শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নাচানাচি ভাইরালে মাদরাসা সুপারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:২০ অপরাহ্ন, ৩০শে আগস্ট ২০২৩


শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নাচানাচি ভাইরালে মাদরাসা সুপারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
ছবি: জনবাণী

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার  চর জামিরা নবাব আলী দাখিল মাদরাসার শিক্ষা সফরের নৌকা ভ্রমণে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নাচানাচি ভাইরালের ঘটনায় মাদরাসা সুপার ইদ্রিস আলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।  


বুধবার (৩০ আগস্ট)  দুপুর ১২ টায় সরিষাবড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: মোজাম্মেল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

  

জানা যায়, ধর্মীয় নীতি নৈতিকতার অনুশাসনে পরকালীন ভয়-ভীতি মনে ধারণ করে সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার অন্যতম প্রতিষ্ঠান হলো মাদ্রাসা। চর জামিরা নবাব আলী দাখিল মাদরাসা ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। 


প্রশাসনকে অবগত না করে মাদরাসা সুপার ইদ্রিস আলীর নির্দেশে শিক্ষা সফরের আয়োজনে করে কতৃপক্ষ।  তারপর মাদরাসার শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম সহ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারীরা নৌকা ভ্রমনে না গেলে ক্লাস এবং ফরম পুরন করতে দিবে না বলে শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করে। 


সোমবার (২৮ আগস্ট) সাতপোয়া ইউনিয়নের জামিরা এলাকার পাচকাদা বিল থেকে সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতু ইকো পার্কের উদ্দেশ্য  শিক্ষা সফর পালনের লক্ষ্যে নৌকা ভ্রমণের যাত্রা শুরু হয়। আর এই নৌকা ভ্রমণে বাদ্যযন্ত্র ও ডিজে  গানের পাশাপাশি কয়েকজন শিক্ষক ও মাদরাসার ছাত্রীদের নাচানাচির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক, টিকটকে ছড়িয়ে পড়ে । 


ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে গানের তালে তালে উদ্দাম নাচে মত্ত গণিত বিভাগের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম ,ইংরেজী শিক্ষক আক্তারুজ্জামান ,শরীর চর্চা শিক্ষক বিল্লাল হোসেন , অফিস সহকারী (কেরানী) জহুরুল ইসলামসহ  কয়েকজন শিক্ষক । 


আর এতে হাত তালি দিচ্ছেন মাদরাসার ছাত্রীরা। মাদরাসা ছাত্রীদের বোরখা পড়ার নিয়ম থাকলেও মাদরাসা কোন নিয়ম নীতির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে না।  বোরখার জায়গায় ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের ড্রেস পড়ে পাঠদান নেয়।নাচানাচির কয়েকটি ভিডিও ভাইরালের পর থেকেই এ উপজেলার ২ সহস্রাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারীরা পোস্ট দিয়ে প্রতিবাদ জানায়। 


এর পর থেকেই অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ বিষয়ে সুষ্টু তদন্তের মাধ্যমে সুপার ইদ্রিস আলী ও নাচানাচি করা ৪ শিক্ষকদের বহিষ্কারের দাবী সহ আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান সচেতন মহল ও এলাকাবাসী।  


এদিকে বিষয়টি নিয়ে জামালপুর জেলা প্রশাসক ও সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসলে মঙ্গলবার ( ২৯ আগস্ট) বাদ্যযন্ত্র নিয়ে কতিপয় শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের  বাদ্যযন্ত্র সহকারে অশালীন নৃত্য প্রশাসনের দৃষ্টি গোচর হলে চর জামিরা নবাব আলী দাখিল মাদরাসা সুপার ইদ্রিস আলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোজাম্মেল হক।  


তবে মাদরাসায় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সালাম ফকির অভিযোগ করে বলেন,  আমার মেয়ে এ মাদরাসায় পড়ালেখা করে। আমার মেয়েকে শিক্ষকেরা বলেছে পিংনিকে গেলেও টাকা দিতে হবে না গেলেও টাকা দিতে হবে ৫০০ । আমার মেয়েকে আমি যাইতে দেয়নি। আমার জেঠাত ভাইয়ের ২ টা মেয়েও এ মাদরাসায় লেখাপড়া করে। তারা পিংনিকে যাইতে চাইনি বলে মাদরাসার জাহাঙ্গীর মাষ্টার তাদের বলেছে তোমরা পিংনিকে না গেলে আমি তোমাদের আর ক্লাসই নিব না। এবং ফরম পুরণ করতে দিব না। 


নাচানাচির ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে চর জামিরা নবাব আলী দাখিল মাদরাসার সুপার ইদ্রিস আলী বলেন,মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। নোটিশের প্রেক্ষিতে আমি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে বসেছি। নৌকা ভ্রমণে নাচানাচি করা ৪ শিক্ষকের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং আমি আজই প্রতিবেদন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার স্যারের কাছে পাঠাব। 


কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোজাম্মেল হক বলেন,শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা আছে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা সফর বা পিংনিকে গেলে উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়ে অনুমতি নিয়ে যেতে হবে। নৌকা ভ্রমণের বিষয়টি আমি বা ইউএনও মহোদয়ে জানে না। ভিডিওটা আমি এবং উপজেলা প্রশাসন দেখেছেন। দেখার পরেই তাতক্ষনিক শোকজ এবং আজকের মধ্যেই জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যে সমস্ত শিক্ষক নাচানাচি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে মাদরাসা কতৃপক্ষ। আইনগত ভাবে এটা এডিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই। এই ভিডিওটা হলো প্রমাণ। আগে দেখি তারা কি ব্যবস্থা নেয় এবং কি জবাব দেয়। জবাবের ওপর নির্ভর করতেছে পরবর্তী পদক্ষেপ। 


এ বিষয়ে জামালপুর জেলা প্রশাসক মো: ইমরান আহমেদ বুধবার দুপুরে মুঠোফোনে জানান , ঘটনা শুনার সাথে সাথেই আমরা সত্যতা যাচাই সহ মাদ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে শোকজ করার জন্য বলেছি।সংশ্লিষ্ঠ শিক্ষকগণকে শোকজ করা হয়েছে । মাদরাসা ম‌্যানেজিং কমিটির সভা চলছে এবং সেই সভায় যে ‍সিদ্ধান্ত হয়,আশা করা যায় যেহেতু এটা শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ, ওনারা যে সিদ্ধান্ত দিবেন সিদ্ধান্তের বিষয়গুলা আমরা মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে এবং অধিদপ্তরে প্রেরণ করব অবহিত ও পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।


আরএক্স/