পারিবারিক বিরোধে স্কুল ছাত্রীকে উত্যক্ত করার মামলা


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, ১৫ই ডিসেম্বর ২০২২


পারিবারিক বিরোধে স্কুল ছাত্রীকে উত্যক্ত করার মামলা
প্রতীকী ছবি

সম্পর্কে দাদা নাতনি। পুর্ব থেকেই দুই পরিবারে জমি নিয়ে বিরোধ। জমি, মারামারি, নারী নির্যাতন মামলাসহ রয়েছে প্রায় আধা ডজন মামলা। এসব ঘটনার প্রতিশোধ নিতে নিজেদের পরিবারের স্কুল ছাত্রী কিশোরীকে রাস্তায় উত্যক্ত করার মিথ্যা মামলা করে যুবককে খাটানো হয়েছে জেল। পুলিশ বাদী পক্ষের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে মামলা বিবরণের স্থলে উত্যক্ত করার কোন ঘটনা না ঘটা সত্ত্বেও সম্পুর্ণ মিথ্যা চার্জশীট দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি এলাকাবাসীর।


এমন ঘটনাই ঘটেছে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ৬ নন্বর চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া এলাকার মৃত রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মো. রাব্বিল মিয়ার (২৮) সাথে।


বিবাদী নেজামুল হক একই এলাকার বাসিন্দা। ভিক্টিম নেজামুল হকের ১৪ বছরের কিশোরী মেয়ে। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীতে পড়ালেখা করেন।


পুলিশ চার্জশীটে উল্লেখ্য করেন, ভিক্টিম স্কুলে আসা যাওয়ার রাস্তায় প্রায়ই বিরক্ত ও প্রেম নিবেন করতেন। ঘটনার দিন ঘটনার দিন গত ২৯ মার্চ বিকাল ৪ টায় ভিক্টিম স্কুল থেকে ফেরার পথে চর লক্ষীপুর তিন রাস্তার মোড় মিন্টুর ফিসারির পাড় এলাকায় আসতেই রাব্বিল একটি কাগজ ভিক্টিমের শরীরে ছুড়ে মেরে প্রেম নিবেদন করেন। প্রেম না করলে তুলে নেয়ার কথা বলে হাত ধরে টানাটানি করে যৌনপীড়ন করেন। তখন ভিক্টিমের চিৎকারে পাশপাশের লোকজন ছুটে আসলে রাব্বিল পালিয়ে যায়। পরে এই ঘটনার মামলার পর পুলিশ তদন্ত করে চার্জশীট দেন। ওই চার্জশীট প্রকাশিত হলে এলাকায় শুরু হয় সমালোচনা। চার্জশীটে যেখানে ভিক্টিমকে যৌনপীড়ন ও হাত ধরে টানাটানির কথা উল্লেখ্য হয়, সেখানে কোন ঘটনা ঘটেনি বলেও দাবি করেন বিবাদী ও এলাকাবাসী।


বিবাদী রাব্বিল ও তার পরিবার দাবি করেন, বিবাদী নেজামুল হক, তার পরিবারের লোকজনের সাথে পুর্বে জমি, মারামারি ও নারী নির্যাতনসহ ৬ মামলা রয়েছে। এসব মামলার প্রতিশোধ নিতে মিথ্যা উত্যক্ত করার মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা রাব্বিলকে ফাঁসাতে বাদীর পরিবারের লোকজনকে সাক্ষী করা হয়। মামলার সাক্ষী মামলার বাদী নেজামুল হক ও তার স্ত্রী (ভিক্টিমের মা), ভিক্টিমের সহোদর দুই চাচা, সহোদর চাচাতো বোন, একই বাড়ির আরও এক চাচা, এবং দুঃসম্পর্কের এক বোন।


সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নেজামুল হক ও তার পরিবার স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় মামলার বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয়নি। মামলার বিষয়ে সাংবাদিকতের সাথে কথা কথা বলায় স্থানীয় এক নারীকে হুমকি ধামকি দেয়ার অভিয়োগ করেছেন।


