এভিয়েশন খাতের মাফিয়া গ্যালাক্সির ইউসুফ ওয়ালিদ
বশির হোসেন খান
প্রকাশ: ১২:১৪ অপরাহ্ন, ১৪ই মে ২০২৫

# কর ফাঁকির তদন্ত করছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট
* টিকিট কারসাজি করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক
* দেশ-বিদেশে অবৈধ সম্পদের পাহাড়
* ইউসুফ ওয়ালিদ ক্ষমতার উৎস ছিল হাসিনা
# গ্যালাক্সির কর ফাঁকির প্রমাণ মিলেছে
-মো. আব্দুর রকিব, কর কমিশনার
মানবপাচারকারী দলের সদস্য তৌফিক আহমেদের পুত্র আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ বাবার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা গ্যালাক্সির হাল ধরে প্রেসিডেন্ট ও সিইও দায়িত্ব পেয়ে যান। এর পরেই তিনি হাঁটতে থাকেন বাবার দেখানো পথে, শুরু করেন মানবপাচার। অনেকটা শূন্য থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন ওয়ালিদ। আছে বিলাসবহুল গাড়ি ও বাড়ি। দেশে-বিদেশে নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ। আলাদিনের চেরাগ পাওয়া এই ব্যক্তির নাম এভিয়েশন খাতের মাফিয়া আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। আবার মাঝে মধ্যে দেখা যায় দুদকের বারান্দাতেও।
আরও পড়ুন: স্বৈরাচারের দোসর ডিপিডিসি’র প্রকৌ. ইমরান এখনো দাপুটে
অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউসুফ ওয়ালিদ বাবার ব্যবসায় বসেন। ট্রাভেল এজেন্সির আড়ালে শুরু করেন মানবপাচার। তিনি লিবিয়া থেকে নৌ পথে ইতালি মানবপাচারে যুক্ত হন। শুধু মানবচাপার নয় টিকিটের মূল্য কারসাজিতে মাস্টার মাইন্ড হয়ে ্ওঠেন এই ব্যবসায়ী। তার কাছে জিম্মি হয়ে পরে বেশ কয়েকটি এলারলাইন্স কোম্পানি। আর এই কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন প্রবাসী শ্রমিকরা। টিকিট কারসাজিতে লাভের পাল্লা ভারি গ্যালাক্সির। রাতারাতি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যান ইউসুফ ওয়ালিদ।
এভিয়েশন খাতে বেশি প্রভাব বিস্তার করেন গ্যালাক্সি সিন্ডিকেট। সরকারের উচ্চপর্যায়ের কমিটির তদন্তে মিলে এমন চাঞ্চলকর তথ্য। এ ছাড়াও গ্যালাক্সির প্রেসিডেন্ট আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদের সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের কমিটির রিপোর্ট বলছে, গ্যালাক্সির প্রেসিডেন্ট ও সিইও আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ, তার পরিবার এবং তার নেতৃত্বাধীন অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পৃথক তদন্ত শুরু হয়েছে। সূত্রগুলো বলছে মধ্যপ্রাচ্যগামী ফ্লাইটের টিকিট মূল্য প্রায় দেড়গুণ বাড়িয়েছে গ্যালাক্সি সিন্ডিকেট।
গোয়েন্দা বিভাগের তদন্তে টিকিট কারসাজির বিষয়টি ধরা পড়ে। রিপোর্টে আন্তর্জাতিক ১১টি এয়ারলাইন্স, তাদের জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) এবং ৩০টি ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে টিকিট কারসাজি এবং প্রতারণার প্রাথমিক প্রমাণ মিলে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জমা হওয়া সেই রিপোর্টে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রে যাত্রীর নাম ছাড়াই গ্রুপ বুকিংয়ের মাধ্যমে টিকিট বরাদ্দ করে তা মজুত রাখা হতো। পরে সেগুলো হোয়াটসঅ্যাপের মতো অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে বিক্রি করা হতো দ্বিগুণ বা তিনগুণ দামে।
টিকিট কারসাজি: টিকিট কারসাজিতে গ্যালাক্সির সম্পৃক্ততা প্রমাণ মিলেছে গোয়েন্দা তদন্তে। রিপোর্ট বলছে, সৌদিয়া, কাতার এয়ারওয়েজ, সালাম এয়ার, জাজিরা এয়ারওয়েজ, ওমান এয়ার এবং থাই এয়ারওয়েজের মতো বড় এয়ারলাইন্সের জিএসএ হিসেবে কাজ করে গ্যালাক্সি। ওই এয়ারলাইন্সগুলোর জিএসএ হওয়ার সুবাদে সস্তার টিকিট নাম ছাড়া ব্লক করে বেশি দামে বিক্রয় করে শতকোটি টাকা অবৈধ আয় করেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট ও সিইও আহমেদ ইউসূফ ওয়ালিদ।
দেশ-বিদেশে গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়: দেশ-বিদেশে নামে বেনামে অঢেল সম্পদ গড়েছেন ইউসূফ ওয়ালিদ।
গ্যালাক্সি ট্রাভেল ও গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশে মানিলন্ডারিংয়ে জড়িত এবং দুবাই এবং লন্ডনে শতকোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট ও অন্যান্য ব্যবসা করছে। তারা অনেক টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে বলে গোয়েন্দা তদন্তে প্রমাণ মিলেছে। গ্যালাক্সি প্রায় ৮টি এয়ারলাইন্সের জিএসএ নিতে সক্ষম হয় মূলত শেখ হাসিনা সরকারের আশীর্বাদে। ফ্যাসিস্টের দোসর ওয়ালিদ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একাধিক নেতার ছত্রছায়ায় এবং তাদের প্রভাব খাটিয়ে এটা হাসিল করেছেন। সূত্র মতে, ইউসূফ ওয়ালিদের সম্পত্তির তালিকায় রয়েছে দুবাই ও লন্ডনে বাড়ি। এ ছাড়া তিনি শুলশান ও বারিধারা এবং আমেরিকার বাফেলোতে বাড়ি এবং ঢাকা বিমানবন্দরে রয়েছে তার নানা ব্যবসা প্রতিষ্টান। ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় প্লট ও ফ্ল্যাট।
জানা গেছে, ইউসূফ ওয়ালিদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
মিলছে কর ফাকির প্রমাণ: কর ফাঁকির অভিযোগে আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে এনবিআর। এ ব্যাপারে কর কমিশনার মো. আব্দুর রকিব বলেন, গ্যালাক্সির তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তার কর ফাঁকির বিষয়টি প্রমাণ মিলেছে। কর না দিলে মামলা করা লাগতে পারে বলে তিনি নিশ্চিত করেন। তিনি আরো বলেন, কর ফাঁকি দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ খাতে স্বৈরাচারের দোসররা তৎপর
উল্লেখ্য, সরকারি হস্তক্ষেপের আগে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা থেকে জেদ্দা, রিয়াদ, মদিনা ও দাম্মামের মতো শহরগুলোতে টিকিটের দাম ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন বিদেশগামী শ্রমিকরা। সরকারি হস্তক্ষেপের ফলে বর্তমানে ওই রুটগুলোর টিকিটের দাম গড়ে ৪৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে, যা পূর্বের তুলনায় প্রায় ৭৫ শতাংশ কম। এ ব্যাপারে গ্যালাক্সির প্রেসিডেন্ট ও সিইও আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ মুঠো ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। বরং উল্লো নানা লোক দিয়ে হুমকি ধামকি দিয়েছে।
এসডি/