স্বেচ্ছাচারিতার মাস্টার মাইন্ড শিকারপুর ইউপি সচিব হানিফ


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৫৭ পিএম, ৯ই সেপ্টেম্বর ২০২৫


স্বেচ্ছাচারিতার মাস্টার মাইন্ড শিকারপুর ইউপি সচিব হানিফ
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

মো. এমদাদুল কাসেম সেন্টু: বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আবু হানিফ মুন্সীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ এনেছেন পরিষদের একাধিক  সদস্য। তাঁদের অভিযোগ- সচিব একক কর্তৃত্বে পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সরকারি বরাদ্দে অনিয়ম করছেন এবং জনসেবামূলক কার্যক্রমেও স্বচ্ছতা বজায় রাখছেন না।


ইউপি সদস্যদের অভিযোগে বলা হয়, সচিব আবু হানিফ মুন্সী কোনো সভা বা সদস্যদের মতামত ছাড়াই নিজ ইচ্ছেমতো প্রকল্প অনুমোদন করছেন এবং অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন জনপ্রতিনিধিদের কার্যকারিতা নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ইউনিয়নের উন্নয়ন কার্যক্রমও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে।


এক ইউপি সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েও এখানে কোনো মূল্য পাচ্ছি না। সচিব যা খুশি তাই করছেন না আছে স্বচ্ছতা, না আছে জবাবদিহিতা।


একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ কিংবা অন্যান্য সেবা নিতে গেলে ঘুষ দিতে হয়। পরিষদের সাধারণ নাগরিক সেবাও এখন দালালচক্রের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে তাদের অভিমত। ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের ভেতরে অসন্তোষ চরমে পৌঁছেছে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউপি সদস্যরা দুর্নীতি ও অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে সরকারি সেবা দিয়ে টাকার আদায়, গোপন বরাদ্দ, এবং একক সিদ্ধান্তে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎযার কারণে সাধারণ মানুষ এবং ইউপি সদস্যদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।


অভিযোগ অনুযায়ী, দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকলেও সচিব নিয়মিত অফিসে উপস্থিত থাকেন না। সপ্তাহে ২‑৩ দিন এসে ২‑৩ ঘণ্টা কাজ শেষে অফিস সময় শেষ হওয়ার আগেই চলে যান। ফলে সাধারণ জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এবং অফিসের কার্যক্রম স্থায়ীভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের আয় থেকে ট্যাক্স আদায়, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু, ওয়ারিশ সনদ ইস্যু, এবং গ্রাম আদালতের মামলা ফি-এর মাধ্যমে প্রায় ৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ। কিন্তু সেই টাকা সম্পর্কে কোনো হিসাব আজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।


ইউনিয়ন পরিষদের সকল সরকারি বরাদ্দ গোপন রাখা হয়, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এককভাবে এবং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় নিজের ইচ্ছামত। এতে লক্ষাধিক টাকা অপচয় বা হাতিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। গত জুলাই মাসে ভিজিডি চাল বিতরণে, শতাধিক উপকারভোগীর কাছ থেকে ২০০ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জরুরি খাদ্যসুরক্ষা কার্যক্রমেও স্বচ্ছতা না থাকার অভিযোগ।


বয়স্ক  ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মা ও শিশু সহায়তা ভাতা, এমনকি টিসিবি ও ভিডিও কার্ড প্রয়োজনে টাকা আদায় করে লাখাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ আসলে ইউপি সদস্যদের অবহিত করা হয়নি; কোনো সভায় সিদ্ধান্ত না নিয়েই কাজ চলছে।


প্রতিটি জন্ম নিবন্ধনের জন্য ৩০০/৫০০ টাকা আদায় করে এক লাখ টাকা আয় করা হয়েছে, কিন্তু তদারকির অভাবে সেই টাকা যাচাই-বাছাই বা হিসাব দেয়া হয়নি। ইউপি সদস্যদের সঙ্গে কর্কশ ভাষায় কথা বলার কারণে পরিষদের কাজ করতে পারে না তারা। কাজেই সেবা বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ জনগণ।


ইউপি দিদারুল ইসলাম, মো. বাচ্চু সরদার, ইউসুফ হাওলাদার, জাকির মাহমুদ, হানিফ হাওলাদার, ইকবাল মজুমদার, আশ্রাব আলী রাড়ী, নুপুর আক্তার, শিউলি বেগম এবং রিতা দাস উজিরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি/সম্পাদক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তারা সচিবকে অবিলম্বে অপসারণ ও বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।


বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রবিউল হোসেন বলেন, আমি শিকারপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। শিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আবু হানিফ মুন্সীর বিরুদ্ধে ব্যাপক  দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, যা স্থানীয় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সরকারি বরাদ্দ গোপন রাখা, সেবায় টাকার অবিচার, ইউপি সদস্যদের সাথে অশোভন আচরণ। এসব অভিযোগ দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি ওঠেছে। তার বিরুদ্ধে  প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে, জনগণের অধিকার বিশেষ করে সেবা পাওয়ায় চলমান এই অস্বচ্ছতার কারণে চরমভাবে হুমকির মুখে পড়বে।


এ ব্যাপারে উজিরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলী সুজা দৈনিক জনবাণীকে বলেন, অভিযোগ গুলি তদন্ত সাপেক্ষে এবং প্রমাণের ভিত্তিতে পরবর্তীতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আরএক্স/