ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মায়ের মানববন্ধন
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
সুনামগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা রুপিয়া বেগম। তার একমাত্র ছেলে মেহেদী হাসান রাব্বী (২২) খুন হয়েছেন তিন বছর আগে। ছেলে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে একা একাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে রুপিয়া বেগমের আইনজীবী অ্যাড. মল্লিক মো. মইন উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রুফিয়া বেগম (৪৫) সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের পূর্ব নোয়ারাই গ্রামের বাসিন্দা।
এদিকে কয়েক মাস ধরে ছেলে হত্যার বিচার কাজে যখনই তিনি সুনামগঞ্জের আদালতে আসেন, তখনই আদালত প্রাঙ্গণের রাস্তার পাশে ‘রাব্বি হত্যার বিচার চাই, মানববন্ধন’ লেখা একটি ব্যানার পিছনে টানিয়ে বসেন। প্রতিবারের ন্যায় এবারও তিনি বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) একাই মানববন্ধন করেছেন। ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে আহাজারি করেন, দুই হাত তুলে হাউমাউ করে কাঁদেন। আদালত প্রাঙ্গণের লোকজন রুপিয়া বেগমের কান্নার দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়ান ও ঘটনার বিষয়বস্তু জানতে চান। অনেকেই তাকে শান্তনা দেন।
মামলার আইনজীবী ও রুপিয়া বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রুপিয়া বেগমের ছেলে রাব্বীর বয়স যখন দুই বছর তখন তার স্বামী আলমগীর হোসেন মারা যান। এরপর তিনিই রাব্বীকে অনেক কষ্ট করে বড় করেন। ছেলে কিছুটা বড় হলে একটি দোকানে কাজ করে সংসারের হাল ধরেন। ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই বিকেলে ছাতক পৌর শহরের সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলাকার বাজারের একটি দোকানে বসে ছিলেন রাব্বী। এ সময় কিছু লোক সেখানে তার ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রাব্বী গুরুতর আহত হন। পরে তাকে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে তিনি মারা যান।
এদিকে ঘটনার তিন দিন পর ২৬ জুলাই রুপিয়া বেগম বাদী হয়ে ১৭ জনের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ বিভিন্ন সময়ে কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। এরপর আসামিদের কেউ কেউ উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। বর্তমানে আসামিদের মধ্যে শুধু লিয়াকত আলী কারাগারে আটক আছেন।
এ ছাড়া একজন আসামি পলাতক আছেন। পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে ১৭ জন আসামির মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। অবশ্য অভিযোগ থেকে বাদপড়া আসামিদের আবার যুক্ত করতে রুপিয়া বেগমের আইনজীবী আদালতে আবেদন করেছেন।
রুপিয়া বেগম জানান, তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। একমাত্র ছেলে হত্যার বিচারের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল, পুলিশের আইজিপিসহ বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেছেন। অনেকের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন।
রুপিয়া বেগম বলেন, আমি আমার একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছি। আমার বুক খালি হয়ে গেছে। আমার ছেলেকে যারা খুন করেছে। আমি তাদের সবার ফাঁসি চাই।
রুপিয়া বেগমের আইনজীবী অ্যাড. মল্লিক মো. মইন উদ্দিন বললেন, রাব্বী হত্যা মামলার আইনি প্রক্রিয়া চলমান আছে। আমরা অভিযোগপত্র থেকে বাদপড়া আসামিদের আবার যুক্ত করতে আদালতে আবেদন করেছি। এই আবেদন শুনানির পর্যায়ে আছে। আমাদের আশা আদালত আবেদনটি বিবেচনা করবেন।
এসএ/