ফুলবাড়ীতে ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন চাষিরা
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২:১২ পূর্বাহ্ন, ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০২৩
উৎপাদন খরচ কম হওয়াসহ স্বল্প পরিশ্রমে বেশি লাভ পাওয়ায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন। উৎপাদন খরচ কম এবং ধানের চেয়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা চাষ এখন উপজেলার অন্যতম প্রধান আবাদি ফসলে পরিণত হয়েছে। চাষিরা বোরো চাষ কমিয়ে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষে মনোনিবেশ করছেন। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এ বছর ভুট্টার বাম্পার ফলনের আশা করছেন উপজেলার ভুট্টা চাষিরা।
ভুট্টা চাষ এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে এবং স্বনির্ভর হতে শুরুকরেছেন স্থানীয় কৃষক। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টা গাছ ও সবুজপাতা উন্নতমানের গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। জ্বালানি হিসেবে ভুট্টা গাছের রয়েছে আলাদা কদর। এ ছাড়া ভুট্টার পাতা, কা-, ছাল কিংবা মোচা কোনোটাই উচ্ছিষ্ট থাকে না।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার পৌর এলাকাসহ এলুয়ারি, আলাদিপুর, কাজিহাল, বেতদীঘি, খয়েরবাড়ী, দৌলতপুর ও শিবনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে ভুট্টা চাষ হচ্ছে।
উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের পাঠকপাড়া, রাজারামপুর, গোপালপুর, কুয়ারপুর, আলাদিপুর ইউনিয়নের রাঙামাটি, বলরামপুর, উত্তর আলাদিপুর, দৌলতপুর ইউনিয়নের পলীপাড়া, হরহররিয়া, খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের অম্রবাড়ী, লালপুর, মহদিপুর, খয়েরবাড়ী, মুক্তারপুর, বেতদীঘি ইউনিয়নের খড়মপুর, চিন্তামন, দামাড়মোড়, সৈয়দপুর গ্রামেও একই চিত্র দেখা গেছে। এ এলাকায় আগাম ভুট্টা রোপণ করায় গাছের উচ্চতা মানুষকে ছাড়িয়ে গেছে। সবুজ পাতায় ছেয়ে গেছে মাঠের পর মাঠ। ভুট্টার ক্ষেতগুলোর পরিচর্যা ও নিড়ানি এবং সেচ কাজসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলায় গত বছর ভুট্টা আবাদ হয়েছিল তিন হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর তিন হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিণ করা হলেও তা ছাড়িয়ে তিন হাজার ৭৯৮ হেক্টরেরও অধিক জমিতে ভুট্টাচাষ করা হচ্ছে। গত ৫ বছরের তুলনায় এ বছর ভুট্টার বেশি আবাদ হচ্ছে।
উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের আদর্শ কৃষক অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক অনিল চন্দ্র সরকার বলেন, ৯৫ দিনের মধ্যে ভুট্টার ফলন পাওয়া সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে চাষ, বীজ, সেচ, সার ও কীটনাশক এবং পরিচর্যা বাবদ খরচ হয় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ফলন হয় ৪০ থেকে ৪৫ মণ। প্রতি মণের বর্তমান বাজার মূল্য এক হাজার ১৫০ থেকে এক হাজার ২৫০ টাকা। এতে লাভ হয় প্রতি বিঘায় ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা।
উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের উত্তর রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক মহিদুল ইসলাম বলেন, বোরো ধান চাষে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হলেও লাভ কম হয়। অথচ ভুট্টা চাষে পরিশ্রম ও উৎপাদন খরচ দুই-ই কম হলেও লাভ বেশি হয়। এ কারণে বোরো আবাদের বদলে ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছেন এ বছর।
কাজিহাল ইউনিয়নের ভুট্টা চাষি হেমন্ত রায় বলেন, যে কোনো ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষই এখন লাভজনক। এবার আড়াই বিঘা জমিতে তিনি ভুট্টা চাষ করেছেন। এরইমধ্যে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে মণপ্রতি ভুট্টা এক হাজার ৩০০ টাকা থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্ষেতের ভুট্টা উঠা পর্যন্ত দাম এ রকম থাকলে আশানুরম্নপ লাভ হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল। অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। রোগ বালাইয়ের উপদ্রব কম, স্বল্প খরচে, কম সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় উপজেলার কৃষকরা ভুট্টাচাষে আগ্রহী হচ্ছেন। চলতি মৌসুমে ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
আরএক্স/