জনবাণীতে সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসলো জামালপুরের গণপূর্ত


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৫০ অপরাহ্ন, ১লা আগস্ট ২০২৪


জনবাণীতে সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসলো জামালপুরের গণপূর্ত
ছবি: প্রতিনিধি

জামালপুরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নবনির্মিত দ্বিতল ল্যাব কাম স্টোর ভবনের ফাটল সাময়িক মেরামত কাজ শরু করেছে গণপূর্ত বিভাগ। এর আগে গত রবিবার জাতীয দৈনিক জনবাণী পত্রিকায় “জামালপুর হাসপাতালে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার নতুন ভবনে দু'মাসে অর্ধশত ফাটল ” শিরোনামে একটি বিশেষ প্রতিবেদন সংবাদ প্রকাশিত হয়।এরপরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন, শুরু হয় বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ভবন পরিদর্শন।  


আরও পড়ুন: জামালপুরে পানিতে ডুবে প্রাণ গেল ৪ জনের


২০২২-২৩ অর্থবছরে জামালপুর গণপূর্ত বিভাগের অর্থায়নে এই ভবনটি নির্মানের কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন। এটি নির্মাণে ব্যায় হয়েছে ৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের জন্য বর্তমানে এক্সরে, ইকোকার্ডিওগ্রাম, এন্ডোস্কোপি, ইসিজি সেবা প্রদান করা হচ্ছে এই ল্যাব কাম স্টোর ভবন থেকে। 


প্রতিদিনই রোগী ও তাদের স্বজন মিলে দুই শাতাধিক মানুষ এই ভবনটিতে সেবা নিতে আসেন। এক বছর আগে ভবনটির নির্মান কাজ শেষ হলেও মাত্র দু'মাস আগে এখান থেকে সেবা কার্যক্রম শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তখন থেকেই এমন অস্বাভাবিক ফাটল দেখে হতবাক সকলেই। ছয়তলা ভিতের উপর নবনির্মিত দ্বিতল ওই ভবনের প্রায় অর্ধশত ফাটল নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় সোমবার (২৯ জুলাই) জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়।


এ সময় জেলা প্রশাসক মো: শফিউর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় জেলার বিভিন্ন দপ্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে জামালপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন। পরে সভা শেষ করেই জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমান জামালপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেনকে সাথে নিয়ে ভবনটি পরিদর্শনে যান।


আরও পড়ুন: জামালপুরে দেড়লক্ষ মানুষ পানিবন্দী, শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ


এরআগে জামালপুর গণপূর্ত উপ-বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এফ. এম আশ্রাফুল আউয়াল রানা ভবনটি পরিদর্শণ করেন। এরপর ভবনের এসব অস্বাভাবিক ফাটল মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করে গণপূর্ত বিভাগ। 


নাগরিক অধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী জানান, ভবনটি নির্মানে নিন্ম মানের সামগ্রী ব্যবহার এবং পর্যাপ্ত সিমেন্ট প্রয়োগ না করায় শুরুতেই স্থাপনাটি ঝুকিপূর্ণ ভবনে পরিণত হয়েছে। জামালপুর গণপূর্ত বিভাগের দয়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে এমনটি সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে জামালপুরের গণপূর্ত বিভাগ একটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এখন যেভাবে ফাটল মেরামত হচ্ছে তা কতটুকু স্থায়ী তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। 


এ ব্যাপারে জামালপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন এই ভবনের বিষয়ে বক্তব্য দিতে দিতে আমি ক্লান্ত। ভবনের যে যে যায়গায় ফাটল ছিলো তা মেরামত করা হচ্ছে। 


উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৪ মে এই ভবন থেকে রোগীদের সেবা কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হয়। বর্তমানে নতুন এই দ্বিতল ভবনের ভেতর-বাহির প্রায় সর্বত্রই ছোট-বড় অনেক ফাটল দেখা দিয়েছে। ফেটে একাকার ভবনের একাধিক দেয়াল, বেইজমেন্ট পিলার। পলেস্তারা খসে পড়েছে দোতলার একাধিক কক্ষে, এছাড়াও অনেক জায়াগায় পলেস্তারা খসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

আরও পড়ুন: জামালপুরে নদী ভাঙন এলাকায় ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ, শুকনা খাবার বিতরণ


কোথাও কোথাও আবার বেশ বড় বড় ফাটল তৈরি হয়েছে। ভবনটির দোতলায় এক্সরে কক্ষ, ইকোকার্ডিওগ্রাম কক্ষ, এন্ডোস্কোপি কক্ষ, ইসিজি কক্ষ, টয়লেট, রিসিভশন, রোগীদের বসার যায়গা, বারান্দাসহ প্রায় প্রতিটি দেয়ালের চিত্র কমবেশী একই।


এবারের বর্ষায় ছাদ চুইয়ে ফাটল বেয়ে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেছে ভবনের ভেতরে। এতে করে পানি প্রবেশ করায় নষ্ট হয়ে গেছে এক্সরে রুমের একটি শীততাপ নিয়ন্ত্রণ মেশিন (এসি)। নতুন এই ভবনের এমন অস্বাভাবিক ফাটল দেখে হতবাক সকলেই, প্রশ্ন উঠেছে ভবনের স্থায়ীত্ব নিয়ে। নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার ও গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের যথাযথ তদারকির অভাবে ভবনের এই বেহাল দশা বলে অভিযোগ উঠেছে।  


এসডি/