বিদ্যুৎ খাতে স্বৈরাচারের দোসররা তৎপর
বশির হোসেন খান
প্রকাশ: ১২:৫২ অপরাহ্ন, ৮ই মে ২০২৫

# একবার বাতিল হওয়া কোম্পানি পাচ্ছে কাজ
# কারসাজি করে নসরুল হামিদের আত্মীয়কে দেয়া হচ্ছে কাজ
# বিপুর শ্যালক যোগ্যতায় কাজ পাবেন
- মো. রকিব উদ্দিন প্রকল্প পরিচালক(তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী), স্মার্ট প্রি প্রেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট(ফেজ-২)
স্বৈরাচার সরকারের পতন হলেও থেমে নেই তাদের দোসর ও সুবিধাভোগীদের তৎপরতা। আওয়ামী লীগ আমলের অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত দপ্তর হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের দুর্নীতির সহযোগীর ভূমিকায় থাকা ব্যক্তিরা এখনও সুবিধা নিচ্ছেন। এ সংক্রান্ত একটি সুনির্দিষ্ট তথ্য দৈনিক জনবাণীর হাতে এসেছে।
যাতে দেখা যাচ্ছে, একই প্রকল্পের দুই প্যাকেজ। একটি প্যাকেজ বাতিল হলেও বাতিল হচ্ছে না দ্বিতীয় প্যাকেজ। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) লিমিটেডের ১ লাখ ৩৮ হাজার মিটার টেন্ডার বাতিল করে মন্ত্রণালয়ের কমিটির সুপারিশে গঠিত নতুন স্পেসিফিকেশনে রি-টেন্ডার করা হলেও রিটেন্ডার করা হচ্ছে না একই প্রকল্পের ৫১ হাজার ৮০১ প্রিপেইড মিটার কেনার টেন্ডার। এই প্যাকেজের টেন্ডার আগের স্পেসিফিকেশনে তৈরি করা।
জানা গেছে, গতবার স্মার্ট প্রিপেমেন্ট মিটারিং ফেজ-২ শীর্ষক প্রকল্পের প্রথম প্রকাশিত টেন্ডার প্যাকেজের স্মার্ট মিটার টেন্ডারে দুইটি কোম্পানি পাশ করার কথা ছিলো। একই প্রকল্পের এবারের প্যাকেজে পাশ করেছে তিনটি কোম্পানি। তাতে প্রতিযোগিতা হচ্ছে বলে মনে করছে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব প্রতিষ্ঠান ওজোপাডিকো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, শেনঝেন স্টার ইন্সট্রুমেন্ট নামের একটি কোম্পানি এবার পাশ করেছে। সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের স্ত্রীর ভাইয়ের এই কোম্পানি আগের সরকারের সময়ে একচেটিয়া কাজ করেছে। এখনো ভিন্ন পদ্ধতিতে তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। ওজোপাডিকোর এই প্রকল্প পরিচালক শেনঝেন স্টারের এক কর্মকর্তার আত্মীয়। ভিতর থেকে তাদের মদদ দিচ্ছে সেই ব্যক্তি।
গতবার শেনঝেন স্টার ইন্সট্রুমেন্ট নামের এই কোম্পানি দরপত্র মূল্যায়নের ডেমোন্সট্রেশন পর্বে বাদ পড়ে তাদের মিটার আল্ট্রাসনিক ওয়েল্ডিং না হওয়ার কারণে। তাদের মিটারের সিলিং যথেষ্ট পরিমাণে মজবুত না হওয়ায় গ্রাহক অসদুপায় অবলম্বন করতে পারে এই আশংকায় তাদের মিটার ডেমোন্সট্রেশনে অকৃতকার্য করা হয়। কিন্তু এবার কৃতকার্য হচ্ছে এই কোম্পানির মিটার।
একই প্রকল্পের বড় টেন্ডার বাতিল করে এই ছোট টেন্ডার চালিয়ে যেতে উৎসাহী ওজোপাডিকো বোর্ড। নতুন ঠিকাদার আনতে তৎপর ওজোপাডিকোর ওই প্রকল্প কর্ম কর্মকর্তা। তিনি প্রভাব খাটিয়ে অসদব্যবহার করে এই দরপত্রে দুর্নীতি করতে চাচ্ছেন। তিনি চাচ্ছেন এই টেন্ডার চলুক যাতে তার ব্যক্তিগত উপার্জন হয়। তার পছন্দের কোম্পানিকে কাজ দিতে তিনি উদগ্রীব। ওজোপাডিকো চাচ্ছে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানাতে যে মন্ত্রণালয়ের করা কমিটির প্রণীত স্পেসিফিকেশনে ভালো মিটার পাওয়া যাচ্ছে না।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় উপদেষ্টার দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক অফিস আদেশে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির ব্যয় সংকোচন করতে বলেছেন। তার নির্দেশনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড স্মার্ট প্রিপেইড মিটার ক্রয়ের ১০টি টেন্ডার বাতিল করে। অনেক ঠিকাদার এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই ধারায় ওজোপাডিকো মিটার প্রকল্পের প্রথম প্যাকেজ বাতিল করা হয়। অন্য প্রকল্পের ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচন নীতিতে গেলেও এই ক্ষেত্রে সেই নীতি থেকে সরে এসেছে ওজোপাডিকো।
এ ব্যাপারে স্মার্ট প্রি প্রেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট(ফেজ-২) প্রকল্প পরিচালক(তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) মো. রকিব উদ্দিন বলেন, আমি কাউকে কাজ দিচ্ছি না। সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর শ্যালকের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে তার যোগ্যতায় কাজ পাবে।
আরএক্স/