ঘের থেকে বের হওয়া গ্যাসেই রান্নাবান্না করছেন দেলোয়ার


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ঘের থেকে বের হওয়া গ্যাসেই রান্নাবান্না করছেন দেলোয়ার

মোংলার মিঠাখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বপাড়ার বাসিন্দা দেলোয়ার শেখ (৩৫) তার চিংড়ি ঘের থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের উদগীরণ শুরু হওয়ার পর পাইপলাইন বসিয়ে তা দিয়ে কয়েকদিন ধরে রান্নাবান্নার কাজ করছেন। তার পৌনে তিন বিঘার চিংড়ি ঘেরের ৭-৮টি জায়গা থেকে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রচুর পরিমাণে গ্যাসের উদগীরণ ঘটছে। প্রায় ৬ বছর ধরেই এ গ্যাসের উদগীরণ হয়ে আসলেও, সপ্তাহখানেক ধরে আগের তুলনায় উদগীরণের চাপ বেড়ে গেছে। 

ফলে ঘের মালিক গ্যাসের উদগীরণস্থল থেকে স্থানীয় পদ্ধতিতে একটি ড্রামের সাহায্যে পাইপলাইন টেনে তা দিয়ে গত ৩-৪ দিন ধরে ঘরের সকল রান্নাবান্নার কাজ করছেন। আর ঘেরের মধ্যে গ্যাসের উদগীরণ ও সেই গ্যাস দিয়ে রান্নার খবর ছড়িয়ে পড়ায় দূরদূরান্ত থেকে উৎসুক মানুষের ভিড় জমছে সেখানে।

ঘেরের মালিক দেলোয়ার শেখ জানান, “মূলত ছয় বছর আগে এ চিংড়ি ঘেরের জমি থেকে বালু ও মাটি উত্তোলনের জন্য স্থানীয় ছোট ড্রেজার বসানোর চেষ্টা করেন তিনি। তখন ৬০ ফুট গভীরে ড্রেজারের পাইপ ঢোকানোর পর সেখান থেকে বের হতে থাকে এ গ্যাস। সেসময় গ্যাসের চাপে পাইপ থেকে মাটি, বালু ও পানি একশ থেকে দেড়শ ফুট উপরে পর্যন্ত উঠতে থাকে। তা দেখে ভয় পেয়ে সেখান থেকে দ্রুতই সেই পাইপ তুলে ফেলি। কিন্তু সেই থেকেই মূলত ঘেরটি থেকে গ্যাসের এ উদগীরণ ঘটে আসছে। এ ঘটনার ঝই-ঝামেলা এড়াতেই মূলত তখন আমি বিষয়টি গোপন রাখি। কিন্তু সপ্তাহখানেক ধরে উদগীরণের পরিমাণ ও চাপ বেড়ে যাওয়ায় তা কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিউ। এরপর স্থানীয় মেকানিকদের সহায়তায় সেখান থেকে লাইন টেনে ঘরে রান্নার কাজ করছি।” 

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, ‘প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ঘেরটিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের অস্তিত্ব মিলেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন ও বাপেক্স কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারাই এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’ 

গ্যাস উদগীরণের বিষয়ে তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ, বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির বাগেরহাট জেলা আহবায়ক নুর আলম শেখ বলেন, “বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন উপকূলের বিভিন্ন জায়গা প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ সম্পদের অস্তিত্ব রয়েছে। বাপেক্সের উদাসীনতার কারণেই এসব সম্পদ সনাক্ত, উত্তোলন ও এর ব্যবহার সম্ভব হচ্ছেনা। মিঠাখালী গ্রামের ঘের থেকে উদগীরণ হওয়া গ্যাসের পরীক্ষা করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।” 

এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, ‍“প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ঘেরটিতে জ্বালানী গ্যাসের অস্তিত্ব মিলেছে। সেই গ্যাস দিয়ে তারা রান্নার কাজও করছেন দেখেছি। তাই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন ও বাপেক্স কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এখন তারাই এ নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা নেবেন। দুর্ঘটনা এড়াতে গ্যাসের উদগীরণস্থলে লোকজনের ভিড় ও গ্যাসের সংযোগ লাইন বন্ধ রাখতে সেখানে গ্রাম পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”

এসএ/