জয়পুরহাটে বিশ্বমানের আলুর চিপস তৈরি করে সাবলম্বী ৪০০ পরিবার
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:২৭ অপরাহ্ন, ৮ই মে ২০২৫

বিশ্বমানের আলু তৈরি চিপস তৈরি করে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার একটি গ্রামের প্রায় চারশো পরিবার সাবলম্বী হয়েছেন। এসব পরিবারের কেউ আলু পাতলা করে কাটছেন, আবার কেউ সেই আলু মাটির চুলোয় সেদ্ধ করে রোদে শুকাচ্ছেন। ঠিকঠাক মত শুকানো হলে সেই আলু আবার ভেজে চিপস তৈরি করছেন। এভাবেই বিশ্বমানের আলুর চিপস তৈরি ও বিক্রি করে সাবলম্বী হয়েছেন শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামের প্রায় চারশো পরিবার। শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রাম এভাবেই ধীরে ধীরে আলুর চিপসের গ্রাম নামে খ্যাতি অর্জন করেছে।
আরও পড়ুন: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করতে জয়পুরহাটে বিএনপির গণসংযোগ
মূলত, আলু চাষাবাদে এ জেলা ব্যাপক প্রসৃদ্ধ হওয়ায়, এ গ্রামের মানুষ আলুর মৌসুমকে কাজে লাগিয়ে ফেব্রুয়ারী থেকে মে মাস পর্যন্ত সরাসরি জমি থেকে আলু ক্রয় করে পরিবারের বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ এ চিপস তৈরি করে থাকেন। এটি তাদের সারাবছরের আয়-রোজগারের একমাত্র অবলম্বন। আর এভাবেই আলুর চিপস তৈরি করে এসব পরিবার দারিদ্রতার কষাঘাত থেকে মুক্তি পেয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব চিপস এখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, আক্কেলপুর উপজেলার শ্রীকৃষ্ণপুর সহ পাশ্ববর্তী কেশবপুর, চকরনাথ, ভদ্রকালি ও চুকাইবাড়ী গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে আলু সেদ্ধ করতে দেখা গেছে। প্রথমে তারা ঝিরিঝিরি করে আলু কাটছেন, এরপর তারা কাটা আলুগুলো চুলায় সেদ্ধ করে তুলশীগঙ্গা নদীর পাড়ে রোদে শুকাচ্ছেন।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, তাদের গ্রামে চারশো পরিবারের বসবাস। এরমধ্যে ৮-১০টি পরিবার ছাড়া বাকিরা সবাই আলুর চিপস তৈরি ও বাজারজাত করে থাকেন। মৌসুমী এই ব্যবসার আয় থেকেই তাদের সারাবছর সংসারের যাবতীয় খরচ চলে। ভরা মৌসুমে প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার মণ আলু সেদ্ধ করা হয়। এ ব্যবসায় কম খরচে বেশি পুঁজি হওয়ায় মৌসুমের শুরুতেই গ্রামের অধিকাংশরা আলু কিনে চিপস তৈরি ও সংরক্ষণ করে থাকেন।
এছাড়াও তারা আরোও জানান, আলু কিনতে এনজিওগুলো থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়। সরকার যদি এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে তাহলে আগামীতে চিপস তৈরিতে এ এলাকা সমৃদ্ধি লাভ করবে।
বাবলু মন্ডল নামে এক ব্যবসায়ী জানান, ক্যাডিনাল জাতের আলু চিপস তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাজার থেকে ৩৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০ টাকায় আলু কেনা হয়। সেই আলু প্রক্রিয়াজাত করে রোদে শুকিয়ে চিপস তৈরি করা হয়। পাঁচ মণ আলু থেকে সর্বোচ্চ এক মণ চিপস তৈরি করা যায়। তিনি আরোও জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে আমরা এ ব্যবসা করে আসছি। আমার বাবা মিরাজ মন্ডল প্রথমে এ ব্যবসা চালু করেন। বাবার মৃত্যুর পর আমি হাল ধরেছি। আমাদের দেখে বাকিরা পর্যায়ক্রমে এ ব্যবসায় ঝুকে পড়েছে। এখন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চিপস কিনতে পাইকার’রা গ্রামে আসেন। আবার আমরা নিজেরাও ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চিপস সরবরাহ করে থাকি। এ ব্যবসা করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছি, আগের চেয়ে পরিবারের স্বচ্ছলতাও ফিরে এসেছে।
ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক বলেন, ১৩০ মণ আলু কিনে চিপস তৈরি করেছি। এক মণ আলু থেকে চিপস তৈরি করতে দুই হাজার টাকার মত খরচ হয়। বাজারে পাইকারী বিক্রি হয় ৪-৫ হাজার টাকায়। এ বছর আলুর দাম কম। তবে গতবছর এক মণ চিপস দশ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি।
শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামের নারী উদ্যোক্তা রাবেয়া বেগম বলেন, চিপস ব্যবসায়ীরা আলু কিনতে আমাদের টাকা দেয়। আমরা আলু কিনে এনে ঝিরিঝিরি করে কেটে রোদ দেওয়া শেষ হলে প্যাকেটজাত করে পাইকারদের কাছে সরবরাহ করি। বিনিময়ে তারা আমাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক দেন। এনিয়ে আল্লাহ রহমতে ভাল আছি।
আরও পড়ুন: সাম্প্রদায়িক প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করতে জয়পুরহাটে বিএনপির গণসংযোগ
আক্কেলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরান হোসেন বলেন, শ্রীকৃষ্ণপুর ও তার আশেপাশের গ্রামের কৃষকরা আলু প্রক্রিয়াজাত করে চিপস তৈরি করে একটি চিপস শিল্প গড়ে তুলেছেন। এতে এ অঞ্চল ভবিষ্যতে চিপস তৈরিতে ব্যাপক সম্ভাবনাময় পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলে আমার বিশ্বাস। তাদের এ শিল্প ধরে রাখতে পারলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি প্রান্তিক কৃষকরা আলুর ন্যায্য মূল্য পাবে। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আমরা তাদের পাশে আছি।
এসডি/