‘ভাবির হোটেল’


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


‘ভাবির হোটেল’

আবুল কালাম (কালু) ও জেসমিন বেগম বিয়ে করেছেন প্রায় দুই যুগ আগে। সংসার চালাতে অনেক কাজই করেছেন। কিন্তু কোনো কাজই টেকেনি, আসেনি শান্তি। শেষে উপায়ন্তর না পেয়ে চার বছর আগে শুরু করেছেন  ‘খাবার হোটেল’। এতে ভাগ্য ফিরেছে এই দম্পতির। তাদের হোটেলের খাবারের স্বাদ এখন শহরজুড়ে।     

লক্ষীপুরের রায়পুর উপজেলায় মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে  মহাসড়কের পাশে  আবুল কালাম (কালু) ও জেসমিন বেগম  দম্পতির এই ‘ভাতের হোটেল’। তারা এই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা। খাবার হোটেলের কোনো নাম নেই, নেই কোনো প্রচার তবুও খাবারের মান অতুলীয় বলছেন কাস্টমাররা। 

ভাবির হোটেল শুনে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আধুনিক হোটেল বলতে যা বোঝায়, তার কিছুই নেই এখানে। কিন্তু সুলভ মূল্যে কালু-জেসমিন বেগম  নিজ হাতে তৈরি এ খাবারের স্বাদ নিতে প্রতিদিনই রায়পুর  উপজেলার বাসস্ট্যান্ডে,  ফিলিং স্টেশনের পাশেই ছোট্ট টিনের ছাপড়া ঘরে ভিড় করেন প্রচুর  মানুষ। ব্যতিক্রমী নাম দেখেও অনেকে এখানে আসেন খাবার খেতে।

রায়পুর পৌর নিকাহ্ রেজিস্ট্রার (কাজি) সাহেব বলেন,  ‘আধুনিক যুগে এই হোটেলের নাম(ভাবির হোটেল)  সত্যি অবাক করার বিষয়। তাই আজ এই ভাবির হোটেলে দুপুরের খাবার খেলাম।খাবারের মান বাড়ির খাবারের মতোই।’

শরীয়তপুরের ট্রাক চালক আল-আমিন বলেন, ‘যখনি রায়পুরে  ট্রাকের ট্রিপ নিয়ে আসি। তখনই এখানে সকালের নান্তা ও দুপুরের খাবার খাই। এই হোটেলের খাবার আর বাড়ির খাবারে একই স্বাদ পাই। হোটেলে সকল পেশা শ্রেণির লোকজন আসেন খাবার খেতে।রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রিয়াজ হোসেন বলেন  আমি প্রতিদিন দুপুরের খাবার খেতে আসি খাবারের মান ভালো হওয়ার কারণে মনে হয় ঘরে বসে মায়ের হাতের রান্না খাচ্ছি।’ 

হোটেলের নাম ভাবির হোটেল  কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জেসমিন বেগম  বলেন, ‘প্রায় চার বছর আগে কিছুদিন অন্য জায়গার সব সিএনজি স্টেশন বন্ধ ছিল,তখন গ্যাস নিতে আসা সিএনজি ও বাস ড্রাইভাদের ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো । সেই সময়ে তাদের পরামর্শে আমি ডাল ভাত, খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াতাম। তারা বলতো ভাবি আমরা ব্যাকায়দায় পড়ে তোমার হোটেলে খাই। তখন থেকে মুখে মুখে আমার হোটেলের নাম হয়ে যায় ‘ভাবির" হোটেল’।’

আবুল কালাম  বলেন, ‘সাধারণত জনসমাগম এলাকায় খাবার হোটেল হয়। কিন্ত আমি সম্পূর্ণ আলাদা এক প্রকার ছিপা জায়গায় খাবার হোটেল দিয়ে তার কোনো  নাম না দিয়ে  হোটেল ব্যবসা করতেছি। প্রায় ৪ বছর এই ছিপা জায়গায় হোটেল দিয়ে ব্যবসা করে আসছি।’

হোটেলে ডাল ভাত, খিচুড়ি, মাছ, মুরগি, গরুর মাংস প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া যায়। ব্যাকায়দা জায়গায় হোটেল হলেও নামের ভিন্নতায় পরিচিতি লাভে ভোজন রসিক লোকের সমাগম হয় এখানে। হোটেল ব্যবসা করে ১ছেলে-২মেয়ে নিয়ে ভালোই আছেন এই দম্পতি।

এসএ/