আজ থেকে শুরু হচ্ছে কুষ্টিয়ায় লালন মেলা, চলবে তিনদিন


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৪৪ অপরাহ্ন, ১৭ই অক্টোবর ২০২৪


আজ থেকে শুরু হচ্ছে কুষ্টিয়ায় লালন মেলা, চলবে তিনদিন
ছবি: প্রতিনিধি

বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৪তম তিরোধান দিবসে বসেছে সাধুর হাট। “মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি”এই বাণীকে সামনে রেখে আগামী তিনদিনব্যাপী চলবে এই অনুষ্ঠান। প্রতি বছরের ১লা কার্তিক দিনটিতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে এবছরেও কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার ছেউড়িয়ায়, লালনের আখড়াবাড়িতে বসেছে সাধুর হাট। দুর দুরান্ত থেকে সাধু-বাউল-ফকিররা এসে যোগ দিচ্ছেন সাধুসঙ্গে।


এতে মিলন মেলায় যুক্ত হচ্ছেন পর্যটক দর্শনার্থীরা। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে গুরু-শিষ্যের সাধন-ভজন ও ভক্তি-শ্রদ্ধা নিবেদন। লালনের দর্শন নিতে আখড়াবাড়ির ভেতরে অডিটরিয়ামের নিচে, আঙ্গিনায় সহ পুরো এরিয়ায় আসন পেতে বসেছেন হাজারো সাধু-ফকির। অসাম্প্রদায়িক, মানবতাবাদী, লালন দর্শনের গানে মুখর এখন ছেউড়িয়া এলাকা।


এসময় সাধুরা বলেন, এখানে সাধু-গুরুর ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে চরিত্র গঠন হয়। সবাইকে সত্যবাদী, জিহাদী, কষ্টসহিঞ্চু ও অল্পতেই তুষ্ট থাকার মতো চরিত্রবান হতে হবে।বিশাল আখড়াবাড়ি ও বাইরের খোলা মাঠে সাধু-বাউলরা বৈঠকি ঢঙে বসেছেন। একেকটি বৈঠক থেকে গানে গানে লালনের বাণী প্রচার করা হচ্ছে। আর ফকির লালন সাঁইজি ও তার শিষ্যরা চিরনিদ্রায় শায়িত যেখানে প্রথা অনুযায়ী সেখানে ভক্তি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ভক্ত-অনুসারীরা।


এদিকে আখড়াবাড়ির বাইরে বসেছে তিনদিনের লালন মেলা। এ উৎসব চলবে আগামী ৩কার্তিক (১৯ অক্টোবর) শনিবার।


জানা যায়, গানে গানে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে দিতেন লালন সাইজী । সেই রেওয়াজ মোতাবেক অধিবাস, বাল্যসেবা ও পূর্ণসেবার মধ্য দিয়ে এখনো এই দোল উৎসব হয়। পাশাপাশি ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পয়লা কার্তিক লালন সাঁইজির দেহত্যাগের পর থেকে যুক্ত হয়েছে আরেকটি অনুষ্ঠান। দৌল উৎসবের আদলে ১৩৪ বছর ধরে তিরোধান উৎসবেও সাধু-বাউলরা লালনকে স্মরণ করছেন। বসছে সাধু সঙ্গ।


১লা কার্তিক বৃহস্পতিবার সব সাধু-গুরু আসন নিয়ে চা-মুড়ির সেবার মধ্য দিয়ে তিরোধানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। সন্ধ্যার এই আয়োজনকে বলা হয় অধিবাস।এটি দৈন্য দিয়ে শুরু হয়, সঙ্গে সাঁইজির নাম-কালাম ধরে প্রার্থনামূলক পদ-পদাবলী গান চলতে থাকবে। পরদিন ১৮ অক্টোবর সকালে বাল্যসেবা ও দুপুরে পূর্ণসেবার মধ্য দিয়ে সাধুসঙ্গের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। তবে পূর্নসেবার পর কিছু সাধু চলে যান। এই উৎসব যেহেতু আরও একদিন থাকছে, সেই হিসেবে থেকে যান অনেকেই।


আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, উৎসবের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, আনছার বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। এছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং করা হচ্ছে। এবং লালন একাডেমীর মাঠে স্থায়ী মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে তিরোধান দিবসের তিনদিনের অনুষ্ঠান উদ্বোধন শেষে লালন সংগীতানুষ্ঠান চলবে। তিনি আরো বলেন, এই অনুষ্ঠানে কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আরএক্স/