স্বৈরাচারের দোসর ডিপিডিসি’র প্রকৌ. ইমরান এখনো দাপুটে
বশির হোসেন খান
প্রকাশ: ১১:৩১ পূর্বাহ্ন, ১২ই মে ২০২৫

# আদাবর ডিভিশনে বসে ছাত্রলীগের সাদ্দামের নিল-নকশা
# প্রকৌশলী ইমরান অফিসকে মনে করেন নিজের সাম্রাজ্য
# হারাম হয় এমন কোন কাজ হবে না
-আয়তুল্লাহ ইমরান আলী, ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী, আদাবর
# খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবো
- আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রধান প্রকৌশলী, ডিপিডিসি
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেডের আদাবর ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আয়তুল্লাহ ইমরান আলী যেন দুর্নীতির প্রতিযোগীতায় নেমেছেন।
এই সেক্টরের অন্য দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের টেক্কা দিতে প্রতিনিয়ত ফাঁক-ফোকর খুঁজতে থাকেন তিনি। অভিযোগ আছে, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ডিপিডিসিতে তিনি ছিলেন অন্যতম সুবিধাভোগী কর্তকর্মা। আওয়ামী লীগের অনুগত কর্মকর্তা হিসেবে আয়ত্বে থাকা সকল কাজেই দুর্নীতির ছোঁয়া রেখেছেন। কিন্তু দলীয় আশির্বাদে সব সময় থেকেছেন শাস্তির উর্ধ্বে। সূত্র বলছে, ইমরান নিজেকে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশির্বাদপুষ্ট হিসেবে জাহির করে ব্যাপক সুবিধা গ্রহণ করেছেন।
বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সম্পদ গড়ার পাশাপাশি অসাধু উপায়ে কামিয়েছেন কাড়িকাড়ি টাকা। সেই আওয়ামী লীগ পালালেও ভোল পাল্টে এখনো বহাল তবিয়তে প্রকৌশলী ইমরান। ক্ষমতার দাপটে কাউকেই যেন গ্রাহ্য করেন না। টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এই কর্মকর্তা। আওয়ামী লীগের সময়ে দাপটের কারণে তিনি ছিলেন ডিপিডিসির এক আতঙ্কের নাম। আদাবর ডিভিশনের সহকারী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীসহ ৫ কর্মকর্তাকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন ইমরান সিন্ডিকেট। ডিপিডিসি’র কার্যালয়কে মনে করেন নিজের সাম্রাজ্য।
সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ছিলো প্রকৌশলী ইমরান আলীর বন্ধু। সেই সুবাদে ডিপিডিসির আদাবর ডিভিশন ছাত্রলীগের অঘোষিত কার্যালয় হিসাবে ব্যবহার হতো। সেখানে বসে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে হামলার নীল-নকশা করেছেন ছাত্রলীগের সাদ্দাম হোসেন ও প্রকৌশলী ইমরান আলী। সেখানে উপস্থিত থাকতেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও। জুলাই-আগস্ট ছাড়াও বিএনপির বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতেন ওই কার্যালয়ে বসে। দুদকে জমা পড়া একটি লিখিত অভিযোগ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গত ৬ মে দৈনিক জনবাণী পত্রিকায় প্রথম পাতায় ‘বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের মাষ্টার প্রকৌশলী ইমরান’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর প্রতিবেদককে নানাভাবে হয়রানি ও ষড়যন্ত্রে ফেলার চেষ্টায় আছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
অভিযোগ সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ইমরানকে তার পছন্দের জায়গায় পদায়ন করতে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন সুপারিশ করেন। এরপরে ডিপিডিসি’র সাবেক এমডি প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ নোমানকে ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করে মতিঝিল ডিভিশনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী থেকে আদাবরের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পেয়ে যান ইমরান আলী। তার পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতিনিয়ত টাকার নেশায় মগ্ন থাকেন তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আদাবর ডিভিশন সব সময় সড়গম থাকতো। প্রতিদিন আড্ডায় মগ্ন থাকতেন ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী ইমরান। আদাবর থানা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী রোজী জয়িতা, ইমা ও পারভিনসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর অনুমতি ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ পেতো না সাধারণ গ্রাহকরা। ছাত্রজনতা আন্দোলনে ডিপিডিসির আদাবর ডিভিশন অন্ত্রের ভান্ডার হিসেবে ব্যবহার হতো। সেখান বসে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন হামলার নীল নকশা করতেন বলে অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে। এই সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতেন প্রকৌশলী ইমরান।
জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আয়তুল্লাহ ইমরান আলী বৈধভাবে টাকা আয়ের জন্য নানা অজুহাতে প্রতিনিয়ত সাধারণ গ্রাহকদের হয়রানি করছেন। তার অত্যাচারে গ্রাহকরা অতিষ্ঠ। অবৈধভাবে টাকা আয় যেন তার নেশা ও পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব করতে তিনি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমাফিক যা খুশি তাই করছেন। বৈধ পন্থায় কেউ বিদ্যুতের সংযোগ নিতে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দিলেও লোড নাই কিংবা ট্রান্সফর্মার সংস্কার হবে তার আগে সংযোগ দেয়া যাবে না এমন সব কল্পনাপ্রসূত মনগড়া অজুহাত দিয়ে গ্রাহককে হয়রানি করে থাকেন। আবার অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে কিংবা ঘুষ দিলে মুহূর্তেই সংযোগ দেয়া হয়, তাতে যদি প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে ঘাটতিও থাকে। এভাবে ডিপিডিসির আদাবর ডিভিশনে অনিয়ম-দুর্নীতির এক অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছেন প্রকৌশলী আয়তুল্লাহ ইমরান আলী। এরইমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে ডিপিডিসির আদাবর ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আয়তুল্লাহ ইমরান আলী বলেন, তথ্য দিয়েন আমার সম্পর্কে। হারাম হয় এমন কোন কাজ হবে না। বাকিটা আল্লাহ ভাল জানেন।
এ ব্যাপারে ডিপিডিসি’র প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবো।
আরএক্স/