ডোয়াইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্বপনের বিরুদ্ধে ৯ মেম্বারের অনাস্থা


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:৪১ অপরাহ্ন, ১লা মার্চ ২০২৪


ডোয়াইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্বপনের বিরুদ্ধে ৯ মেম্বারের অনাস্থা
চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক স্বপন।ফাইল ছবি।

জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার ৩ নং ডোয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক স্বপনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে চেয়ারম্যনের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছেন ইউনিয়নের ২ জন নারী মেম্বারসহ ৯ জন ইউপি সদস্য (মেম্বার)। অনাস্থা দিয়ে ১৪১ জামালপুর ৪ সরিষাবাড়ী আসনের সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব,ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার,জামালপুর জেলা প্রশাসক, জামালপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ সচিবকে অনুলিপি প্রদান করেন। ফলে ডোয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠন এবং ডোয়াইল ইউনিয়নের নাগরিকরা  ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক স্বপনকে বহিষ্কারের দাবী জানিয়েছেন।  


অভিযোগ ও অনাস্থা পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, আব্দুর রাজ্জাক স্বপন চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই  মাসিক সভাসহ সকল ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সভা না করেই সভার ভুয়া  রেজুলেশন প্রদর্শন এবং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে কাজ না করেই কাগজে-কলমে  উন্নয়ন কাজ দেখিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন। ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ কোনো কাজ না করেই একই কায়দায় তিনি আত্মসাৎ করে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দকৃত বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ সামগ্রী নিজের লোকজনকে দিয়েছেন। এছাড়াও নামে-বেনামে ত্রাণ সামগ্রী আত্মসাৎ করেছেন। তিনি বিধি-বহির্ভূতভাবে একই বছর একই স্থান দেখিয়ে এলজি এসপি ও হতদরিদ্রদের ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচি ( কর্মসৃজন) প্রকল্প দিয়ে কাজ না করেই সীম নিজের কাছে রেখে বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক স্বপন ইউনিয়নের নাগরিক, ওয়ারিশ ও জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সনদ দিতেও অবৈধভাবে নগদ অর্থ গ্রহণ করেন। 


অভিযোগে তারা আরো লিখেন, দুর্নীতিবাজ,সন্ত্রাসী, খুনি মামলার অভিযুক্ত আব্দুর রাজ্জাক স্বপন ইতিপূর্বে ডোয়াইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় হত দরিদ্র ডিলারশীপে স্বত্তাধিকারী ছিলেন৷  চাল চুরি আত্মসাৎ এর সময় ধরা পড়া অবস্থায় তার লাইসেন্স বাতিল করে উপজেলা প্রশাসন। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ অব কাঠামো সংস্কার (কাবিখা) কর্মসুচীর আওতায় ডোয়াইল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামের আ: খালের বাড়ী হতে আব্দুল বারেকের বাড়ী পর্যন্ত বাকী অংশ ইটের সলিং বরাদ্দকৃত  খাদ্য শস্য চাল ০৩(তিন) টন ডিগ্রীবন্দ মাদ্রাসা মাঠে মাটি ভরাট কাজের জন্য ০৩(তিন) টন চাল, ২০২২-২৩ অর্থ বছরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ( কাবিটা) কর্মসূচি আওতায় ডোয়াইল ইউনিয়নের ভবানীপুর হাসানের বাড়ী থেকে সরাফতের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৫ (পাচ) টন গম, ডোয়াইল ইউনিয়নের বিল পাড় কামালের বাড়ী থেকে প্রসাদপুর ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার বাবদ ৩,৯৯,৬১১ টাকার বরাদ্দের কাজ না করেই নিজেই সম্পুর্ন অর্থ আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়াও ইজিপিপি প্রকল্পের আওতায় ছোট ছোট বক্স, কালভার্ট, প্যালাসাইডিং, রিং কালভার্ট, সরকারের রাজস্ব খাতের  ১% অর্থের বরাদ্দের নামে নামী বেনামী প্রকল্প দেখিয়ে সম্পুর্ন টাকা চেয়ারম্যান স্বপনই আত্মসাৎ করেছেন বলে তারা অভিযোগে লিখেন। 


ডোয়াইল ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য ডলি আক্তার, ওয়ার্ড মেম্বার ফরহাদ শিমুল, মো: মিলটনসহ ইউনিয়নের ৯ জন মেম্বার বলেন, চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক স্বপন বিভিন্ন কায়দায় অনিয়ম-দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছেন। নানা ভয়ভীতি উপেক্ষা করে আমরা ২২ ফেব্রুয়ারী সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর কাছে চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক স্বপন এর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছি। অতি দ্রুত তাকে বহিষ্কার করা হোক।  


এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ডোয়াইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক স্বপনকে শুক্রবার (১ মার্চ) দুপুর ২.৪২ মিনিটে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।  


এদিকে সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তারকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।


এ বিষয়ে জামালপুর জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমানকে মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি জানান, আমার কাছে এটা আসলে আমি বিধিগত ভাবে ব্যবস্থা নিব। 


এ দিকে মুঠোফোনে বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া জানান, আমি এখনো অনুলিপি দেখিনি। অনুলিপি না দেখে কিভাবে ব্যবস্থা নিব। অনুলিপি আসলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  


আরএক্স/