চুয়াডাঙ্গায় রাতের আধারে গুড়িয়ে দেয়া হল কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


চুয়াডাঙ্গায় রাতের আধারে গুড়িয়ে দেয়া হল কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়

চুয়াডাঙ্গায় গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্থাপনা। রাতের আঁধারে এসকেভেটর বা ভেকু চালিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয় সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের ৭৮ নম্বর বোয়ালিয়া মৌজার শাহাপুর ও ভুলটিয়া ব্লকের বিভাগীয় সীড স্টোর ও উপ-সহকারী কৃষি র্কমর্কতার র্কাযালয় ও অফিসার কোয়ার্টার কাম শস্যভাণ্ডার ভবনটি।

বুধবার (১৬ মার্চ) সকালে এ দৃশ্য দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান সেখানে দায়িত্বরত কৃষি কর্মকর্তারা। রাতেই এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শাহাপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। ভবনটি দখলের উদ্দেশ্যে ভেঙে ফেলায় ৫০ লাখ টাকা সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে লিখিত ওই অভিযোগপত্রে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি । 

এদিকে ৫০ শতক জমির ওপর অবস্থিত কৃষি অফিসের ভবনের ৯০ শতাংশই গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অভিযোগের তীর যাচ্ছে কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলি আহাম্মেদ হাসানুজ্জামান মানিকের দিকে। ৬০ বছর আগে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দান করা ওই ৫০ শতক জমির বর্তমান মূল্য ২৫ কোটি টাকা। ওই জমি দখল নিতেই ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এসকেভেটর দিয়ে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের সরোজগঞ্জ বাজারে অবস্থিত বিভাগীয় সীড অফিস ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় কাম বাসভবন। ৭৮ নম্বর বোয়ালিয়া মৌজাভুক্ত এসএ ২৪২ ও আরএস ৬৩১ নম্বর দাগের ওপর ভবনটি অবস্থিত। সেখানে মোট ৫০ শতক জমি রয়েছে। ওই জমির বর্তমান বাজার মূল্য ২৫ কোটি টাকা। জমি দখলের উদ্দেশ্যে রাতের আঁধারে ভবনটি ভেঙে সরকারি সম্পদের ক্ষতিসাধন করেছে। এতে ৫০ লাখ টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়দের কয়েকজন জানিয়েছেন, ‌‘কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মানিকের নির্দেশে রাতের আঁধারে ভাঙা হয়েছে কৃষি অফিসের ভবনটি। ব্যবহার করা হয়েছে এসকেভেটর মেশিন। ’

চেয়ারম্যান আলী আহম্মেদ হাসানুজ্জামান মানিক তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ অস্বীকার করে তিনি দাবি করেন, ‘কৃষি বিভাগের ভবনটি ছিলো পরিত্যক্ত কোয়ার্টার। একটি কক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে। বাকি কক্ষের দরজা জানালা বলতে কিছুই নেই। লোকজন মল-মুত্র ত্যাগ করতো। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ভবনটি অপসারণ করতে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তাদের বার বার অনুরোধ করেও তারা সরাননি। মঙ্গলবার রাতে ভবনটি আপনা আপনিই ভেঙে পড়েছে।’ 

জমি দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘১৯৬০ সালে ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ৫০ শতক জমি শস্যবীজ ভাণ্ডার তৈরির জন্য কৃষি বিভাগকে দান করেন। যদিও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ ধরনের কোনো কিছু দান করতে পারেন না। তারপরও তিনি করেছেন। তবে দীর্ঘদিনেও সেখানে শস্যভাণ্ডার করা হয়নি। কোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ফলে এবার জমিটি ফেরত পেতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আইনগত পদক্ষেপ নেবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাতে ভবনটি এমনিতেই ভেঙে পড়েছে। আল্লাহর রহমতে কোনো প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’

এর আগে বুধবার দুপুরে থানায় দায়ের করা লিখিত অভিযোগ ঠিকঠাকভাবে লেখা হয়নি তাই সংশ্লিষ্ট দফতরকে সংশোধনের জন্য বলে সদর থানা কর্তৃপক্ষ। পরে রাতেই অভিযোগ সংশোধিত করে পূনরায় দাখিল করেন ওই কৃষি কর্মকর্তা। 

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাশরুর জানান, ‘বুধবার সকালে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জানতে পারি সরোজগঞ্জ বাজারের বিভাগীয় সীড অফিস ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার অফিস কাম বাসভবন এসকেভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা মিললে বিষয়টি কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়। ভাঙচুরের ফলে সরকারি এই কার্যালয়ের প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।’

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন জানান, ‘রাতের বেলা কে বা কারা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্থাপনা ভেঙে ফেলেছে। এতে তাদের ৫০ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগে জানিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এসএ/