১১ শ বছরের পুরনো ঠাকুরগাঁওয়ের গোরকই কূপ


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:১৪ পূর্বাহ্ন, ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০২৩


১১ শ বছরের পুরনো ঠাকুরগাঁওয়ের গোরকই কূপ
গোরকই কূপ

দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ইউনিয়নে অবস্থিত দেশের অন্যতম পুরাকীর্তি গোরক্ষনাথ মন্দির। এ মন্দির ও মন্দিরের কূপটি অলৌকিকভাবে বেলে পাথর দিয়ে তৈরি হয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। 


প্রায় ১১শ বছরের পুরোনো এ মন্দির ও বৈচিত্রময় আশ্চর্য কূপ ও এর পানি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে মহা পবিত্র বলে এটি গড়ে উঠেছে তীর্থস্থান হিসেবে । এছাড়াও এখানে প্রতিবছর ফালগুনের শিব চতুর্দশী তিথীতে পূণ্য স্নানের জন্য আগমন ঘটে অসংখ্য পূণ্যার্থীর।


কথিত আছে, গুপ্ত যুগ থেকে সেন যুগের মধ্যেই অর্থাৎ ৯২০ খ্রিস্টাব্দের সময় এই কূপ ও মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল । সুত্রমতে গুরু গোরাক্ষ নাথের নামানুসারে কুপের এবং স্থানের নাম করণ করা হয়েছে গোরকই। আর এই ‘গরকই’কে ঘিরে পূণ্য স্নান বা বারুনীর মেলা হিসেবে আজও সমানভাবে সমাদৃত।


তাই প্রতিবছর ফাল্গুনের শিব চতুর্দশী তিথীতে পাঁচদিন ব্যাপী আয়োজন করা হয় ‘গোরক্ষনাথ বারণী’ মেলার। আর এই কূপে স্নান করতে ও শিব চতুর্দশী তিথীতে পূঁজা উপলক্ষে মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সমাগম হয় নানা বয়সী লাখো নারী-পুরুষের ।


রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ হতে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত ‘গোরকই’ নামক স্থানে গোরক্ষনাথ মন্দির। এখানে গোরক্ষনাথ মন্দির ছাড়াও আছে নাথ আশ্রম। গোরক্ষনাথ মন্দির স্থানীয়ভাবে গোরকই মন্দির নামেও পরিচিত। মন্দির চত্বরে আছে মোট ৫টি মন্দির। এছাড়াও আছে ৩টি শিবমন্দির ও ১টি কালি মন্দির। নাথ মন্দিরটি চত্বরের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। মন্দিরের পিছনে রয়েছে কূপটি। পাথর দিয়ে তৈরী একটি ছোট চৌবাচ্চার মাঝে নীচু স্থানে ঐ কূপটি অবস্থিত। কূপটি বড় বড় কালো পাথরের খন্ড দ্বারা নির্মিত। 


এ কূপের একেবারে নীচু অংশটুকু পর্যন্ত পাথর দিয়ে বাঁধানো। উত্তারাঞ্চল সহ দেশের লাখ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বি নারী-পুরুষ পাপ-মোচনের জন্য এই কূপের পানিতে  স্নান করার উদ্দেশ্যে এখানে আসেন। কূপটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর পানি দিয়ে লাখ লাখ মানুষ স্নান করার পরেও কূপের পানি এক ইঞ্চিও কমে না।


মন্দিরের উত্তরে আছে একটি পান্থশালা। পান্থশালার দরজায় একটি ফলক বা গ্রানাইট শিলালিপি ছিল যা বর্তমানে ঢাকা জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও এ মন্দিরে গ্রানাইট পাথরের বহুল ব্যবহার দেখা যায়।

 

মন্দিরটির সম্পর্কে আরও কথিত আছে, গোরক্ষনাথ ছিলেন নাথ পন্থীদের ধর্মীয় নেতা খীননাথের শিষ্য। নবম-দশম শতাব্দির মধ্য ভাগে গোরক্ষনাথের আবির্ভাব ঘটে। তিনি ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এখানে মন্দির স্থাপন করেন। অলৌকিক ওই কূপটি সেই সময়ে নির্মিত বলে প্রবীনদের ধারনা। আবার অনেকের মতে, গোরক্ষনাথ কোন ব্যক্তির নাম নয়, এটি একটি উপাধি মাত্র। গোরক্ষনাথ অথবা উপাধি চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্যই এই মন্দির ও আশ্রম নির্মাণ করা হয়।


মেলায় আগত দর্শনার্থীরা জানান, ‘এই মেলা এখানে প্রতিবছর করা হয়। মেলায় অনেক দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসে। যারা এখানে আসেন তারা মূলত নানা মনবাসনা নিয়ে আসেন। যেমন কারও সন্তান না হলেও এখানে এসে প্রথমে এই কূপে স্নান করে শিবমন্দিরে পূঁজা করলে অনেকের সেই মনবাসনা পুরন হয়। গঙ্গার জল হিন্দু ধর্মে যেমন পবিত্র তেমনি এই কূপের পানিও তাদের কাছে পবিত্র। কেউ আবার শুদ্ধিকরণের জন্য শরীরে পানি ছিটিয়ে দেয় এবং অনেকে সে পানি বোতলে করে নিয়েও যান।


মেলা আয়োজক কমিটি ও মন্দিরের সভাপতি কাশীনাথ বর্মন বলেন, ‘আমি শুনেছি ৯২০ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু দেশ থেকে এই গোরক্ষনাথ ও তার বন্ধু নাসির উদ্দিন নামে দুই জন এখানে আসেন। গোরক্ষনাথ এখানে বসবাস শুরু করেন ও নেকমরদে নাসির উদ্দিন। তখনই এখানে অলৌকিকভাবে মন্দির ও কূপটি নির্মিত হয়। তবে কিছু মন্দির আমরা সংষ্কার করে নির্মাণ করেছি। এই কূপটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল লাখ লাখ মানুষ এখানে গোসল করলেও এর পানি এক ফোটাও কমে না।’


মেলা আয়োজক কমিটি ও মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক অনন্ত কুমার বর্মন জানান, ‘১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে এই মেলা স্থানীয়দের সহযোগিতায় হয়ে আসছে। আশা করছি এবার ৫ দিনের মেলায় অন্তত ৯ লাখ মানুষের সমাগম হবে।,