কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গরুর গাড়ি


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গরুর গাড়ি

‘গ্রামের পথে পথে গরুর গাড়ি, বউ চলেছে শ্বশুর বাড়ি’ এ কবিতার লাইনটি এক সময় বাস্তব ছিল। কিন্তু এমন দৃশ্য এখন অবাস্তব ব্যাপার। লক্ষীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার গ্রামে-গঞ্জে এখন এমন গরুর গাড়ির দেখা পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। 

আজ থেকে ৩০ থেকে ৩৫ বছর আগেও গরুর গাড়ী ছাড়া বিয়ের কনে ও বর যাত্রীদের যাতায়াত কল্পনাই করা যেত না। বিয়েতে গরুর গাড়ীর ব্যবহার ছিল গ্রামবাংলার একটি অন্যতম ঐতিহ্য। এছাড়াও গ্রামাঞ্চলের এক এলাকা হতে অন্য এলাকার হাট-বাজারে পণ্য বহনে একমাত্র ভরসা ছিল গরুর গাড়ী। ফসল ঘরে তোলা বা বাজার জাতকরণ থেকে জমির ধান কাটার পর সেই ধান, পাট ও অন্যান্য কৃষী পন্য সরবরাহ হত গরুর গাড়ীতে। তাছাড়া একসময়ে গ্রামবাংলায় কৃষকের ঘরে ঘরে শোভা পেত নানান ডিজাইনের গরুর গাড়ী। সেই সময়ে গরুর গাড়ী অন্যদের মালামাল পরিববণের জন্য ভাড়াও দিয়ে থাকত অনেকেই বলে জানা যায়।

পহেলা বৈশাখ সহ সকল অনুষ্ঠানে পরিবার পরিজন নিয়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে মেলা দেখতে যাওয়া গরুর গাড়িতে বসে। গাড়িওয়ালার ভাটিয়ালী গান শোনা সে যেন এক অন্যরকম অনুভূতি। কিন্তু বর্তমান রামগঞ্জ উপজেলার গ্রাম-বাংলা থেকে গরুর গাড়ি হারিয়ে যাওয়ায় এসব অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বর্তমান যুগের ছেলেমেয়েরা। আধুনিকতার প্রবাহে ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেক কিছু আমরা হারাচ্ছি। আমাদের জীবন থেকে হারাচ্ছে এ রকম নানা ঐতিহ্য। হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি “দুই গরু এক মানুষের দ্বারা চালিত কাঠ বাশেঁর উপকরনে বিশেষ তৈরি গরুর গাড়ি।”

এমন এক সময় ছিল যখন রামগঞ্জ উপজেলার গ্রাম-গঞ্জের মানুষদের একমাত্র বাহন ছিল গরুর গাড়ি। কৃষকসহ সর্ব শ্রেণির মানুষ এখন যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্য এ সকল যান্ত্রিক পরিবহণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ কারণে শহরের ছেলে-মেয়েরা দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের অনেক ছেলে-মেয়েরাও গরুর গাড়ি শব্দটির সাথে পরিচিত নয়। বেশির ভাগ রাস্তাঘাট পাকা হওয়ার কারণে গরুর গাড়ি আর চালানো সম্ভব হয় না। তবে আগামী দিনে গ্রামাঞ্চালের রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন হলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই গরুর গাড়িগুলো আগামী প্রজন্ম হয়তো আর দেখতে পাবে না। এমন এক সময় আসবে যখন আর কোন গরুর গাড়ি অবশিষ্ট থাকবে না। গরুর গাড়ি শুধুই ইতিহাস হয়ে থাকবে।

মানুষ এক সময় যা কল্পনা করেনি তাই এখন পাচ্ছে হাতের কাছেই। ইট-পাথরের মত মানুষও হয়ে পড়েছে যান্ত্রিক, মানুষ তার নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। তারই ধারাবাহিকতায় এক সময়ের ব্যাপক জনপ্রিয় গ্রাম-বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য এবং যোগাযোগ ও মালামাল বহনের প্রধান বাহন গরুর গাড়ি কালের বিবর্তনে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। গরুর গাড়ির স্থান দখল করে নিয়েছে ভ্যান, বাস, অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, ভটভটি ইত্যাদি।

রামগঞ্জ উপজেলার হাজ্বী মোঃ নজরুল ইসলাম জনবাণীকে বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের কেউ গরুর গাড়ি চিনবে না। গরুর গাড়ি ঐতিহ্যেরই একটা অংশ। ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেক কিছু আমরা হারাচ্ছি। কালের গতি ধারায় উন্নয়নের গতি থেমে নেই। আমাদের জীবন থেকে হারাচ্ছে এ রকম নানান ধরণের ঐতিহ্য। বর্তমান গ্রাম বাংলা থেকে গরুর গাড়ি হারিয়ে যাওয়ায় এ সব অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বর্তমান যুগের ছেলে ও মেয়েরা। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এই গরুর গাড়ি একদিন বইয়ের পাতায় জায়গা করে নেবে।

এসএ/