বিমান টিকেট সিন্ডিকেটের মাষ্টার সবুজ মুন্সী
বশির হোসেন খান
প্রকাশ: ১২:০৯ অপরাহ্ন, ৩০শে এপ্রিল ২০২৫

# এনবিআরের আয়কর গোয়েন্দা তৎপর
# অব্যাহতি দিল আটাব
# বিমান মন্ত্রণালয় শোকজ
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সদস্য হারালেন সবুজ মুন্সী। গত শনিবার কার্যনির্বাহী কমিটির ষষ্ঠ সভায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে আটাব’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এয়ার টিকেট সিন্ডিকেটের মাষ্টার হিসেবে খ্যাত সবুজ মুন্সীর নামে টিকিটি মজুদ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয় দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে।
অভিযোগ সূত্র বলছে, সবুজ মুন্সী ‘নড়িয়া ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস’ নামের একটি এজেন্সির মালিক। তার বিরুদ্ধে ওঠা ‘নামহীন গ্রুপ টিকেটিং’সহ বেশ কিছু অভিযোগের বিষয়ে কারণ দর্শাতে ২৭ ফেব্রুয়ারি নোটিশ দিয়েছিল বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
আটাব বলছে, শোকজ নোটিশ পাওয়ার পর সবুজ মুন্সী নিজেকে বাঁচাতে আটাবের সভাপতি, মহাসচিবসহ কমিটির অন্যদের সহযোগিতা চান। কিন্তু ‘অনৈতিকতার বিরুদ্ধে’ কমিটির ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কারণে তিনি সুবিধা করতে পারেননি।
বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয়ের শোকজ নোটিশে বলা হয়েছিল, এয়ার টিকেটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ঠেকানোর নির্দেশনা অমান্য করে সবুজ মুন্সীর ট্রাভেল এজেন্সি ‘গ্রুপ বুকিংয়ের’ নামে যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর ও পাসপোর্টের অনুলিপি না দিয়েই টিকেট বুকিং করে তা উচ্চমূল্যে বিক্রয় করছে।
এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি পেয়েছে উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, লাইসেন্স বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে কেন সুপারিশ করা হবে না তা সবুজ মুন্সীকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে জানাতে হবে।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়, বসুন্ধরা রিভারভিউতে ৮ তলা আলিশান বাড়ি ও গ্রামের বাড়িতেও দুটি আলিশান বাড়ি। গ্রুপ এয়ারটিকেট সিন্ডিকেট করে অল্পদিনেই অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়ে গেছেন তিনি। শরিয়াতপুরের নড়িয়া উপজেলার উপসী গ্রামের সামসুল হক মুন্সীর ছেলে সবুজ মুন্সী। যার এনআইডি নম্বর ১০০৬৮৬৫৩২১। ঢাকার নয়াপল্টন ৬৬ ভি.আই.পি রোডের স্কাইভিউ ট্রেড ভ্যালি’র ১৪ তলায় বিলাশবহুল আলিশান ফ্ল্যাটে নিজস্ব অফিস। এই ফ্ল্যাটের ডেকোরেশনে খরচ করেছেন কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়াও তার নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ।
এদিকে অন্তবর্তী সরকারের উদ্যোগের কারণে সম্প্রতি বিমানের টিকিটের দর ৭৫ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। গত ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রুপ বুকিং স্কিমের অধীনে টিকিটের দাম এক লাখ ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। এখন ভাড়া ৪৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকায় কমেছে। এমনকি কিছু বিমান সংস্থা ঢাকা থেকে দাম্মাম ও রিয়াদের মতো রুটে টিকিট ভাড়া কমিয়ে ৩৫ হাজার টাকায় দিচ্ছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি টিকিট বুকিংয়ে কঠোর নিয়মকানুন জারি করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। নতুন নিয়ম অনুসারে এখন থেকে অবশ্যই যাত্রীর নাম, পাসপোর্টের বিবরণ ও পাসপোর্টের একটি ফটোকপি দিয়ে বিমানের টিকিট বুকিং করতে হবে। এ নির্দেশনার পর বিমান সংস্থাগুলো পূর্বে ব্লক করা টিকিট প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে। ফলে টিকিটের প্রাপ্যতার সঠিক চিত্র সামনে উঠে আসায় এজেন্সিগুলো টিকিটের দাম কমাতে বাধ্য হয়েছে। এ ছাড়া এনবিআরের আয়কর গোয়েন্দা তৎপরতা টিকিটের দর কমাতে ভূমিকা রেখেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। আয়কর তথ্য যাচাই করতে ৩০টি ট্রাভেল এজেন্সির একটি তালিকা তৈরি করেছে গোয়েন্দা ইউনিট।
এ বিষয়ে সবুজ মুন্সী’র মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।