ময়মনসিংহে ভূমি-সহকারির ঘুষ লেনদেনের ভিডিও ভাইরাল


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:৪২ অপরাহ্ন, ১২ই জুলাই ২০২৩


ময়মনসিংহে ভূমি-সহকারির ঘুষ লেনদেনের ভিডিও ভাইরাল
ভাইরাল ভিডিও থেকে নেওয়া

ঘুষ, দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ১৩ নং দত্তের বাজার ইউনিয়নের ভূমি সহকারি মো: মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হলেও নেই ব্যবস্থা। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ওই ভূমি সহকারি।


সম্প্রতি ওই ভূমি সহকারির ঘুষ লেনদেনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহলে। এনিয়ে ক্ষোভ অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।  


ওই ভিডিওতে ভূমি সহকারি মিজানুর রহমান এক ভূমি মালিককে বলেন, ‘পাঁচ হাজার টাকায় জমির খারিজ হবে না। এভাবে কাজ করলে আমাকে ভিক্ষা করে খেতে হবে।’ এরপর ওই টাকা ভূমি মালিককে ফেরত দিয়ে দিতে দেখা যায় ভিডিওতে।    


তবে বিষয়টিকে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন ভূমি সহকারি মো: মিজানুর রহমান।


এর আগে গত বছরের মার্চে বিতর্কিত এই ভূমি সহকারির বিরুদ্ধে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নে দায়িত্ব পালনকালে অনিয়ম ও র্দুনীতির অভিযোগ উঠে। এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসি তার বিরুদ্ধে ঝাড়– মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করলে তাকে গফরগাঁও উপজেলায় বদলী করা হয় বলেও জানান ভুক্তভোগীরা।    


তারা আরও জানায়, ঈশ্বরগঞ্জ থেকে বিতর্কিত কর্মকান্ডে মিজানুর রহমান বদলী হয়ে গফরগাঁও দত্তেরবাজার ইউনিয়নে যোগদান করেই জড়িয়ে পড়েন একই ধরনের অনিয়মে। এতে ক্ষুব্ধ নিজাম উদ্দিন, জুয়েল আকন্দসহ আরও অনেকেই গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে গত বছরের ২ আগষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই সময় জেলা প্রশাসক অভিযোগটি আমলে নিলে ঘটনাটি তদন্ত করেন সংশ্লিষ্ট সহকারি কমিশনার জান্নাতুল মাওয়া।      


কিন্তু ওই তদন্তে ভুক্তভোগীদের স্বাক্ষ্য গ্রহন করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন হয়নি বলে জানান অভিযোগকারিরা।


তবে তদন্ত কর্মকর্তা জান্নাতুল মাওয়া জানান, অনেক আগেই এই তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন।    


এরই মাঝে এই ভূমি সহকারির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ এনে দ্বিতীয় দফায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় আনোয়ার হোসেন। কিন্তু ওই অভিযোগে কোন তদন্ত বা ব্যবস্থা গ্রহন হয়নি বলে জানান এই অভিযোগকারি।    


ভুক্তভোগীরা আরও জানায়, দুই দফা অভিযোগে কোন ব্যবস্থা না হওয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এডঃ মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের সুপারিশকৃত অপর একটি অভিযোগ চলতি বছরের ১১ মে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে দায়ের করেন এলাকাবাসি।  


এরপর গত ২২ মে ওই অভিযোগটি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট সিনিয়র সহকারি কমিশনার ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ভূমি সহকারি মিজানুর রহমানকে অন্যত্র বদলী জন্য জেলা প্রশাসনে চিঠি দেন। সেই সঙ্গে অভিযোগটি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন এই কর্মকর্তা।  


ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারি কমিশনার ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসনে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ অবস্থা তারা বলতে পারবেন।’    


কিন্তু র্দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ওই ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখনো কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি বলেও জানান অভিযোগকারি মঈন উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাস, সেলিমসহ আরও অনেকেই।    


ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি এবং রাজস্ব শাখার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো: মেহেদী হাসান বলেন, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে অভিযোগটি তদন্তের জন্য দ্রুত তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। সেই সঙ্গে পূর্বের তদন্ত প্রতিবেদনটি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও ভিডিও ভাইরালেরও বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসক মহোদয় নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।  


তবে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ১৩ নং দত্তের বাজার ইউনিয়নের ভূমি সহকারি মো: মিজানুর রহমান।


তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করা হয়েছে। মূলত আমি সঠিক কাগজ ছাড়া ভূমি নামজারির কোন কাজ করি না। এতে ক্ষুব্ধ একটি দালাল চক্র আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব অভিযোগ দায়ের করেছে। কারণ আমি দত্তের বাজার ইউনিয়নে যোগদানের আগে এই ভূমি অফিসটি দালাল বেষ্টিত ছিল। আমি তাদের সরিয়ে দেওয়ায় তারা আমার ওপর ক্ষুব্ধ। তিনি আরও বলেন, আমি এই অফিসে যোগদান করার পর গত এক বছরে জমি খাজনা আদায় বাবদ সাড়ে পনের লক্ষ টাকা করে সরকারের রাজস্ব খাতে জমা দিয়েছি। এর আগের বছর এই অফিসের রাজস্ব ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এ সময় ভাইরাল ভিডিও প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভিডিওটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। আমি ওই টাকা ফেরত দিয়েছি, নেইনি। এ সময় ভূমির খাজনা আদায়ের প্রসঙ্গে বলেছি- আমরা কি ভিক্ষা করে খাব ? 


আরএক্স/