ওই নারীর নাম আয়েশা বেগম। তিনি বলেন, আমি শুনছি আমার বাড়ির পাশে নাকি নেজামুল হকের স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে হাত ধরে টানাটানি ও যৌননিপীড়ন করেছে। তবে, রাব্বিলের নামে মামলার হওয়ার পর বিষয়টি জানতে পারছি। আমার বাড়ির পাশে নেজামুল হকের মেয়েকে রাব্বিল হাত ধরে টানাটানি করেছে এমন বিষয় আমি দেখিনি। এমনকি এমন ঘটনা কারোর মুখে শুনিনি। 


এবিষয়ে স্থানীয় রফিকুল ইসলাম নামে একজন বলেন, রাব্বিলের নামে মামলা হওয়ার আনুমানিক ২০ দিন পর শুনছি, রাব্বিল নাকি ওই মেয়ের হাত ধরে টানাটানি ও যৌননিপীড়ন করছে। এর আগে হাত ধরে টানাটানি বা তুলে নেয়ার চেষ্টা করেছে এমন কোন দেখিনি বা শুনিনি। তবে বাদি-বিবাদির পাশে বাড়ি পাশাপাশি। নিজেদের মাঝে কোন পুর্বশত্রুতা থেকেও এমন মামলা হতে পারে বলে দাবি করেন তিনি।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন বলেন, গত কয়েক বছর যাবত আমি তিন রাস্তার মোড়ে দিন রাত সব সময় আমি থাকি। ওই মেয়েকে যৌন নিপীড়ন বা হাত ধরে টানাটানি করার ঘটনা দেখিনি বা এমন কোন ঘটনা ঘটেছে। তাও শুনিনি। কিছুদিন আগে মামলার চার্জশীট প্রকাশিত হলে জানতে পারছি, রাব্বিল নাকি ওই মেয়েকে হাত ধরে টানাটানি করেছে। 


এবিষয়ে রাব্বিলের বড় ভাই নুরুল আমিন বলেন, ওরা আমাকে পিটিয়ে পঙ্গু করে দিয়েছে। এছাড়াও নারী নির্যাতনের একটি মামলা আছে। জমি নিয়ে ৫/৬ টি মামলা আছে। এসব ঘটনা ধামাচাপা দিতেই আমার ছোট ভাই রাব্বিলের নামে যৌননিপীড়নের মামলা দিয়েছে। তবে, মামলায় যেখানে ঘটনাস্থল উল্লেখ্য করা হয়েছে। ওইখানে এমন কোন ঘটনাই ঘটেনি। তাছাড়া, আমি তো আমার ভাইকে ভালোই বলব। আপনারা ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেন, এমন কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা? যারা ওইখানে সবসময় বসে থাকে, তারা এমন কোন ঘটনা ঘটতে দেখেনি। জিজ্ঞাসা করলে লোকজন হাসাহাসি করে।


এবিষয়ে বাদীর ছোট ভাই রুহুল আমিন বলেন, রাব্বিলের সাথে আমাদের জমি বা অন্য কোন পুর্ব বিরোধ নেই। থাকলেও তা আমার চাচার সাথে। তাছাড়া, রাব্বিল আমার ভাতিজীকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে বিরক্ত করত। তার অভবাবকের কাছে অনেকবার বলার পরেও কোন সুরাহা না পেয়ে বাধ্য হয়ে মামলা করতে বাধ্য হয়েছি।


মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) তাইজুল ইসলাম বলেন, যাচাই বাচাই করেই চার্জশীট দেয়া হয়েছে। তবে, আসামী পক্ষের কাছে যদি মনে হয়, চার্জশীটে পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। তাহলে, আসামী আদালতে চার্জশীট বাতিল চেয়ে আবেদন করতে পারবে।


এবিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। তাই, এবিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তবে, পুলিশের কোন পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।