সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও হানিফকে প্রধান আসামী করে কুষ্টিয়ায় ২০১জনের নামে হত্যা মামলা


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:০০ অপরাহ্ন, ২০শে আগস্ট ২০২৪


সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও হানিফকে প্রধান আসামী করে কুষ্টিয়ায় ২০১জনের নামে হত্যা মামলা
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল-সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ। ফাইল ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হকার ব্যবসায়ী ও হাসপাতাল কর্মচারী নিহতের ঘটনায় কুষ্টিয়ায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। 


হকার ব্যবসায়ী নিহতের ঘটনার মামলায় সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে প্রধান আসামী করে ১২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফে প্রধান অাসামী করে ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় বাবলু ফরাজী (হকার ব্যবসায়ী) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। 


আরও পড়ুন: ইন্টারনেটের গতি কমানো হয়নি, স্লো হয়ে গেছে: পাকপ্রতিমন্ত্রী


সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুর ৩টা ২০ ঘটিকার সময় নিহত বাবলু ফরাজীর ছেলে সুজন মাহমুদ বাদী হয়ে কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলী আদালতে হত্যা মামলায় মোট ১২৬ জনকে এজাহারনামীয় আসামী করেন। পাশাপাশি ৪০ থেকে ৫০জনকে অজ্ঞাত নামা হিসেবে আসামী করা হয়েছে।


তথ্য সূত্রে জানা গেছে, নিহত বাবলু ফরাজী হাটশ হরিপুরের মৃত নওশের আলীর ছেলে। তিনি হাটে বাজারে গামছা, লুঙ্গি, বিছানার চাদর ইত্যাদি বিক্রয় করতেন। গত ৫ আগস্ট বিকেলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি। নিহতের ঘটনায় আসাদুজ্জামান খান কামালের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, কুষ্টিয়া-২ আসনের সদ্য সাবেক এমপি কামারুল আরেফিন, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সদ্য সাবেক এমপি আব্দুর রউফ, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, সহ-সভাপতি জাহিদ হোসেন জাফর, কুমারখালি পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র শামসুজ্জামান অরুন, খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আখতারের নাম সহ জেলা পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও এস আই সাহেব আলী ও অন্যান্য পুলিশের কর্মকর্তা সহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ করে ১২৬ জন আসামী হয়েছে।


আরও পড়ুন: এমপি আনার হত্যায় ১২০০ পৃষ্ঠার চার্জশিট পেশ


এ মামলার এজাহার সূত্রে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে গত ৫ আগস্ট বেলা ৩টা ২০ মিনিটের দিকে বাবলু ফরাজী (হকার ব্যবসায়ী) বাসায় ফিরছিলেন। পথিমধ্যে কুষ্টিয়া শহরের থানা মোড়ে পশ্চিম পার্শ্বে পদ্মা প্রিন্টার্স এর সামনে গলির মধ্যে পৌঁছালে এজাহারনামীয় আসামিরা তাঁকে দেখে ধাওয়া করেন। এরপর আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশনায় ও এজাহারে উল্লেখ ২ থেকে ১২ নং আসামীগনের হুকুমে অন্যান্য সকল আসামীগন দেশীয় অস্ত্র, লাঠি সোটা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে আক্রমন করেন। এসময় নিহত বাবলু ফরাজী পরিস্থিতির ভয়াবহ বুঝিয়া উক্ত গলির মধ্যে প্রাণ রক্ষার চেষ্টা করে। সে সময় বাবলু ফরাজীকে আন্দোলনকারী মনে করে এস আই সাহেব আলী আগ্নেয় অস্ত্র দ্বারা গুলি করে। এবং উক্ত গুলি বাবলু ফরাজীর মাথায় লাগে। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।


অপর দিকে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় ইউসুফ শেখ (৬৬) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। গত রোববার ১৮ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টার দিকে নিহত ইউসুফ শেখের (৬৬) মেয়ে মোছাঃ সীমা বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যা মামলায় মোট ৭৫ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করেন। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা হিসেবে  ২০ থেকে ৩০ জনকে আসামী করা হয়েছে। 


তথ্য সূত্রে জানা গেছে, নিহত ইউসুফ শেখ কুষ্টিয়া শহরের চর থানাপাড়া এলাকার মৃত এদাত আলীর ছেলে। তিনি কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে চাকরি করতেন। গত ৫ আগস্ট বিকেলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি। এ ঘটনায় মাহবুব উল আলম হানিফের পাশাপাশি তাঁর চাচাতো ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি রবিউল ইসলাম, সহ-সভাপতি কুষ্টিয়া জজ কোর্টের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অনুপ নন্দী, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, কোষাধ্যক্ষ অজয় সুরেকা, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব এবং শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাইজাল আলী খানের নাম সহ ৭৫জন নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। 


মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়,  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ইউসুফ শেখ কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরছিলেন। পথিমধ্যে কুষ্টিয়া শহরের ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনের নূর টেইলার্স গলির ভেতরে পৌঁছালে এজাহারনামীয় আসামিরা তাঁকে দেখে ধাওয়া করেন। এরপর হানিফ ও তাঁর চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতার নির্দেশে আসামিরা তাঁকে গুলি করেন। অন্য আসামিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।


মামলার বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহফুজুল হক চৌধুরী মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মামলার আসামিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


আরএক্স/