নড়িয়ায় প্রাথমিক শিক্ষার বেহাল দশা


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, ১৩ই অক্টোবর ২০২২


নড়িয়ায় প্রাথমিক শিক্ষার বেহাল দশা
educations for naria image

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষায় বেহাল দশা তৈরি হয়েছে। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিতির হার অর্ধেকে নেমে এসেছে। যথাসময়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষকগণের উপস্থিত নিশ্চিত হয়নি এখনো। বিদ্যালয় গুলো নিয়মিত মনিটরিং এর অভাব ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের উদাসীনাতায় এ পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। স্কুলে স্লীপ, রুটিন মেরামত, ক্ষুদ্র মেরামত এর রবাদ্দের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে নানা মহলে। 


অর্থ বছর পেরিয়ে গেলেও ২০২০-২১ অর্থ বছরের বিল ভাউচার করা কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। শিক্ষা অফিসের যোগসাজসে এসব বিদ্যালয়ে কাজ শেষ না করে ভূয়া বিল ভাউচার জমা দিয়ে গত জুন মাসে টাকা উত্তোলণ করেছে প্রধান শিক্ষকগণ। কিন্তু এখানো কাজ করেনি। ১২ অক্টোবর নড়িয়া উপজেলার নশাসন ক্লাস্টারের বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

 

বেলা ১১ টা ৪০ মিনিটে ১৪৪ নং নশাসন মীরকান্দাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা বাহিরে খেলাধুলায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। আর প্রধান শিক্ষক সহকারী শিক্ষিকাদের নিয়ে গল্প করছেন। অফিস রুমে ঢুকে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরে শিক্ষিকারা ছুটে যান ক্লাশ রুমে। ছুটি দেয়া হয় প্রথম শিফটের শিক্ষার্থীদের। সমাবেশ না করেই শুরু করেন দ্বিতীয় শিফটের পাঠদান কার্যক্রম। 


এ বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৫৪জন। উপস্থিত শিক্ষার্থী সর্ম্পকে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মো: আমিনুল ইসলাম হাজিরা খাতা খুলে দেখেন প্রথম শিফটের শিক্ষার্থীদের হাজিরাই নেয়া হয়নি। দ্বিতীয় শিফটের তৃতীয় শ্রেনীতে এক জন শিক্ষার্থীও আসেনি। ৪র্থ শ্রেণীতে ৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্লাশে এসেছে ৭জন আর পঞ্চম শ্রেনীতে ৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ উপস্থিত রয়েছে বলে জানান। স্লীপ, রুটিন মেরামত ও প্রাক-প্রাথমিক মিলিয়ে বিদ্যালয়টিতে ২০২০-২১ অর্থ বছরে একলক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। কিন্তু বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কমলেশ চক্রবর্তির সাথে সমন্বয় না হওয়ায় এখনো বরাদ্দের পুরো টাকা উত্তোলন করতে পারিনি বলে জানান প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম। তাই কাজ এখানো শেষ হয়টি বলে দাবী তার।

 

১১৫ নং মীর কান্দাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ৬৭ জন। প্রধান শিক্ষকসহ ৪ জন শিক্ষক রয়েছে বিদ্যালয়টিতে। প্রথম শিফটের প্রাক- প্রাথমিক শ্রেণীতে ১৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত পাওয়া যায় ৭জন। প্রথম শ্রেনীর ১০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত পাওয়া যায় ৫ জন। দ্বিতীয় শ্রেনীর ১১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত পাওয়া যায় ৪ জন। শিক্ষার্থীদের পাঠ দানের প্রয়োজনীয় উপকরণ চোখে পড়েনি। নামমাত্র একটি মনিটরিং বোর্ড থাকলেও তাতে আপডেট তথ্য নেই। ২০২০-২১ অর্থ বছরে বিদ্যালয়টিতে স্লীপ ক্ষুদ্র মেরামত ও প্রাক-প্রাথমিক মিলিয়ে ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।


১৭ নং একান্দল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৩২জন। এখানো শিক্ষার্থী উপস্থিতির হারা অর্ধেকেরও কম। ১০৭ নং মধ্য নশাসন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণীতে ১৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্লাশে এসেছে ৮ জন। প্রথম শ্রেণীর ১৮ শিক্ষার্থীও মধ্যে ক্লাশে এসেছে ৬ জন। দ্বিতীয় শ্রেণীর ১০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্লাশে এসেছে ৮ জন। তৃতীয় শেনীর ১৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্লাশে এসেছে ৫জন। চতুর্থ শ্রেণীর ১৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্লাশে এসছে ১ জন। পঞ্চম শ্রেণীর ১৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্লাশে এসেছে ৫ জন।

 

১১৪ নং নশাসন মীরকান্দাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, করোনার পর থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি কমে গেছে। শত চেষ্টা করেও উপস্থিত করা যাচ্ছে না। পৌরসভার কিছু স্কুল বাদে সব স্কুলেই ছাত্রছাত্রী উপস্থিতি অর্ধেকের নীচে নেমে গেছে। আমাদের কিছুই করার নেই। তার স্কুলে সমাবেশ না করার কারণ জানাতে চাইলে তিনি বলেন, উপস্থিতি কম তাই সমাবেশ করিনি। ১১৫ নং মীরকান্দাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিনা আক্তার বলেন, আমার স্কুলে টয়লেট ছিলনা। 


আমি এবারের স্লীপ ক্ষুদ্র মেরামতের টাকা দিয়ে স্কুলের টয়লেট নির্মাণ করেছি। যে টাকা বরাদ্দ পেয়েছি আমার খরচ হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশী। ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করি কিন্তু উপস্থিতি বাড়াতে পারছিনা। আমার এক গ্রামে ৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকায় বেশী সমস্যায় পরেছি। 


১৭ নং একান্দল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, আমরা শিক্ষার্থী বাড়াতে চেষ্টার ত্রুটি করি না। কাছাকাছি তিনটি স্কুল থাকায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। 


নড়িয়া উপজেলা সহাকরী শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, স্কুল গুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে আমরা নানা ভাবে কাজ করছি। মা সমাবেশ, মোবাইলে যোগাযোগসহ আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আর সরকারী বরাদ্দের বিষয়ে অভিযোগ উঠলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করবো।


নড়িয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার শাহ ইকবাল মনসুর বলেন, আমরা নিয়মিত স্কুল গুলো পরিদর্শণ করে থাকি। যদি কোন শিক্ষক যথা সময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি না হয় অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আসতে হবে। শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। কেউ অবহেলা করলে কোন ছাড় নেই। 


আরএক্স/