‘মুই মরলে নাতিটার যে কি হবে বাহে’


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন, ৪ঠা অক্টোবর ২০২২


‘মুই মরলে নাতিটার যে কি হবে বাহে’
অম্বিকা বর্মনী ও অর্জন চন্দ্র রায়

সনাতন ধর্মালম্বীদের সব চেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা। এই উৎসবকে ঘিরে সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রতিটি পরিবারে চলে উৎসবের আমেজ। নতুন পোশাকের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনদের বাহারী খাবার তৈরীতে যখন প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা ব্যস্ত সময় পাড় করেন। চারিদিকে আনন্দ উৎসবের আমেজ চললেও পূজায় নতুন কাপড় কিনতে না পাড়ায় চরম হতাশায় ভুগছেন ৭৫ বছরের অম্বিকা বর্মনী ও তার নাতি অর্জন চন্দ্র রায়।

তার বাড়ী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কুরুষাফেরুষা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত শিতিষ চন্দ্র বর্মনের স্ত্রী। স্ত্রী অম্বিকা ও একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলে অশোককে রেখে স্বামী শিতিষ চন্দ্র বর্মন ১৫ বছর আগে মারা যান। সংসারের একমাত্র উপার্জন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর থেকে প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে অম্বিকা বর্মনীর শুরু হয় দূর্বিসহ জীবন-যাপন। ভিক্ষাবৃত্তি করে ছেলেকে বড় করে তুলেন। এরপর সেই ছেলেকেও বিয়ে দেন অম্বিকা বর্মনী। পাঁচ বছর আগে হঠাৎ ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারেনি। র্দীঘদিন অসুস্থ থাকার পর ৬ বছর বয়সী ছেলে সন্তান রেখে একমাত্র ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী অশোকও মারা যান। ছেলে মারা যাওয়ার পর শুরু হয় আরও করুন পরিনিতি। কিভাবে ছেলের বউ ও তার সন্তানসহ ৩ সদস্যের সংসার চলবে এ দুচিন্তার যেন শেষ নেই। ছেলে মারা যাওয়ার ১ বছরের মধ্যে ছেলের বউ অবুঝ শিশুটিকে অম্বিকা বর্মনীর কাছে রেখে অন্য খানে বিয়ে করে সংসার পাতেন। এখন বৃদ্ধা বয়সে অম্বিকা বর্মনী ভিক্ষাবৃত্তি করে বাবা হারানো অবুঝ শিশু নাতিকে নিয়ে স্বামীর ভিটায় খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

বৃদ্ধা অম্বিকা বর্মনীর স্বামীর বাড়ী চানা ৪ শতক জমি ছাড়া কিছুই নেই। সেই ৪ শতক জমিতে জরাজীর্ণ একটি টিনসেট ঘরে নাতিসহ অতিকষ্টে বসবাস করছেন। বৃদ্ধা অম্বিকা বর্মনীর একমাত্র আয় বয়স্ক ভাতার ৫০০ টাকা। ভাতার টাকাও চলে না সংসার। ৩ মাস পর পর। প্রতিবেশিদের সহায়তায় একমাত্র নাতিকে নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন অম্বিকা বর্মনী। বয়য়ের ভাঁড়ে প্রতিদিন ভিক্ষাও করতে পারেন না। যেদিন ভিক্ষা করতে যান মাত্র ১ কেজি চাল ২০ থেকে ৩০ টাকা পান। ভিক্ষায় যা পান ও বয়স্ক ভাতার টাকা দিয়ে কোন রকমেই দু-বেলা দু-মূঠো খাবার জোটে অম্বিকা বর্মনীর। এ দিকে বেশির ভাগ সময়ে অম্বিকা বর্মনীর শরীল অবস্থা ভাল না থাকায় ভিক্ষা যেতে পারেন না। ভিক্ষা করলে পেটে ভাত না করলে উপবাস থাকতে হয়। এভাবেই করুন জীবন-জীবিকা করছেন তিন। যেন দেখার কেউ নেই।

বৃদ্ধা অম্বিকা বর্মনী বলেন, আমার দুভাগ্য কপাল। আবাদী জমি-জমা নাই। মাত্র ৪ শতক জমিতে ছোট একটি টিনসেট ঘরে নাতিটাকে নিয়ে কোন রকমেই দিন পাড় করছি। মোর দুর-ভাগ্য কপাল বাহে ! তিনি জানান, শরীলটা চায় বিশ্রাম। কিন্তু বিশ্রাম করলেও তো ক্ষিদা যায় না। পেটের তাড়নায় এই বয়সে দুই বাড়ী ভিক্ষা করতে হয়। তবে প্রতিবেশিদের সহায়তায় অতিকষ্টে বেঁচে আছি। এক মাত্র থাকার ঘরটিও অবস্থা ভীষন নাজুক। যে কোন মহুতে ভাঙ্গাচুরা ঘরটি পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। চাটাইয়ের বেড়া ও টিনের তৈরী ঘরটিও খুবই জরাজীর্ণ। ঘর থেকে আকাশের সূর্য ও তাঁরা দেখা যায়। রাতে বৃষ্টি আসলে কোথাও থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। পলিথিন দিয়ে কোন ভাবে নাতিসহ থাকি। ধার-দেন করে হলেও নাতিটাকে স্কুলে দিছং বাহে ! টাকার অভাবে পূজার দিনেও নাতিটাও একটা নতুন কাপড় দিতে পাড়ং নাই। এতিম নাতিটার কেউ নেই। মুই মরলে নাতিটার যে কি হবে বাহে! তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সরকারি পাকা ঘরের প্রত্যাশা করেন অম্বিকা বর্মনী।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মজিবর রহমান বাবু জানান, তিনি সরকারি পাকা ঘর পাওয়ার যোগ্য। তিনি খুব কষ্টে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাকে ইউনিয়ন থেকে সহায়তা করা হয়। এছাড়াও আমি ব্যক্তিগত ভাবেও তাকে সহায়তা করি। তবে তার থাকা ঘরটির অব্যস্থা খুবই করুণ। আমি চেষ্টা করবো তিনি যেন একটা সরকারি পাকা ঘর পায়।

এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, তার পরিবারের পক্ষ থেকে যোগযোগ করলে আমরা সামনের অর্থ বছরে সরকারি পাকা ঘরের বরাদ্দ আসলে তাকে পাকা ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ইউএনও। 

জেবি/ আরএইচ/