ইয়েমেনের ‘সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র’ হামলায় ইসরাইলি সেনা ঘাঁটিতে আঘাত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩:২৫ পিএম, ১২ই সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরাইলি দখলকৃত এলাকায় সফল ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) আল-মাসিরাহ টিভিতে প্রচারিত এক বিবৃতিতে হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি জানান, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট বৃহস্পতিবার একটি ‘প্যালেস্টাইন-২’ সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে নেগেভ অঞ্চলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে।
বিবৃতিতে অভিযানের সফলতা উল্লেখ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, হামলার ফলে বহু ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
হামলাগুলোকে গাজায় ইসরাইলি কর্মকাণ্ড ও ইয়েমেনের ভূখণ্ডে আক্রমণের প্রতিশোধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সারি বলেন, “ইয়েমেন ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে থাকবে এবং ইসরাইলি আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার সামর্থ্য রাখে।”
এর আগে হুথি আনসারুল্লাহর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সতর্ক করেছেন, ইয়েমেনের পাল্টা অভিযান ইসরাইলি দখলকৃত ভূখণ্ডে আর কোথাও নিরাপদ রাখবে না।
হুথি নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম সম্পর্ক পরিচালক আবদুল্লাহ আল-আহনুমি বলেন, রাজধানী সানার তাহরির স্কোয়ারে নাগরিকদের লক্ষ্য করে চালানো জায়নিস্ট শাসনের ‘ভয়াবহ অপরাধ’ জবাবহীন থাকবে না। তিনি আরও জানান, পাল্টা হামলা সামরিক ঘাঁটি, বিমানবন্দর, বসতি স্থাপনকারীদের সমাবেশ ও অন্যান্য সংবেদনশীল স্থাপনাকে লক্ষ্য করবে।
আল-আহনুমি বলেন, “শত্রু বুঝতে হবে আমাদের জনগণের রক্ত মূল্যবান, আর এটি ঝরানো হলে আরও শক্তিশালী প্রতিশোধমূলক হামলার সূত্রপাত ঘটবে।”
এ হামলা একদিন পর আসে, যখন ইসরাইলি যুদ্ধবিমান ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও আল-জওফ প্রদেশে একাধিক বিমান হামলা চালায়, যাতে প্রায় ৩ ডজন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ১৩০ জনের বেশি আহত হন। ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় সানার তাহরির পাড়ার বাড়িঘর, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৬০তম সড়কের চিকিৎসাকেন্দ্র এবং জওফ প্রদেশের হাজম সরকারি ভবন লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল।
নাগরিক সুরক্ষা দল জানিয়েছে, তারা হামলার পর সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ ও ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের উদ্ধার করার চেষ্টা চালাচ্ছিল।
আরও পড়ুন: গাজায় নিহত ৭২, ক্ষুধায় আরও ৭ জনের মৃত্যু
একজন জ্যেষ্ঠ ইয়েমেনি কর্মকর্তা আল-মায়াদিন টেলিভিশন চ্যানেলকে জানান, ইসরাইলি হামলায় ২৬ সেপ্টেম্বর ও আল-ইয়েমেন পত্রিকার কার্যালয় ধ্বংস হয়, যেখানে কয়েকজন সাংবাদিক নিহত ও আহত হন।
গত দুই বছরে অবরুদ্ধ গাজা, লেবানন ও ইয়েমেনে চলমান আগ্রাসনের সময় ইসরাইল ইতোমধ্যে শত শত সাংবাদিককে হত্যা করেছে। জাতিসংঘও ইয়েমেনে অব্যাহত ইসরাইলি বিমান হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, বিশেষ করে সর্বশেষ হামলায় তাদের একটি কার্যালয়ের কাছাকাছি স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু হওয়ার পর।
এই হামলা কয়েকদিন পর আসে, যখন ২৮ আগস্ট ইসরাইলি বিমান হামলায় সানায় ইয়েমেনের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ গালেব নাসের আল-রাহাউই ও আরও কয়েকজন মন্ত্রী নিহত হন।
এদিকে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় গণহত্যামূলক আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর ইয়েমেনি বাহিনী একটি কৌশলগত সামুদ্রিক অবরোধ চালু করে, যাতে ইসরাইলের কাছে সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছানো ঠেকানো যায় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজার মানবিক সংকট মোকাবিলায় আহ্বান জানানো হয়।
ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, ইসরাইল গাজায় স্থল ও আকাশ হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত তারা তাদের অভিযান চালিয়ে যাবে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলের হামলায় অন্তত ৬৪,৬৫৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু।
সূত্র: মেহের নিউজ
এসএ/