দশক। তার বাগান এবং সফলতার গল্প শুনে এখন অনেকেই মিশ্র ফল চাষের দিকে ঝুঁকছেন। একদিকে যেমন ফল চাষের মাধ্যমে আয়ের উৎস তৈরি করেছেন, তেমনি  বাগানটি একটি শিক্ষামূলক ও দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে স্হানীয়দের কাছে।


বাগানে ফলের চাষে প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণ করেন তিনি। পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে ফেরোমন ফাঁদ ও কালার টেপ ব্যবহার করেন। ফলে বাগানের ফলগুলিও বিষমুক্ত এবং স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি করেনা।


কীটনাশক ও ফরমালিন মুক্ত হওয়ায় স্হানীয় বাজারে এ ফলের চাহিদা প্রচুর। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা তার বাগান থেকে ফল কিনে নিয়ে যান। বাগানের বারীফোর, ডকমাই,কাটিমন ও গৌরমতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এলাকার কৃষকরা তার কাছ থেকে পরামর্শ নেন এবং নিজের জমিতে মিশ্র ফল চাষ শুরু করেছেন অনেকেই ।


কথা হয় বাগানের শ্রমিক মংশ্রেপ্রু মারমা, উষা মং মারমা,চাইথোয়াই মারমা সাথে। তারা মাসে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা করে বেতন পান,যা দিয়ে ছেলে মেয়ের পড়াশোনা ও সংসারের খরচ চালান।  


মালিক জ্যোতি বড়ুয়া বলেন,এ বাগান আমার শখের বসে করা হলেও তা বাণিজ্যিক ভাবে করার উদ্যোগ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। জীবনে স্বর্বস্বটুকু দিয়ে তিলে তিলে এবাগান গড়ে তুলেছি, বাগানে ব্যয় হয়েছে ২৫লক্ষ টাকা। বর্তমানে আমার বাগানে প্রতিনিয়ত কাজ করছে ৮-১০জন শ্রমিক। আমি এবছর আম বিক্রি করতে পারবো ১২-১৪লক্ষ টাকা আশা রাখছি। অনন্য ফল তো আছেই। আরেকটি বাগান করা চেষ্টায় আছি।যদি স্হানীয় ব্যাংক,ও কৃষি অফিসের সহযোগিতা এবং সরকারের কাছ থেকে যে কোন পিষ্টপোষকতা বা অনুদান পেলে এ বাগান দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমি মনে করি।



আরও পড়ুন: খাগড়াছড়ি বিজ্ঞান মেলায় শ্রেষ্ঠ আয়োজক হিসেবে জেলায় বেস্ট ইউএনও নির্বাচিত মমতা আফরিন



সুন্দর প্রকৃতিতে বাগানে ঘুরতে যাওয়া মাটিরাঙা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেন্টাল টেকনোলজিস জহিরুল ইসলাম মোহন বলেন, অপূর্ব এক ফলজ বাগান যা দর্শনার্থীদের সময় কাটানোরও সুন্দর জায়গা। বাগান মালিক জ্যোতি বড়ুয়া তার পরিশ্রম, অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং শখকে পেশায় পরিণত করার মনোবল এখন অনেক কৃষক ও উদ্যোক্তার জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। তার সফলতার পেছনে শুধুমাত্র কঠোর পরিশ্রম ও উদ্যম নয়, বরং প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসার এক জীবন্ত উদাহরণ। যা নবীনদের  নতুন কিছু শিখতে আগ্রহ সৃষ্টি করবে আর  

তাদের মূল চালিকাশক্তি হবে।


গুইমারা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ওঙ্কার বিশ্বাস জানান, মিশ্র ফল চাষে এখনকার কৃষকদের মধ্যে উৎসাহ তৈরি হয়েছে। আমাদের অফিস থেকে নিয়মিত তাকে পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে


এসডি/