স্বদেশ ফেরা ৪৫ জন ও স্বজনদের ‘অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া না যাওয়া’ অনুরোধ
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:৫১ অপরাহ্ন, ৯ই জুন ২০২৪
নারায়নগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার এলাকার গফুর উদ্দিন। টানা ৮ মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ছেলে আবদুল হালিম (৩০) স্বদেশে ফিরছেন। ছেলের জন্য একজন পিতা যে অধির আগ্রহের অপেক্ষা।
রবিবার(৯ জুন) ভোরে কক্সবাজার পৌঁছেই গফুর উদ্দিন সারাসরি চলে আসেন কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনা সংলগ্ন নুনিয়াছড়াস্থ বিআইডব্লিটিএ এর জেটি ঘাটে।
ছেলে তখনও এসে পৌঁছেনি ঘাটে। কথা হয় বৃদ্ধ গফুর উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, তার ছেলে আবদুল হালিম পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিল। কাজ করে কোন রকমের ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু হঠাৎ গত বছরের অক্টোবরের মাঝা-মাঝি সময় নিখোঁজ হয়ে যান ছেলে। কোনভাবেই আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। গত রোজার ঈদের পরের দিন মিয়ানমার থেকে একটা ফোন আসে। ফোনে কথা বলে ছেলে।
ছেলে আবদুল হালিম তার বাবাকে জানিয়েছিল সে মিয়ানমারের কারাগারে রয়েছে। দালাল চক্রের প্রলোভনে কক্সবাজার থেকে সাগর পথে ট্রলার নিয়ে মালয়েশিয়া যাত্রা দিয়েছিল সে। যেখানে আড়াই হাজার এলাকার আরও ৫ জন ছিল। কিন্তু দালালরা তাদের নিয়ে নামিয়ে দিয়েছিল মিয়ানমারে। ওখানে মিয়ানমারের বাহিনীর সদস্যরা আটক করে পাঠিয়েছিল কারাগারে।
গফুর উদ্দিন বলেন, সরকারের যাচাই-বাছাই শেষে কয়েকদিন আগেই জানানো হয়ে ছেলে আজ ফিরছে। তাই ছেলেকে নিতে কক্সবাজার আসা। ৮ মাস পর আজ খুব খুশি লাগছে। সরকারকে অভিনন্দন জানাই। আমার সাথে আমার এলাকার আরও ৫ জন এসেছেন। তাদের ছেলেও এখানে রয়েছে। আমরা কোরবানির ঈদ খুব আনন্দের সাথে করতে পারবো।
একই কথা বলেছেন, কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের উত্তরপাড়ার সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, তার ছেলে মোহাম্মদ ইলিয়াছ (২০)ও ১১ মাস আগে মালয়েশিয়ায় যেতে গিয়ে মিয়ানমারের আটক হয়েছিল। ছেলে ফিরছেন তাই খুশি তিনিও।
ফেরত ৪৫ জনই সাগর পথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার স্বপ্নে যাত্রা দিয়েছিলেন। যারা ৮ থেকে ১৫ মাস কারাভোগ শেষে রবিবার (৯ জুন) ফিরেছেন স্বদেশে। ফেরত আসার পর এসব মানুষের ১০-১২ জনই এক বাক্যে অনুরোধ করেছেন দালালের প্রলোভনে যেন আর কেউ এমন ভুল পথে যাত্রা না দেয়। এটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছু না বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।
মিয়ানমারে কারাভোগ শেষে এই ৪৫ জন বাংলাদেশি রবিবার (৯ জুন) সকাল ৯ টার পর পরই কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনা সংলগ্ন নুনিয়াছড়াস্থ বিআইডব্লিটিএ এর জেটি ঘাট এসে পৌঁছে।
বঙ্গোপসাগরের শূণ্যরেখার জলসীমায় আসা মিয়ানমারের নৌ বাহিনীর জাহাজ ইউএমএস চিন ডুইন থেকে এসব বাংলাদেশিকে নিয়ে বাংলাদেশের নৌ বাহিনীর একটি গাম বোট বা ছোট্ট জাহাজ যোগে আনা হয় তাদের। ওই সময় আসেন মিয়ানমারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল। এরা মিয়ানমারে সংঘাতের জেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১৩৪ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে নিয়ে ফেরত গেছেন।
এসডি/