কৃষি জমি বাঁচাতে প্রতিবাদ করায় যুবলীগ নেতাসহ দেড় শতাধিক কৃষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর তিন ফসলি জমিতে পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মানববন্ধন কর্মসুচিতে অংশ নেওয়া দেড় শতাধিক কৃষক, কেন্দ্রীয় যুবলগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে পুলিশ এ মামলায় চার কৃষককে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। এদিকে গ্রেফতার আতঙ্কে কৃষ্ণপুর গ্রামের শত শত কৃষক রাতে বাড়ি থাকার সাহস পাচ্ছেন না। ফলে ভুক্তভোগীদের কৃষকদের পরিবার-পরিজনেরা রাতে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রাত কাটাচ্ছেন।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় সোলার বিদ্যুৎপ্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা চালিয়ে আসছে একটি বিদেশী কোম্পানি। কিন্তু এলাকার কৃষকেরা তাদের তিন ফসলি জমিতে পাওয়ার প্লান্ট নির্মানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আসছেন। কৃষ্ণপুর গ্রামের সাধারন কৃষকেরা তাদের মাঠের তিন ফসলি জমি রক্ষা করতে গত ৭ জুলাই দুপুরের দিকে হাতে বিষের বোতল ও কাফনের কাপড় নিয়ে চুয়াডাঙ্গার প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় কৃষকেরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ঘটনার ব্যাপারে একটি স্মারক লিপি প্রদান করেন। স্মারক লিপি প্রদান কালে এলাকার সাধারন কৃষকদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন কৃষ্ণপুর গ্রামের সন্তান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রিয় যুবলগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে সাবেক মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন।
গ্রামবাসীর দাবী, তাদের তিন ফসলী জমিতে সিঙ্গাপুরভিত্তিক সাইক্লিক্ট এনার্জি প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি সোলার বিদ্যুৎপ্ল্যান্ট স্থাপনের চেষ্টা করে বেশ কয়েক বছর ধরে। কিন্তু এতদিনে তারা ব্যর্থ হলেও এলাকার একটি প্রভাবশালী মহলের সহযোগীতায় সম্প্রতি কৃষ্ণপুর মাঠে জোর করেই কোম্পানির নামে সাইন বোর্ড টানিয়ে দেয়।
কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন জনবাণীকে বলেন, “আমরা এলাকার কৃষি জমি রক্ষার জন্য কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর অপরাধে পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানির পক্ষাবলম্বনকারী রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ শাহ ও তার ছেলে নয়ন এবং কোম্পানির অপর প্রতিনিধি উপজেলার বালিহুদা গ্রামের আবু তাহের জবা আমাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয় এবং আমাদেরকে থামিয়ে দেয়ার কৌশল হিসাবে গত ৭ জুলাই বিকালে কোম্পানির নির্মাণাধীন ঘর ভেঙ্গে দিয়েছি এবং আব্দুর রশিদ শাহ’র ’স’ মিলে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছি ও তাদের কাছে আমরা নাকি চাঁদা চেয়েছি দাবী করে থানায় আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। আর এই মামলায় পুলিশ কোন কিছু ভাল ভাবে না খতিয়ে না দেখে গ্রামের নিরীহ কৃষকদের ধরপাকড় করছে। মিথ্যা মামলায় পুলিশ আব্দুস সালাম, আব্দুল কুদ্দুস, ইদ্রিস আলি ও মিকাইলদের গ্রেফতার করে জেলখানায় পাঠিয়েছেন।”
জাহাঙ্গীর আলম ও সাজ্জাদ হোসেনের অভিযোগ, “এমপি আলী আজগার টগর কোম্পানির পক্ষে কাজ করছেন। আমরা ঘটনাস্থলে না থাকলেও আমাদেরকে ওই মামলার ঘটনায় আসামি করা হয়েছে। তাছাড়া আমরা তাদেরকে কাছে কোন কষ্টে চাঁদা দাবী করতে যাবো? মিথ্যা মামলায় পুলিশের অভিযানের কারণে গ্রামের কৃষকদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক রিবাজ করছে। গ্রামের নিরীহ কৃষকদের দাবী তারা কেন কৃষি জমিতে পাওয়ার প্লান্ট বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে।”
সিঙ্গাপুর ভিত্তিক সাইক্লিক্ট এনার্জি প্রাইভেট লিমিটেড’র প্রতিনিধি আবু তাহের জবা ও রায়পুর ’স’ মিলের মালিক আব্দুর রশিদ শাহ’র জনবাণীকে বলেন, “জাহাঙ্গীর আলম ও সাজ্জাদ হোসেন ঘটনাস্থলে না থাকলেও তাদের হুকুমেই সব কিছু হচ্ছে।”
সরজমিনে কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষকদের অভিযোগ, রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মামলা, হামলা, নির্যাতন, ভয়ভীতিসহ সর্বদা অত্যাচার অব্যাহত রেখেছে। একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হচ্ছে গ্রামের নিরীহ কৃষকদের। এ থেকে তারা মুক্তি চাই। জীবন থাকতে তিন ফসলী জমিতে কখনও সোলার প্ল্যান্ট নির্মাণ করতে দেয়া হবে না। সরকার জমি অধিগ্রহণ না করলেও কোম্পানির পক্ষে কাজ করা আবু তাহের জবা ও রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ ও তার ছেলে নয়ন এলাকায় অপপ্রচার করছে সরকার জমি অধিগ্রহন করতে তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছে।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল খালেক জনবাণীকে বলেন, “জীবননগর রায়পুর গ্রামে শাহ টিম্বার স মিলে হামলা করে কৃষ্ণপুরের লোকজন। তারা স মিলে ভাঙচুর ও ম্যানেজারকে মারপিটের ঘটনায় মামলা হলে অভিযুক্ত চার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে ইতিমধ্যেই জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে এ বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।”
এসএ/