ডিপিডিসির পরিচালক শফিকুল চেনেন শুধু টাকা


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, ২০শে মে ২০২৫


ডিপিডিসির পরিচালক শফিকুল চেনেন শুধু টাকা
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

# বাড়ছে দালাল সিন্ডিকেটে

# অতিষ্ঠ দিশেহারা গ্রাহকরা 

# চক্রের টার্গেট ৩৬ ডিভিশন

# গ্রাহকের টাকার হরিলুট 


দালাল চক্রের মাস্টার মাইন্ড মঞ্জুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে গ্রাহকদের জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হরিলুট করছেন ঢাকা পাওয়ার ডিসট্রিবিশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক(অপারেশ) ও রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পিজিসিবি’র সাবেক প্রকল্প পরিচালক কিউ এম শফিকুল ইসলাম।

 

অভিযোগ সূত্র বলছে, বনশ্রী ডিভিশনে মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু ওরফে টাক মঞ্জু নেতৃত্বে পরিচালক অপারেশ শফিকুল ইসলাম, উপসহকারী প্রকৌশলী (গ্রিট সাউথ) সোহেল রানা(১১৩৫৫)সহ বেশ কয়েকজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী, উপ-প্রকৌশলী মিলে গড়ে তুলেছেন মঞ্জু-শফিকুল সিন্ডিকেট। এ ছাড়াও চক্রের সঙ্গে আরো রয়েছেন বনশ্রীর শামিম, ইমন, মুগদার মিলন, সুলতান ডিপিডিসি লাইনম্যান কাইয়ুম, সাতমসজিদের সাইদ, সোহেল,সোহরাব,রজি,শিপন, আদাবরের শিপন, সোহেল, বাবু, আব্দুর রহমান, আলিম, কাদের। এই চক্রের টার্গেট ৩৬টি ডিভিশন। চক্রটি এইচটি সংযোগকে এলটি করে নতুন সংযোগ দেওয়ার চুক্তি করেন গ্রাহকের সঙ্গে। প্রতিটি সংযোগে গ্রাহককে গুনতে হয় লাখ লাখ টাকা। আর এ সব টাকার বড় অংশ যায় নির্বাহী পরিচালক শফিকুলের পকেটে। পরিচালক অধিকাংশ আবেদনে সুপারিশ করেন। যদি লিখিত সুপারিশ না করেন তাহলে নির্বাহী প্রকৌশলীদের মুঠো ফোনে মৌখিক ভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়। যদি কেউ এই সুপারিশ না শুনেন তাহলে নানা ধরনের ঝামেলায় পড়তে হয় নির্বাহী প্রকৌশলীদের।  এ বিষয় দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক ভুক্তভুগি। দুদকের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাঁরা হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। 


অভিযোগ সূত্র বলছে, পরিচালক অপারেশন শফিকুলের ঠিকাদার বেশ কয়েকজন বন্ধু রয়েছে। তারা ডিপিডিসিতে ঠিকাদারী করছেন। তাদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে দফায় দফায় তুলেছেন হাদিয়া। চলমান অনেক প্রকল্প থেকে আত্মসাৎ করেছেন শত শত কোটি টাকা। ঘুষ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও বদলীর সুপারিশসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত এই সিন্ডিকেটের প্রধান ডিপিডিসির পরিচালক শফিকুল। এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ঢাকায় বাড়ি, একাধিক ফ্লাট, ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ টাকা এবং নিজ গ্রামে করেছেন অঢেল সম্পত্তি। বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে দুদকে একাধিক অভিযোগ থাকলেও তিনি তা ম্যানেজ করে ধামাচাপা নিয়ে দেন।


সূত্র বলছে, এই সিন্ডিকেট ডিপিডিসির ৩৬টি ডিভিশনে একটি চক্র গড়ে তুলেছে। নিয়ম ভঙ্গ করে গ্রাহক কে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, মিটার টেম্পারিং ও বাইপাস করে কোন গ্রাহককে চিহ্নিত হলে তাকে জরিমানার আওতায় না আনতে অধিনস্তদেরও মৌখিক নির্দেশনা দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি পশ্চিম রামপুরায় নতুন সংযোগ প্রদানকালে এলটি লাইনে দুর্ঘটনাবশত বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ হারান কামরান হোসেন। এই মৃত্যুর ঘটনায় বিদ্যুৎ বিভাগ ও ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তারা তিন প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করেন। পরিচালক অপারেশ শফিকুলের হস্তক্ষেপে একদিন পরেই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। দায়িত্ব অবহেলায় অভিযুক্ত প্রকৌশলী নাছির পার পেয়ে গেলেন। অপরদিকে কর্মকর্তাদের কোনো অভিযোগ আসলে টাকার বিনিময়ে রফাদফা করেন নির্বাহী পরিচালক শফিকুল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তাঁর এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের দাপটে প্রতিষ্ঠানটিতে গ্রাহক সেবা বিঘ্নত হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সকালে বদলির হুমকি দিয়ে টাকা পেলে সেটা সমাধান করে দেয় এই কর্মকর্তা। 


এ ব্যাপারে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (টেকনিক্যাল) কিউ.এম. শফিকুল ইসলামকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি। উল্টো দালাল চক্রের সদস্যদের দিয়ে হামলা ও মামলার ভয় দেখাচ্ছেন। 


এ ব্যাপারে মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, আপনি পরিচালক শফিক স্যারকে কি বলছেন, আমি নাকি দালাল। কে বলছে আপনাকে, যে বলছে পারলে তার নাম বলেন তাকে এই দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিবো। আমার ক্ষমতা সম্পর্কে আপনি জানেন না।  


এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইকবাল মাহমুদ বলেন, যাদের বিরুদ্ধে প্রমান পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। 


এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতিবাজরা যতই ক্ষমতাধর হউক কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। তাদের আইনের আওয়ায় আনতে হবে। 


আরএক্স/