ওসির সামনে সাংবাদিকের হাত পা ভাঙার হুমকি চেয়ারম্যানের


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:৫৮ অপরাহ্ন, ১৬ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪


ওসির সামনে সাংবাদিকের হাত পা ভাঙার হুমকি চেয়ারম্যানের
ফাইল ছবি।

সাইফুল ইসলাম তরফদার ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা থানা কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সামনে সাংবাদিকের পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. খাদেমুল আলম শিশির। ওসির কক্ষে চেয়ারম্যানের সাথে কিছু সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোকজন অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন সংবাদ কর্মীদের। চেয়ারম্যান ফোন করে থানার সামনে লোকজন জড়ো করে নির্দেশনা দেন সাংবাদিক থানা থেকে বের হলেই যেন মারধর করা হয়। বারবার শিশির চেয়ারম্যান সংবাদকর্মীকে মিথ্যা ও চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে গ্রেফতার করার কথাও বলেন। তবে, এসময় নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করেছেন তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. ওয়াজেদ মিয়া।


বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারী) রাত সাড়ে ৮ টার দিকে তারাকান্দা থানা কার্য়ালয়ের অফিস কক্ষে এসব ঘটনা ঘটে।


ভিক্টিম সংবাদকর্মীর নাম মঞ্জুরুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজের ময়মনসিংহ প্রতিনিধি ও স্থানীয় ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার হিসাবে কাজ করেন। অপরদিকে তারাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খাদেমুল আলম শিশির সংবাদকর্মীকে হাত ভাঙার হুমকি ও মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন।


সুত্র জানায়, উপজেলার পলাশকান্দা কান্দাপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ জালাল উদ্দিন তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে ওই গ্রামে বসবাস করেন। জালাল উদ্দিনের সাথে প্রতিবেশির ঝগড়া থাকায় আশপাশের সবার বাড়িতে বিদ্যুৎ থাকলেও জালাল উদ্দিনের বাড়িতে কোন বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। পারিবারিক বিরোধের কারণে জালাল উদ্দিনের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে দেয় না স্থানীয় একটি প্রভাশালী মহল। বিষয়টি নিয়ে শিশির চেয়ারম্যান বেশ কয়েকবার সালিশ করেন। কিন্ত, মিমাংসা হয়নি। সালিশে শর্ত দেয়া হয় জালাল উদ্দিনের স্ত্রী বৃদ্ধা ফাতেমা খাতুনকে সবার কাছে মাফ চাইতে হবে। না হলে তার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে না। কিন্তু, ফাতেমা খাতুনের দাবি আমি কোন অন্যায় করিনি। আমি কেন মাফ চাইব। এসব করতে করতে বেশ কিছুদিন চলে যায়, কিন্তু মিমাংসা হয়না। 


সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে জাগো নিউজের জেলা প্রতিনিধি মঞ্জুরুল ইসলামকে বিষয়টি জানায় বৃদ্ধা ফাতেমা খাতুন। জানানোর তিন দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আরও দুই সংবাদ কর্মীকে নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে তারাকান্দার খামার বাজার এলাকায় গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে বৃদ্ধা ফাতেমা খাতুন ফোন করি। কিন্তু, খামারবাড়ি বাজারে ৫ মিনিট বসতে বলেন। এসময় পরিচিত একজনের সাথে দেখা হলে তিনি চা খাওয়ানোর কথা বলে চেয়ারম্যান খাদেমুল আলম শিশিরের অফিসে নিয়ে বসান। সেখানে চা খাওয়ার পর যখন বের হয়ে চলে আসার সময় খাদেমুল আলম শিশির অফিসে ঢোকেন। পরে তার হাত মিলিয়ে সংবাদ কর্মী হিসাবে পরিচয় দেই। তখন চেয়ারম্যান বলেন, আমার থানায় একটা কাজ আছে সেখানে চলে যাব। এর সময় আমি চেয়ারম্যানকে বলি যেহেতু রাত হয়ে গেছে, আপনিও চলে যাবেন, আমিও ঘটনাস্থল থেকে ঘুরে আসি। এই কথা শুনার সাথে সাথে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসলেও এটা মিমাংসা হবে না। আর আপনার মত অনেক (বালের) সাংবাদিক আমার কাছে আসে। যান যান তুচ্ছতাচ্ছিল করে তাড়িয়ে দিয়ে অফিস থেকে চেয়ারম্যান বের হয়ে যান। পিছনে পিছনে আমিও তার কাছে যাই এবং জানতে চাই, আমি তো আপনার সাথে বাজে আচরণ করিনি। তাহলে আপনি আমাকে গালি দিলেন কেন। তখন চেয়ারম্যান বলেন, আমি আপনার কাছে কৈফিয়ত করব না। বেশি কথা বললে এখানে বেধে রাখব। এসময় চেয়ারম্যান অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে চলে যান। তখন আমি বিষয়টি তারাকান্দায় থানার ওসির সাথে বিস্তারিত বললে তিনি থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে বলেন। এর মাঝে আমাকে মারধর করতে প্রায় দুই শতাধিক লোকজন প্রস্তুতি নেয়। পরে ওই ইউনিয়ন পরিষদের তিন থেকে চার জন মেম্বার আমাকে জোড় করে গাড়িতে তুলে দেন। পরে আমি তারাকান্দা থানার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে ওসি ওয়াজেদ আলী আমাকে ফোন করে জানায়, চেয়ারম্যান থানায় আছে, আপনিও চলে আসেন। পরে তারাকান্দা পৌছে থানায় ওসির রুমে প্রবেশ করি। চেয়ারম্যান আমাকে দেখেই মোবাইল করে থানার সামনে সন্ত্রাসীদের ডেকে নিয়ে আসে। আমরা থানা থেকে বের হলেই যেন মারধর করে আমাদের পিটিয়ে হাত পা ভেঙে ফেলে এমন নির্দেশণা দেন চেয়ারম্যান। এসময় ওসির রুমে স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক আমি ও আমার সহকর্মীকে ওসির সামনে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করেন। এবং চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে আমাকে গ্রেফতার করার জন্য ওসিকে নির্দেশনা দেন চেয়ারম্যান খাদুমুল আলম শিশির।


পরে আমি ওসি ওয়াজেদ আলীকে বলি, আপনার সামনে এভাবে আমাদের গালাগালি করছে, আপনার বলার বা করার কি কোন কিছু নেই। তখন কথাটি এড়িয়ে মিমাংসার করার চেষ্টা করেন। তখন আমি ওসি সাহেবকে বলি, আমার সিনিয়র ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি। তারা কোন অভিযোগ না করে আমাকে চলে যেতে বলেছেন। যদি চেয়ারম্যান আমার নামে মিথ্যা কোন মামলা করে, মামলার প্রক্ষিতে আপনি আটক করতে চাইলে করতে পারেন। পরে অবশ্য চেয়ারম্যানের সাথে মিলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন।


এবিষয়ে জানতে চেয়ারম্যান খাদেদুল আলমের নাম্বারে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।


তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াজেদ আলী বলেন, খামারবাড়িতে দুই পক্ষের উচ্চবাক্য হয়েছে। পরে দু'জনই থানায় আসছিল। এখানেও তাদের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়েছে। এসময় থানায় ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী আসছিল। তারাও হট টক করেছে। থানার বাইরে সাংবাদিকদের পেটানোর জন্য কোন লোকজন আসছিল কিনা আমার জানা নেই। তবে, আপনারা জানেন, আমি শহরে দীর্ঘদিন কাজ করে আসছি। আপনাদের প্রতি একটু আলাদা টান তো আছেই। তবে, এখানে আসছি, সবার সাথে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করি। তবে, শেষ পর্যায়ে দু'জনকেই মিলিয়ে দিয়েছি। তবে, সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলাম যদি কোন অভিযোগ করে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


এবিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মাসুম আহমেদ ভুঁঞা বলেন, ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ্য করে একটা অভিযোগ দেন। আমি অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেব।


জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, আপনি লিখিত অভিযোগ দেন। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরএক্স/