পুলিশের গোপন আঁতাত: গোদাগাড়ীতে মাদকের হাটে দালালের দৌরাত্ম্য


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


পুলিশের গোপন আঁতাত: গোদাগাড়ীতে মাদকের হাটে দালালের দৌরাত্ম্য

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশ সরকার মাদক এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি  অব্যাহত রাখলেও থেমে নেই মাদক ব্যবসা। মাদকের রাজধানী রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে হরহামেশাই মিলছে মাদক। বর্ডার এলাকায় নামমাত্র প্রশাসনের টহল থাকলেও সহজেই মেলে গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিল এবং ইন্ডিয়ান মদ। রুটর হিসেবে গোদাগাড়ীর ফরিদপুর, সুলতানগঞ্জ, সারাংপুর, গোদাগাড়ী হাটপাড়া, রেলবাজার, মাদারপুর, ডিমভাঙ্গা, উজানপাড়া, ফুলতলা, বিদিরপুর, প্রেমতুলি উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন এবং স্থানীয় নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকেও মাদক ব্যবসা করছেন রাঘববোয়ালরা। খোদ চুনোপুঁটিদের চাপে রাখেলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন তারা। নামমাত্র অভিযানে চুনোপুঁটিরা ঘর ছাড়া হলেও থানা ম্যানেজ করে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গডফাদাররা। এসব মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে মহিশালবাড়ীর তোফায়েল, আব্দুল মালেক, সনি, রায়হান, মোফা , সোহেল, ল্যাংড়া শামীম, টিপু, মনির, নবীন, শহিদুল ইসলাম ভোদল, ডিমভাঙ্গার রিনা,  রেলবাজারের কারিমা, মাদারপুরের ইসাহাক, তারেক, মেডিকেল মোড়ের দুরুল হোদা, কালু, লালবাগের মিজান, বৃটিশ,রেলগেটের বাবু মেম্বার, ফুলতলা এলাকার তিতাস, বাইপাস এলাকার শালেমা খাতুন,উজান পাড়ার দুরুল, মিঠু, বাবু, শরিফ (ঘাইটাল), সাদ্দাম, রহিম, হিটলার, মিন্টু, মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল উল্লেখযোগ্য। 

গোদাগাড়ী এলাকা মাদকের আখড়া বলে পরিচিত সারাদেশে। কালো টাকার জোরে গডফাদাররা মাদক ব্যবসা করে কোটি টাকার মালিক হচ্ছেন রাতারাতি। মাদক কারবারকে ঘিরে গোদাগাড়ীতে সরগরম দালালরা। পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করা মাত্রই ফোন যায় দালালদের কাছে। দালাল ব্যবসায়ীর পরিবারের সাথে কথা বলে বড় অংকের টাকার চুক্তি করেন।

চুক্তিতে আসলেই ছাড়া পায় মাদক কারবারী। এসব দালাদের উঠাবসা প্রশাসনের লোকদের সাথেই। এসব দালালদের মধ্যে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হামিদ রানা, গোদাগাড়ী ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল জাব্বার, ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোফাজ্জল হোসেন মোফা, ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর  শহিদুল ইসলাম মাটিকাটা ইউনিয়নের ফুলতলা এলাকার বাণী ইসরায়েল (হিটলার) সহ আরও অনেকেই।

জানা যায়, বানী ইসরায়েল (হিটলার) মাদক ব্যবসার পাশাপাশি প্রেমতুলি পুলিশ ফাঁড়ির দালালী করে থাকেন। হিটলার এলাকায় দোকান পেশায় যুক্ত থেকে জেলা পুলিশের (ডিবি), প্রেমতুলি পুলিশ ফাঁড়ির সাথে সখ্যতা রেখে মাদক ব্যবসা করে থাকেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি বলেন, সম্প্রতি হিটলার প্রেমতুলি পুলিশের কথা বলে এক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে দশ হাজার টাকা নিয়ে তাকে বাড়িতে থাকতে আশ্বস্ত করেন। (অডিও কল রেকর্ড সংরক্ষিত)

এ ছাড়াও গোদাগাড়ী থানার অন্তর্গত প্রেমতুলি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগও রয়েছে। এই রফিকুলের বিরুদ্ধে হাটগাঙ্গপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে থাকা কালিন বিস্তর অভিযোগ উঠেছিলো। প্রেমতুলি এলাকার বাণী ইসরায়েল (হিটলার) নামে দালালের মাধ্যমে ফাঁড়ির লেনদেন হয় বলে জানা যায়। (অডিও রেকর্ড সংরক্ষিত)

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেমতুলি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম জনবাণীকে বলেন, ‍“এসব কথার ভিত্তি নেই। এই এলাকায় ২০০০ মাদক কারবারি আছে। কার কাছে থেকে কে পুলিশের নামে টাকা নিলো তা আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নিবো।” 

জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখায়ের আলম জনবাণীকে বলেন, “বিষয়গুলো আমার জানা নেই। এরকম হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উল্লেখ্য, গত তিন মাসে গোদাগাড়ী থানায় মাদক মামলা হয়েছে ৮০টি। ৮০ মামলায় গ্রেফতার হয়েছে ১১৩ জন। মাদক উদ্ধার হয়েছে হেরোইন ২৭৩১.৬ গ্রাম, ফেন্সিডিল ১৫৬ বোতল,,গাঁজা-৯৭৪৫ গ্রাম, ইয়াবা ২৬৬ পিচ, চোলাইমদ ৫১৭ লিটার।

এসএ/