ভারী বৃষ্টিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৫৩ স্থানে ভূমিধস, ১৪ শত বসতি ক্ষতিগ্রস্ত


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:১৭ অপরাহ্ন, ২রা জুন ২০২৫


ভারী বৃষ্টিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৫৩ স্থানে ভূমিধস, ১৪ শত বসতি ক্ষতিগ্রস্ত
ছবি: প্রতিনিধি

কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৫৩টি ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে মাটি দেয়াল ধসে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর বজ্রপাতে আহত হয়েছেন ১১ জন। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪ শতের বেশি বসতি।


আরও পড়ুন: অষ্টম দিনেও সেন্টমার্টিনে নৌ যান চলাচল বন্ধ, তীব্র হচ্ছে নিত্যপণ্যের সংকট


সোমবার (০২ জুন) সন্ধ্যায় এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইউএনএইচসিআর সাব-অফিস কক্সবাজারের যোগাযোগ সহযোগী মোশারফ হোসেন।


বার্তা বলা হয়েছে, এই সপ্তাহের শেষে আরম্ভ হওয়া প্রবল বৃষ্টিপাত জনবহুল শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে আঘাত করেছে। যা হাজারো রোহিঙ্গা শরণার্থীর অস্থায়ী আশ্রয়স্থলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মাত্র দুই দিনের ভারী বর্ষণে ৩৩টি শিবিরে ৫৩টি ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। একই সঙ্গে বন্যা ও ঝড়ো হাওয়ায় ১৪০০টির বেশি আশ্রয়স্থল ক্ষতির সম্মুখীন। দেওয়াল ধসে একজন প্রাণ হারিয়েছেন ও বজ্রপাতে আহত হয়েছেন ১১ জন। যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।


অন্তবর্তীকালীন ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি জুলিয়েট মুরেকেইসনি বলেন, ‘খাড়া ঢালু জায়গা, বন্যা ও অস্থায়ী আশ্রয় মিলিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায় বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আর ঝড়ো হাওয়া বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরী ঘরগুলোকে আরও দুর্বল করে তুলেছে।


তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে এবং কমিউনাল সেন্টারগুলোতে স্থানান্তরে শরণার্থী স্বেচ্ছাসেবকরা সহায়তা করছেন। কিন্তু শেল্টারের জন্য আমাদের আরও জায়গা দরকার। আক্রান্ত পরিবারদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিতে কমিউনাল স্থাপনাগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বর্ষার আগেই শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয়ের জন্য যথেষ্ট জায়গা ছিল না। বিশেষ করে মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে সুনির্দিষ্ট সহিংসতা ও হত্যার শিকার হয়ে গত কয়েক মাস হাজার হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকেই আগে পালিয়ে আসা, তাদের আত্মীয়ের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। যারা নিজেরাই নিজেদের ঘরকে শুকনো রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।


“বর্ষা মৌসুম মে মাস শেষ থেকে আগস্ট পর্যন্ত চলবে। এই সময়ে বিপদের ঝুঁকি কমাতে মানবিক সংস্থাগুলো আগেভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেমন ত্রিপল, দড়ি, ঘুমানোর ম্যাট, পানিশোধন ট্যাবলেট ও জেরিক্যানের মতো ত্রাণসামগ্রী মজুত রাখা। প্রাথমিক চিকিৎসা এবং উদ্ধার কার্যক্রমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকরা বিপদের সময় উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ এবং চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের সহায়তায় প্রস্তুত রয়েছেন।”


কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস বলেন, বড় ধরণের অর্থসংকট এই প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং আশেপাশের বাংলাদেশি জনগণ একইভাবে এমন একটি এলাকায় বাস করছেন যেখানে বন্যা, ভূমিধস, ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি সবসময় থাকে। এই দুর্যোগগুলোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটা জীবনরক্ষাকারী। সাধারণত মে মাসের আগেই বর্ষা প্রস্তুতি শুরু হয়, কিন্তু এ বছর অর্থের অভাবে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।


২০২৫ সালে মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলো প্রায় ১৪.৮ লাখ মানুষকে সহায়তা করতে ৯৩.৪ কোটি মার্কিন ডলার তহবিল চেয়েছে। যার মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং আশেপাশের বাংলাদেশি জনগন অর্šÍভুক্ত। 


আরও পড়ুন: উপকূলে সাগরের আগ্রাসন, কক্সবাজারে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত


লুইস বলেন, বছরের মাঝপথে পৌঁছে যাওয়া সত্ত্বেও যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনা এখনও ২০ শতাংশেরও কম অর্থায়ন পেয়েছে। 


তিনি আরও বলেন, আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করব। কিন্তু এই কঠিন সময়ে আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবহেলা করতে পারি না। এই দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্য আমরা জরুরিভাবে দাতাদের উদাত্ত আহ্বান জানাই তারা যেন উদারভাবে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন।


এসডি/