সাঁইজির আখড়াবাড়িতে বসছে ভবের হাট


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৫৬ অপরাহ্ন, ১৬ই অক্টোবর ২০২৩


সাঁইজির আখড়াবাড়িতে বসছে ভবের হাট
লালনভক্ত অনুরাগীরা। ছবি: জনবাণী

তিরোধান দিবস উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী শুরু হবে লালন মেলা। আসতে শুরু করেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্ত-অনুসারী, বাউল, সাধু আর বিদেশি লালনভক্ত অনুরাগীরা।


মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৩ তম তিরোধান দিবস। এ উপলক্ষে আয়োজিত লালন মেলায় গত কয়েকদিন ধরেই কুষ্টিয়ার ছেঁউরিয়ার লালন আখড়াবাড়িতে হাজার হাজার ভক্ত-অনুসারীরা দূরদূরান্ত থেকে আসতে শুরু করেছেন। কালি নদীর পাড় ঘেঁষে লালন মাঠে প্রায় কয়েকশো অস্থায়ী থাকার জায়গা ও দোকান বসেছে।


মরমী সাধক ফকির লালন শাহ কুষ্টিয়ার শহরতলি কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে ১৮৯০ সালের ১ কার্তিক মারা যান। এখানে পরবর্তীতে লালন মেলার আয়োজন শুরু করে লালন একাডেমি।


লালনের আখড়াবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ফকির লালন শাহের ১৩৩ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে হাজারো ভক্ত-অনুসারীরা দূরদূরান্ত থেকে আসতে শুরু করেছেন ছেঁউড়িয়ায় লালন শাহ আখড়াবাড়িতে। কালি নদীর পাড় ঘেঁষে লালন মাঠে কয়েকশো অস্থায়ী থাকা-বসার জায়গা ও দোকান বসেছে। কেউ সঙ্গীদের সাথে নিয়ে  গান গাইছেন, কেউ রান্না করছেন, অনেকেই গাজা সেবন করছেন। তারা যশোর, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, চাঁদপুর, মাদারীপুর সহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে ভক্তরা জড়ো হচ্ছেন ছেঁউড়িয়ায়।


ঘুড়তে আসা ফকির, সোহাগ মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমি গত চারদিন আগে এখানে এসেছি। আমি লালন ভক্ত মানুষ। লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবস উপলক্ষে আমি এখানে এসেছি। আমার মতো হাজারো  ভক্ত-অনুসারীরা এখানে এসেছেন। বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিনই লোকজন আসছে। লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়ে থাকে লালন মেলায়। বহু বছর আগে থেকে আমি এখানে আসি। এখানে আসলে খুব ভালো লাগে।


আরেক ভক্ত সাধু মাসুদ রানা বলেন, কয়েকদিন আগে রাজশাহী থেকে ছেঁউড়িয়ায় এসেছি। আমরা নিজেরা এখানে রান্না ও থাকার ব্যবস্থা করেছি। লালন ফকিরের তিরোধান দিবস উপলক্ষে আমরা এসেছি। লালন মেলা শেষে আমরা এখান থেকে চলে যাবো। এখানে আসতে পেরে খুব ভাল্লাগছে।


স্থানীয়রা বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লালন ভক্তরা এসে জড়ো হচ্ছেন।। তারা তিরোধান দিবস উপলক্ষে এখানে আসছেন। প্রতি বছরই লালন মেলায় দূর দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ আসেন।


তিন দিনব্যাপী লালন মেলা অনুষ্ঠানে প্রতিদিনই  আলোচনা সভা শেষে মঞ্চে শুরু হবে লালন সঙ্গীত। যা গাইবেন লালন একাডেমির শিল্পীরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাউল শিল্পী ও ভক্তরা। এমন আয়োজনকে ঘিড়ে মাজার প্রাঙ্গণ ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে বর্ণিল পরিবেশের সৃষ্টি করছে একাডেমি কর্তৃপক্ষ।


লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সদস্য তাইজাল আলী খান বলেন, তিরোধান দিবস উপলক্ষে লালন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আগামী ১৭ অক্টোবর  থেকে তিনদিন ব্যাপী লালন মেলা হবে। কয়েকদিন আগে থেকেই দূরদূরান্ত থেকে ছেঁউড়িয়ায় আসতে শুরু করেছেন ভক্তরা অনুসারীরা। অন্যান্য বারের মতো এবারও হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটতে পারে।


এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মোঃ এহেতেশাম রেজার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।


কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) পলাশ কান্তি নাথ  বলেন, লালন মেলা উপলক্ষে মাজার প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন আছে। মাজার এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে।


প্রসঙ্গত, ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মৃত্যুর পর থেকে তার স্মরণে লালন একাডেমি ও জেলা প্রশাসন এই মেলা চালিয়ে আসছিল। প্রতিবছর ১লা কার্তিকর্  অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেঁউড়িয়ায় ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবস পালন করা হয়।


তবে এই মেলা ঘিড়ে লালন মাঠসহ আশপাশে ব্যাপক মাদকের ছড়াছড়ি থাকে । বিশেষ করে গাজা সেবনটা প্রচুর বেড়ে যায় । এর ফলে এলাকার পরিবেশ ভীষনভাবে নষ্ট হয়ে থাকে। আর তাই প্রসাশনের কাছে এই মাদকের ছড়াছড়ি কমিয়ে আনার দাবিও জানিয়েছেন এলাকাবাসী।


আরএক্স/