সিরাজগঞ্জে নিজের ঘরকেই যাদুঘর বানিয়েছেন মুনিরুজ্জামান


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:৪৯ অপরাহ্ন, ১৮ই মে ২০২৫


সিরাজগঞ্জে নিজের ঘরকেই যাদুঘর বানিয়েছেন মুনিরুজ্জামান
ছবি: প্রতিনিধি

ছোট্ট তিন কক্ষের ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বাস করেন ব্যবসায়ী মুনিরুজ্জামান আল ফারুক নূরে এলাহী। তার প্রতিটি কক্ষের আলমিরা, সোকেস, আর দেয়ালের তাকে তাকে সাজানো রয়েছে দূর্লভ সব সামগ্রী। সেই বাদশাহী আমল থেকে শুরু করে ব্রিটিশ-পাকিস্তান আমলের প্রাচীণ ও বিলুপ্তপ্রায় বস্তুতে নিজের কক্ষগুলো সাজিয়েছেন তিনি। সংগ্রহশালায় রয়েছে প্রায় ২৫শ সামগ্রী।


আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে যমুনায় হঠাৎ পানি বেড়ে তলিয়ে গেছে চীনা বাদাম


সিরাজগঞ্জ শহরের কলেজ রোড এলাকায় মূদ্রণশিল্প ব্যবসায়ী মুনিরুজ্জামান আল ফারুক নূরে এলাহীর বাড়ির তিনটি কক্ষকেই বানিয়েছেন যাদুঘর। 


সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, সত্তরের দশকের পুরাতন থ্রি-ব্র্যান্ড সচল রেডিও। সুইচ টিপতেই বেজে ওঠে  শিল্পী আব্দুল আলীমের গান। ৫৪ বছর আগে ওই রেডিওতেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান ও সংবাদ শোনা হতো বলে জানান মনিরুজ্জামান। অপর একটি তাকে দেখা যায় নব্বই দশকের জনপ্রিয় ক্যাসেট প্লেয়ার। সেটিও সচল রয়েছে। সোকেচের ওই তাকে তাকে এমন একাধিক বিলুপ্ত প্রায় রেডিও এবং টেপ রেকর্ডার।


সংগ্রহে রয়েছে আশির দশকে বিলুপ্ত হওয়া গ্রামোফোন যাকে বাংলায় কলের গান বলা হয়। সচল এই গ্রামফোনে প্লেটের মতো সিডি ঢুকানো হলেই বেজে ওঠে এন্ডু কিশোর আর রুনা লায়লার সাড়া জাগানো বেদের মেয়ে জোসনা সিনেমার গান। 


এছাড়াও রয়েছে, বাদশাহী আমলের কবিরাজী দাওয়াই রাখা এবং সেবন করার পাত্র, জমিদারী আমলের হুক্কা, কাসা, তামা ও পিতলের তৈরি বিভিন্ন রাজা-বাদশাহদের ব্যবহারী সামগ্রী, কূপি বাতি, অর্ধশত বছরের পুরনো দেওয়াল ঘড়ি, টেলিফোন, বুদ্ধ মূর্তি, গোপাল মূর্তি, স্বাধীনতাত্তোর সাংবাদিকদের ব্যবহৃত ক্যামেরা, ভয়েস রেকর্ডার, টাইপ মেশিন, বিভিন্ন দেশের প্রাচীণ মুদ্রা, বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্ট্রের প্রাচীণ ডাকটিকিট, অসংখ্য পুরাতন চিঠি, ম্যাচ বক্স ইত্যাদি। 


মনিরুজ্জামানের সংগ্রহে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট অর্ধ ইঞ্চি আয়তনের কোরআন শরীফ। সেই সঙ্গে দেড় ইঞ্চি ও সোয়া ইঞ্চি আয়তনের একাধিক কোরআন শরীফও রয়েছে তার সংগ্রহশালায়।


মুনিরুজ্জামান আল ফারুক নূরে এলাহীর বাবা ভাষা সৈনিক আবুল ফাত্তাহ নূরে এলাহী, ফুপু ভাষা সৈনিক মেহের নিগার নূরে এলাহী এবং চাচা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবুল কাশেম নূরে এলাহী। 


১৯৪০ সালে ‘নূরে এলাহী প্রেস’ নামে সিরাজগঞ্জ শহরে প্রথম মুদ্রণশিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন মুনিরুজ্জামানের দাদা আবুল মুনসুর নূরে এলাহী। এটি ছিল উত্তরবঙ্গে প্রথম কোন মুসলমানের মুদ্রণশিল্প প্রতিষ্ঠান। তৃতীয় প্রজন্ম হিসেবে সেই শিল্পকেই ধরে রেখেছেন তিনি। 


নিজের বিভিন্ন সংগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলে মুনিরুজ্জামান আল ফারুক নূরে এলাহী বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে ডাকটিকিট কিনতাম। আমি এ টু জেড সকল দেশের ডাকটিকিট সংগ্রহ করেছি। 


স্কুল লাইফে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ হতো তখন একটা করে প্রজেক্ট আবিস্কার করতাম। প্রতি বছরই ফাস্ট হতাম। সেই সুবাদে সরকারি খরচে বিভিন্ন স্থানে আমাকে ভ্রমণ করানো হতো। যখন আমি যাদুঘরে যাই, তখনই আমার একটা নেশা ধরে যায়। আমি নিজেও তো এমন বস্তু সংগ্রহ করে রাখতে পারি। সেখান থেকেই সংগ্রহের প্রতি আগ্রহ জন্মে। দীর্ঘদিন ধরে আমি এই সংগ্রহ করে আসছি। যখন যেখানে যে জিনিস পাই সেটা সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। এর জন্য আমার উপর অনেক ঝড়ও বয়ে গেছে, অনেকে আবার পাগলও বলে। 


আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জ জিয়া সাংস্কৃতিক পরিষদ আঁকড়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যুবলীগের ৩ কর্মী


তিনি বলেন, ৪৪ বছর ধরে তিনি সংগ্রহ করছেন। বর্তমানে তার সংগ্রহশালায় ২৫শ’র উপরে আইটেম রয়েছে। 

যদি নিজস্ব কোন বাসা করতে পারেন তবে সেখানে একটি গ্যালারি করে সবার জন্য উন্মক্ত করে দেবেন। অথবা যদি সরকার থেকে সহযোগীতা করলে সবার জন্য উন্মক্ত গ্যালারি করে দেওয়ার কথা বলেন তিনি।


এসডি/