সরিষাবাড়ী হাসপাতালে বাড়ছে দালাল, প্রতারিত হচ্ছে রোগীরা
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২:৩১ পূর্বাহ্ন, ২৫শে অক্টোবর ২০২২
৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এবং তার ভেতরে ডিউটিরত ডাক্তারদের কক্ষের সামনে ফের বেড়েই চলছে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক গুলোর কমিশনখোর দালালদের দৌরাত্ম্য। এসব দালালদের দৌরাত্ম্যে হয়রানি এবং প্রতারণার শিকার হচ্ছে রোগীরা।
সরিষাবাড়ী হাসপাতালে ভিতর গাছের নিচে বিভিন্ন ক্লিনিকগুলোর মালিক কর্মচারীরা ওৎপেতে থাকে। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী এবং রোগীর স্বজনরা এদের প্রধান টার্গেট। অন্যদিকে দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গেলে উল্টো রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সরিষাবাড়ী হাসপাতালের সংঘবদ্ধ দালালরা বেশ চৌকশ।
এখানে বিভিন্ন বিভাগে চার পাঁচজনের দলে বিভক্ত হয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক নারী পুরুষ দালালরা হাসপাতালটি জুঁড়ে আধিপত্ত বিস্তার করে দাপিয়ে বেড়ায় আর তাদের ক্ষমতার এত বেশি দৌরাত্ব তাদের কেউ কিছু বলার ক্ষমতা রাখেনা। শুধু তাই নয় হাসপাতালের ভিতর ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভিতরে প্রবেশ নিষেধ থাকলেও দু একজন ওষধ কোম্পানির প্রতিনিধি সাংবাদিক পরিচয়ে জরুরী বিভাগ ও বহিঃবিভাগে অবস্থান করে এবং ডাক্তারদের দিয়ে তাদের পছন্দমতো কোম্পানির ওষুধ লেখানোর পাশাপাশি রোগীদের প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলে।
গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়,হাসপাতালের আউটডোরে যেসব ডাক্তাররা রোগী দেখেন সেকল ডাক্তারদের কক্ষের সামনে বিভিন্ন দালাল দাঁড়িয়ে থাকে । আর এসব দালালরা স্থানীয় বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোক। যখন কোন রোগী চিকিৎসাসেবার জন্য ডাক্তার দেখাতে আসেন, তখন ওইসব দালালরা রোগীর সাথে ছলে বলে কৌশলে নানা আলাপচারিতা করে তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেন।
তারপর চিকিৎসক যদি রোগ নির্য়নের জন্য কোন পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন তখন তারা রোগীকে তাদের পছন্দমত হাসপাতালের সামনে অবস্থিত প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যান। এর বিনিময়ে তারা বিভিন্ন অংকের কমিশন পান। দালালদের এমন দৌরাত্ম্য শুধু হাসপাতালের ডাক্তারদের কক্ষের সামনেই নয়, এর বাইরে রয়েছে কিছু নারী দালাল। তারা প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরকারি এ হাসপাতালটির টিকেট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। যখন কোন রোগীর রোগ পরীক্ষার কাগজ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তখন নারী দালালরা এগিয়ে গিয়ে তাদেরকে তাদের পছন্দের জায়গায় নিয়ে যায়। এর বিনিময়ে তারাও পান কিছু টাকার কমিশন।
আরো জানা যায়, সরিষাবাড়ী ও প্বার্শবর্তী বিভিন্ন উপজেলাসহ শহরের আশপাশের অনেক রোগীই চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে । সাধারণ মানুষজন কতো কষ্ট করে দুর দুরান্ত থেকে অল্প খরচে সুচিকিৎসা পাওয়ার জন্য সরকারি হাসপাতালে আসলেও দালালদের খপ্পরে পড়ে তাদেরকে সেই বেশি টাকাই খরচ করতে হচ্ছে। জরুরী বিভাগ বর্হিঃ বিভাগসহ সব স্থানেই প্রকাশ্য এসব দালার চক্রের অবাধ বিচরণ রয়েছে।
দালাল বাহিনীর লোকদের টাকা দিলেই মেলে মুহুর্তের মধ্যে টিকিট এমন কি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সিরিয়াল কোনোটা পেতে সমস্যা হয় না। যেখানে যে চিকিৎসা পাওয়ার কথা, তা না পেয়ে দালাদের কাছে প্রতারিত হচ্ছে রোগীরা ।আর এসব দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার যেনো কেউ নেই। হাসপাতালটিতে সাধারণ মানুষ যাতে অল্প খরচে হাসপাতালেই পরীক্ষা করাতে পারেন এবং প্রতারনা বা হয়রানির শিকার না হয়ে যাতে সুচিকিৎসাসেবা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন সেজন্য এসব দালালদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নিকট জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন, জামালপুর জেলা প্রশাসন ও সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং জামালপুর র্যাব ১৪ হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বদরুল হাসান বলেন, দালালরা হাসপাতালের জন্য খুবই সমস্যা। আমরা নিয়মিতভাবে অভিযান চালাই৷ দালাল প্রতিরোধে ভবিষ্যতে অভিযান চলবে৷ দালাল প্রতিরোধে প্রশাসনের কাছে কোন সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি এ প্রতিবেদক মাসুদুর রহমানকে আরো বলেন, প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চাইতে হয় না।
অটোমেটিক সহযোগিতা আসে। আমরা আইন শৃঙ্খলা ও মাসিক মিটিং এ দালাল নিয়ে কথা বলেছি। পুলিশকে আমরা খবর দেই। দালাল প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে সরিষাবাড়ী হাসপাতাল কতৃপক্ষ।কোম্পানির কয়েকজন প্রতিনিধি সাংবাদিক পরিচয়ে রোগীদের থেকে ছবি তোলা ও জরুরী বিভাগের এবং বহিঃবিভাগে অবস্থান বিষয়ে কথা বলা হলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোন অভিযোগ পায়নি। সবাইকে নিষেধ করা হয়েছে অফিস সময়ে ভিতরে না আসতে।
আরএক্স/