সাংবাদিককে মামলায় ফাঁসানোা হুমকি
ডিপিডিসি’র শফিকুল যেন ধোয়া তুলশীপাতা
বশির হোসেন খান
প্রকাশ: ১২:৫৬ অপরাহ্ন, ২১শে মে ২০২৫

# সংবাদ প্রকাশ হলে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন তিনি
# নিজেকে নির্দোশ বানাতে প্রকৌশলীদেও নিয়ে বৈঠক
# কর ফাঁকি দিতে এইচটিকে এলটিতে সুপারিশ
দুর্নীতি সংক্রান্ত সত্য তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করায় ব্যাপক চটেছেন ডিপিডিসি’র (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি) নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) শফিকুল ইসলাম। সংবাদ করার কারণে সংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানির হুমকি দিয়েছেন ফ্যাসিবাদের দোসর খ্যাতি পাওয়া ওই কর্মকর্তা।
সংবাদ প্রকাশের পর নিজেকে রক্ষায় গতকাল মঙ্গলবার (২১ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় জরুরি মিটিং ডাকেন তিনি। মিটিংয়ে তিনি হুংকার দিয়ে বলেন, যে বা যারা অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য সংবাদিককে জানাবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেটা কোনো নির্বাহী প্রকৌশলী হলে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না।
এসময় উপস্থিত কয়েকজন নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুলের বক্তব্যের প্রতিবাদ করে ব্যক্তিগত বিষয় মিটিং এ আলোচনা না করার অনুরোধ করেন। পরে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে অফিসিয়াল মিটিং। দুপুর আড়াইটায় পরিচালক শফিকুলের দপ্তরে মিটিংয়ের ডাক দিলেও সেখানে বেশিরভাগ নির্বাহী প্রকৌশরী অংশ নেন না।
গত ১৯ মে দৈনিক জনবাণীর প্রথম পাতায় ”দালালদের সঙ্গে ডিপিডিসির পরিচালক শফিকুলের সখ্যতা” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেন। পরে দালাল মঞ্জুকে দিয়ে জনবাণীর বিশেষ প্রতিনিধি বশির হোসেন খানকে দক্ষিণ বনশ্রীর ১০ তলার সামনে ডেকে নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে প্রকাশিত সংবাদ প্রত্যাহার করতে চাপ প্রয়োগ করেন।
তিনি বলেন, যদি ভবিষ্যতে এমন সংবাদ শফিকুল স্যারের বিরুদ্ধে প্রকাশ করা হয় তাহলে প্রতিবেদককে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেওয়া হবে। অথচ দুর্নীতিবাজ শফিকুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। আর সেই আলোকে তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, স্যার প্রতিনিয়তই মঞ্জুকে দিয়ে বিভিন্ন নতুন সংযোগ আবেদন সুপারিশ করে পাঠান। পরে সেই সংযোগ দেওয়ার জন্য মৌখিকভাবে চাপ প্রয়োগ করেন।
সূত্রে জানা গেছে, বনশ্রী ডিভিশনের গ্রাহক নাজনীন আরা জামানের নতুন সংযোগের আবেদনে ঘুষের বিনিময়ে সুপারিশ করেন। কিন্তু সরকারকে শুভংকরের ফাঁকি দিতে গ্রাহকের এইচটি সংযোগকে এলটি রুপান্তরিত করে সংযোগ দিতে সুপারিশ করেন শফিকুল। তবে, ওই গ্রাহকে কয়েকদিন আগে নিয়ম মেনে এইচটি সংযোগ দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে বনশ্রী ডিভিশন। এতে করে সরকারের রাজস্ব বাড়তো। আর নির্বাহী পরিচালক শফিকুলের সুপারিশে এলটি সংযোগ দিলে সরকার রাজস্ব হারালেও শফিকুলের পকেট ভারী হয়।
ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক শফিকুল গতকাল মঙ্গলবার একটি সাদা কাগজে দৈনিক জনবাণীর অফিসে চিঠি পাঠিয়েছেন। তিনি নিজেকে ধোয়া তুলশী পাতা দাবি করে সংবাদটি মিথ্যা উল্লেখ করে তিনি প্রতিবেদককে মানহানিকর ও কুরুচিপূর্ণ ভাবে আত্মসর্মপন মূলক প্রতিবাদ ছাপতে আদেশ করেছেন। যা সম্পর্ণ রুপে স্বাধীন সংবাদিকতায় হস্তক্ষেপ করার শামিল।
নাম প্রকাশে অচ্ছিুক এক প্রধান প্রকৌশলী বলেন, স্যার নিজেকে নির্দোষ বলে কিভাবে। তাকে টাকা না দিলে তিনি কোনো কাজ করেন না। সব ক্ষেত্রে টাকা দিতে হয় স্যারকে। শফিক স্যার টাকার জন্য পাগল।
এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতিবাজরা ক্ষমতাধর থাকেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে গন আন্দোলন গড়ে তুলুন। না হলে দুর্নীতি থামবে না।
আরএক্স/