সরব হয়ে উঠেছে চা কারখানা
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন, ৮ই মে ২০২৩
*** চলতি মৌসুমে ৩২০ কোটি টাকা আয়ের আশা
*** পঞ্চগড়ে চায়ের নিলাম কেন্দ্র চালুর আশা
দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ চা অঞ্চল পঞ্চগড়ে চা চাষীরা এখনো তাদের ন্যায্য দর পাচ্ছেনা। এখানকার চা চাষিরা বলছেন নিলাম কেন্দ্র না থাকায় তারা উৎপাদিত চায়ের প্রতিযোগিতামূলক দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডে কর্মকর্তারা বলছে, চলতি বছরের জুনে পঞ্চগড়ে চায়ের নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ার কথা।
উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে ২০০০ সালে ৪৫৪ একর পতিত সমতল ভূমিতে চা চাষের মধ্য দিয়ে দেশে সে সময় তৃতীয় চা অঞ্চল হিসেবে পঞ্চগড়ে চা চাষের সূচনা হয়।
এদিকে চা চাষের পরিধি বেড়ে ১২ হাজার ৭৯ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন। তবে পঞ্চগড় জেলাতে চা চাষ হয়েছে ১০ হাজার ২৩৯ একর জমি।
উত্তরাঞ্চলের বড় ৩০টি চা বাগান, মাঝারি ও ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান রয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার। চা বাগানে প্রায় ২০ হাজার মানুষ চাপাতা আহরণে কাজ করছে।
এদিকে গত বছর এসব চা বাগান থেকে ৯ কোটি ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৩২ কেজি চা পাতা প্রক্রিয়াজাত করে প্রায় ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮১ হাজার ৯৩৮ কেজি চা উৎপাদিত হয়।
চলতি বছর প্রায় সাড়ে ৯ কোটি কেজি চা পাতা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে স্থানীয় চা বোর্ড, যা ২৫ টি চা কারখানায় প্রক্রিয়াকরণ করে প্রায় দুই কোটি কেজি চা তৈরি হবে। এতে ৩২০ কোটি টাকায় আয়ের আশা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আগের বছরে চা বিক্রি করে আয় হয়েছে ২৮০ কোটি টাকা বলে জানা পঞ্চগড় চা বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
চা গাছ পরিচর্যার কারণে দুমাস চা পাতা তোলা বন্ধ থাকার পর মার্চে শুরু চায়ের নতুন মৌসুম। এখন সরব হয়ে উঠেছে পঞ্চগড়ের কারখানাগুলো।
মৈত্রি টি কোম্পানীর ম্যানেজার মোজাহিদুল হান্নান নিপুণ জানান, ডিসেম্বর পর্যন্ত কারখানা চলবে। মার্চের তারিখ কারখানা চালু করা হয়েছে। তারা কাঁচা চা পাতা ১৭ টাকা কেজি দরে কিনছেন।
চা বাগানে কর্মরত শ্রমিক রহিমা জানান, চা বাগানে কাজ করে প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ কেজি চাপাতা তোলা যায়। ৩ টাকা কেজি দরে চাপাতা তোলার কাজ করেন তারা। এতে তিনশত থেকে চারশত টাকা প্রতিদিন আয় হয়। চায়ের দাম পাওয়া যাচ্ছেনা। আমরা খুব দ্রুত নিলাম কেন্দ্র চালুর বিষয়ে আশাবাদি।
পঞ্চগড়ে চা চাষি কাওসার হামিদ সজীব জানান, সিন্ডিকেটের কারণে আমরা কাঁচা চা পাতার দাম পাচ্ছিনা। বর্তমান রেট প্রতি কেজি ১৭ টাকা। ১০০ কেজিতে ১০ কেজি কেটে নিচ্ছে কোম্পানী গুলি। নিলাম কেন্দ্র গ্রামে হওয়ায় এখন হয়তো দামে নেতিবাচক প্রভাব আছে। নিলাম কেন্দ্র চালু হলে হয়তো কিছুটা সুবিধা আসতে পারে।
চা ব্যবসায়ী আলম জানান বলেন, পঞ্চগড়ের উৎপাদিত চা চট্টগ্রাম নিলাম কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করতে গিয়ে বাড়তি ব্যয় করতে হয়। আর এখানে উৎপাদিত চা জেলায়ই নিলাম হলে আমাদের ব্যয় কমে আসবে। পাশাপাশি দামও পাবে চাষিরা।
এদিকে বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন জানান, বছরের ৪ জুন চা দিবস উদযাপন হবে ওই দিনই চায়ের নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধনের কথা রয়েছে এমন আলাপ আলোচনা চলছে। তবে এখনো চিঠি পাইনি। পঞ্চগড়ে চায়ের নিলাম কেন্দ্র তৈরি হলে জেলার চা কারখানাগুলোতে প্রতিযোগিতামূলক চায়ের বাজার যেমন তৈরি হবে, তেমনি চা চাষিরা তাদের চা বাগানে উৎপাদিত চায়ের সঠিক দাম পাবে।
জেবি/ আরএইচ/