২১৪ বছরেও স্কুলে নেই নতুনত্বের ছোঁয়া, ছাদ থেকে খসে পড়ছে কংক্রিট


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:১১ পিএম, ৯ই সেপ্টেম্বর ২০২৫


২১৪ বছরেও স্কুলে নেই নতুনত্বের ছোঁয়া, ছাদ থেকে খসে পড়ছে কংক্রিট
ছবি: প্রতিনিধি

কোমলমতি শিশুদের ক্লাশ চলছে হঠাৎ করে ধসে পড়ল ছাদের কংক্রিট। মুহূর্তেই ছাদের বড় একটা অংশের দুর্বল রডগুলো বেরিয়ে পড়ল। আর ভেঙে পড়া কংক্রিটগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল বেঞ্চের সবখানে।


এ দৃশ্য রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। তবে ভাগ্যক্রমে রক্ষা পেয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে কোমলমতি শিশুদের পাঠদান।

 

নতুন ভবন নির্মাণের ব্যাপারে বছরের পর বছর ধরে আশ্বাস দেয়া হলেও এর কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তবে এ ব্যাপারে আবারও আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। 




মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সরজমিনে দেখা যায়, মেয়ে জারাকে স্কুলের শ্রেণিকক্ষে পৌঁছে দিয়েও বাসায় ফিরে যাওয়ার কথা ভাবতে পারছেন না মা মুক্তা বেগম। টানা তিন চার ঘণ্টা স্কুলে বসে থাকেন তিনি। প্রতিনিয়ত ভয় ও আতংক তাড়া করে তাকে। তাই ছুটির আগ পর্যন্ত স্কুলের জানালার ফাঁক ফোঁকর দিয়ে মেয়ের প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রাখেন।

  

আরেক অভিভাবক বলেন, আমরা ভয়ে থাকি কখন কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায়। ছেলেকে স্কুলে দিয়ে ছুটি হওয়া পর্যন্ত বাইরে দাঁড়িয়ে থাকি। ছেলেকে না নিয়ে বাসায় ফিরতে পারি না।’


উপজেলার মীরগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালটিতে অফিস কক্ষসহ মোট ৬টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে যার মধ্যে ৫টি কক্ষই ঝুকিপূর্ণ। ১৮১১ সালের প্রতিষ্ঠিত ২১৪ বছরের উপজেলার এই পুরাতন স্কুলটিতে নেই কোনো নতুনেত্বের ছোঁয়া। 


আরও পড়ুন: ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ নিয়ে অভিযোগের জবাব দিলেন ভিপি প্রার্থী আবিদু


শিক্ষকরা জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির ২য় শ্রেণির কক্ষে কয়েকদিন আগেও একটি সিলিং ফ্যান খসে পড়ে। তারপরেও ব্যাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও পাঠদান কার্যক্রম চলছে। ভবনটির এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কারণে শিশু সন্তানদের স্কুলে দিয়েও ভয় এবং আতংকে থাকেন তাদের অভিভাবকরা। এতে শিক্ষা কার্যক্রমও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নানা ভোগান্তিতে রয়েছেন শিক্ষক ও কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় শিক্ষা ব্যবস্থার সুস্থ পরিবেশ হারিয়েছে বিদ্যালয়টির। যে কোনো সময় বড় কোন দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা।




বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকা মোছা: পারভিন নাহার বলেন, ‘আমরা সুন্দর পরিবেশে সুন্দর অবকাঠামোর একটি সুন্দর বিদ্যালয় চাই। সরকারের কাছে আমাদের দাবি পুরনো ভবনটি ভেঙে আমাদের বিদ্যালয়টি নতুন ভবনে পরিচালনার ব্যবস্থা করা হোক।


সহকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহের বাকি বলেন, বিদ্যালয়টির কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন। 


এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মীর মামুনুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদন আমরা শিক্ষা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে পাঠয়েছি। আগামী উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা আশা করি আগামি দিনে প্রকল্প এলে বিদ্যালয়টির নতুন ভবনের কাজ শুরু হবে।


বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মী আক্তার বলেন, আমি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলে যে স্কুলগুলো সংস্কারের প্রয়োজন সেগুলোর ব্যবস্থা নেব।


এসএ/